বগুড়া ও জামালপুর যমুনা নদীর উপর সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা

সাজ্জাদ হোসেন পল্লব:বগুড়া এবং জামালপুর জেলার সংযোগ স্থাপনে যমুনা নদীর উপর সেতু তৈরির পরিকল্পনা করছে সরকার। সেতু তৈরির লক্ষ্যে ইতিমধ্যে সারিয়াকান্দির কালিতলা নৌঘাটে ট্রাফিক জরিপ করেছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। সেতুটি তৈরি হলে বগুড়া থেকে ময়মনসিংহ হয়ে ঢাকা পথের দূরত্ব কমবে ৮০ কিলোমিটার। একই সঙ্গে উত্তরের রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১২ জেলার দূরুত্বও কমে যাবে। এতে করে সময় ও আর্থিক খরচ কমে যাবে।জানা গেছে, বগুড়া ও জামালপুর জেলার মধ্যে নিরবচ্ছিন্ন সংযোগ স্থাপনের জন্য ট্রাফিক জরিপ শুরু করে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধি দল। বুধবার সকাল ৬টা থেকে শুরু হয়ে শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত জরিপ করা হয়। রাস্তায় কয়েকটি সিসি ক্যামেরা স্থাপন করে সার্বক্ষণিক রাস্তায় যানবাহনগুলোর চলাচলের ভিডিও রেকর্ড করা হয়। ট্রাফিক জরিপ প্রতিনিধি দলের সদস্যরা যানবাহনগুলো থামিয়ে তাদের নানা বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে দেখা যায়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে তারা কোথা হতে আসছেন, কোথায় যাবেন, যমুনা নদী পার হয়ে কোন কর্মস্থলে যাবেন, নদী পারাপার হতে কত ভাড়া লাগে, কত সময় লাগে, সেতু হলে তিনি কত টাকা টোল দিতে পারবেন প্রভূতি।১৯১২ সালে ব্রিটিশ শাসনামলে জামালপুরের দেওয়াগঞ্জের বাহাদুরাবাদ রেলঘাট চালু হয়। তখন মানুষ নৌকায় করে মালপত্র নিয়ে ট্রেনে যাতায়াত করতো ঢাকায়। পরবর্তী সময়ে ১৯৩৮ সালে তিস্তামুখ থেকে জামালপুরের দেওয়াগঞ্জের বাহাদুরাবাদ রেলঘাট পর্যন্ত নৌপথে ফেরি চলাচল শুরু হয়। সেসময় এই নৌপথে উত্তরাঞ্চলের রংপুর, দিনাজপুর, রাজশাহী ও বগুড়া জেলা থেকে যাত্রী ও মালপত্র নিয়ে বাহাদুরাবাদ স্টেশন থেকে যাত্রীবাহী ট্রেনে ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং বৃহত্তর ময়মনসিংহের জামালপুর, শেরপুর, নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জের সঙ্গে পারাপার হতো। তখন ঘাটে ভিড়তো বড় বড় জাহাজ, লঞ্চ, স্টিমার। এই নৌপথে ছিল মানুষ যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম ফেরির লাইন ছিল ১৩টি। বাহাদুরাবাদ রেল ফেরিঘাট থেকে যাত্রীবাহী ট্রেন ও মালবাহী ওয়াগন চলাচল করত রাজধানী ঢাকাসহ দক্ষিণাঞ্চলে।১৯৮৮ সালে ভয়াবহ বন্যা হয়। বন্যায় যমুনা নদীর গতি পরিবর্তন ঘটে। ফলে নাব্যতা সংকট দেখা দেয়। নাব্যতা সংকটে ফেরি সার্ভিসটি তিস্তামুখ ঘাট থেকে বালাসী ঘাটে স্থানান্তর করা হয়। এরপর যমুনা নদী পারাপারে দুই পারের বাসিন্দারা ইঞ্জিনচালিত নৌকা ব্যবহার করে আসছে দীর্ঘদিন থেকে। বর্তমানে এ পথে নৌকায় প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হাজারো মানুষ যাতায়াত করে। সারিয়াকান্দি হতে জামালপুরের মাদারগঞ্জ নৌঘাটের দূরত্ব মাত্র ১৬ কিলোমিটার। অথচ সড়কপথে মাদারগঞ্জ যেতে হলে সারিয়াকান্দি হতে ২০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে জেলা শহর বগুড়ায় যেতে হবে। এরপর প্রায় ১২০ কিলোমিটার ঘুরে জামালপুরে যেতে হবে। বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার যমুনা নদীর উপর সেতু নির্মিত হলে উত্তরের মানুষের সাথে আবারও বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার যোগাযোগ স্থাপন হবে। পথ কমে যাওয়ার পাশাপাশি নতুন করে প্রসার হবে ব্যবসা বাণিজ্যের।সারিয়াকান্দি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ রেজাউল করিম মন্টু জানান, সারিয়াকান্দি মাদারগঞ্জ নৌ রুটে যমুনা নদীর উপর সেতু নির্মাণ আমাদের দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি। উভয় পাশের ঘাটে প্রায় তিন শতাধিক মোটরসাইকেল আরোহী পরিবহন কাজে নিয়োজিত রয়েছে। সেতুটি নির্মিত হলে কর্মহীন অনেকের কর্মের ব্যবস্থা হবে। কর্মের সন্ধানে এপাড়ের মানুষ খুব সহজে ওপারে যেতে পারবে। আবার ওপারের মানুষ এপারে। প্রসারিত হবে নতুন ব্যবসার।বগুড়ার সারিয়াকান্দি পৌরসভার মেয়র মতিউর রহমান মতি জানান, এই পথে সেতু নির্মিত হলে উত্তরাঞ্চলের মানুষ বৃহত্তর ময়মনসিংহ ছাড়াও রাজধানী ঢাকায় বাসে করে কম সময়ে যাতায়াত করতে পারবেন। পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু সেতুর উপর চাপ কমবে। যাত্রীদের দুর্ভোগ লাঘব হবে।

সর্বশেষ সংবাদ