পাগলা মসজিদে দানের টাকা ৩ কোটি ছাড়াল!

এবার কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদের দানবাক্সে দানের টাকার অংক আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। এ সংখ্যা ছাড়িয়েছে তিন কোটির অংক। শনিবার (৪ নভেম্বর) পাগলা মসজিদের দানবাক্স থেকে পাওয়া গেছে তিন কোটি ৭ লাখ ১৭ হাজার ৮৮৫ টাকা। শনিবার (৬ নভেম্বর) সকাল থেকে বিকেল নাগাদ ১২ বস্তা টাকা গণনা করে এই হিসাব পাওয়া যায়। এর আগে সর্বশেষ গত ২৯ জুন দানবাক্স থেকে পাওয়া যায় দুই কোটি ৩৩ লাখ ৯৩ হাজার ৭৭০ টাকা। টাকা গণনা কমিটির আহ্বায়ক কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা খানম শনিবার সন্ধ্যায় এ তথ্য নিশ্চিত করেন। এর আগে শনিবার সকাল ৯টার দিকে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা খানম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) গোলাম মোস্তফাসহ ৫ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে পাগলা মসজিদের নিচতলায় বিভিন্ন স্থানে রাখা লোহার তৈরি ৮টি দানসিন্দুক খোলা হয়। বস্তা বস্তা টাকা মসজিদের মেঝেতে ঢেলে চলে গণনা। টাকা গণনার কাজে ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারী, মাদরাসার শিক্ষার্থীসহ দুই শতাধিক মানুষ অংশ নেয়। টাকার স্তূপ থেকে আলাদা করা হচ্ছে বিদেশি মুদ্রাসহ মূল্যবান স্বর্ণালঙ্কার। জানা গেছে, মসজিদের লোহার দানবাক্স খোলা হয় তিন থেকে চার মাস পর পর। তখনই মিলে কাড়ি কাড়ি টাকা, বিদেশি মুদ্রা আর স্বর্ণালঙ্কার। দেশ-বিদেশের অসংখ্য মানুষ এ মসজিদের মানত করতে আসেন। দান করেন নগদ টাকা, স্বর্ণালঙ্কার ছাড়াও, গবাদিপশু, হাঁস-মুরগিসহ বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র। কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদে দান করলে মনের যেকোনো ইচ্ছে পূরণ হয়- এমন বিশ্বাসে দেশ-বিদেশের মানুষ এখানে মানত করতে আসেন। এ মসজিদের দানবাক্সে বিস্ময়করভাবে বাড়ছে দানের পরিমাণ। আটটি লোহার সিন্দুকে নগদ টাকা, স্বর্ণালংকারসহ জমা পড়ে মূল্যবান জিনিসপত্র। প্রতিবার দানের নগদ টাকার পরিমাণই ছাড়িয়ে যায় কোটি টাকা। শনিবার সকালে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে মসজিদের ৮টি দানবাক্স খোলা হয়। ১২টি বস্তায় টাকা ভর্তি করে মসজিদের দ্বিতীয় তলার মেঝেতে ঢেলে শুরু হয় গণনা। মাদরাসার শতাধিক ছাত্র, ৫০ জন কর্মচারী ও রুপালি ব্যাংকের কর্মকর্তারা দিনভর টাকা গণনার কাজে অংশ নেন। বিকেলে পুলিশ প্রহরায় পাঠানো হয় ব্যাংকে। এবার চার মাস ২১ দিন পর দানবাক্স খুলে পাওয়া যায় তিন কোটি ৭ লাখ ১৭ হাজার ৫৮৫ টাকা। শহরের হারুয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর তীরে অবস্থিত আধুনিক স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত মসজিদটি ঐতিহাসিক ও দর্শনীয় স্থাপনা হিসেবে পরিচিত। এর ইমারত আর নির্মাণশৈলী মন কাড়ে যে কারও। দৃষ্টিনন্দন এ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানটি শুধু মুসলমানদের কাছেই নয়, অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের কাছেও পবিত্র স্থান হিসেবে পরিচিত। পাগলা মসজিদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শওকত উদ্দিন ভূঁইয়া জানান, টাকা গণনা কমিটির তত্ত্বাবধানে সকালে সিন্দুক খোলার পর সবার উপস্থিতিতে গণনা করা হয়। নগদ টাকা ছাড়াও বিপুল পরিমাণ বিদেশি মুদ্রা ও স্বর্ণালঙ্কার পাওয়া গেছে। তিনি জানান, নগদ টাকা ছাড়াও প্রতিদিন লোকজন হাঁস-মুরগি, ছাগলসহ অন্যান্য জিনিস দান করে। এগুলো নিলামে বিক্রি করে ব্যাংকে টাকা জমা রাখা হয়। মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম জানান, মসজিদ কমপ্লেক্স ও মাদরাসার খরচ চালানোর পর অতিরিক্ত টাকা ব্যাংকে জমা রাখা হয়। এর আয় থেকে জেলার বিভিন্ন মসজিদ-মাদরাসায় অনুদান দেওয়া ছাড়াও অসুস্থ ব্যক্তিদের চিকিৎসায় আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়। দানের টাকা দিয়ে এখানে একটি আন্তর্জাতিক মানের মসজিদ কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হবে বলে জানান তিনি। পাগলা মসজিদ প্রতিষ্ঠার সঠিক ইতিহাস জানা যায়নি। ৩ একর ৮৮ শতাংশ জমির উপর প্রতিষ্ঠিত মসজিদ ও ইসলামী কমপ্লেক্সটি ১৯৭৯ সালের ১০ মে থেকে পরিচালনা করছে ওয়াকফ প্রশাসন। জনশ্রুতি আছে বীর ঈশা খাঁর আমলে দেওয়ান জিলকদর খান ওরফে জিল কদর পাগলা নামক একজন ব্যক্তি নদীর তীরে বসে নামাজ পড়তেন। পরবর্তীতে স্থানটিতে মসজিদটি নির্মিত হয়। জিল কদর পাগলার নামানুসারে মসজিদটি ‘পাগলা মসজিদ’ হিসেবে পরিচিতি পায়। অপর জনশ্রুতি অনুসারে, তৎকালীন কিশোরগঞ্জের হয়বতনগর জমিদার পরিবারের ‘পাগলা বিবি’র নামানুসারে মসজিদটির নামকরণ করা হয়।

সর্বশেষ সংবাদ