আজ ১৭ এপ্রিল ঐতিহাসিক মুজিব নগর দিবস

ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ-আজ ১৭ এপ্রিল রবিবার ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস ২০২২। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সুদীর্ঘ ইতিহাসের এক চির ভাস্বর অবিস্মরণীয় দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে কুষ্টিয়া জেলার তদানীন্তন মেহেরপুর মহকুমার বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে স্বাধীন-সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণ করে। এ অনুষ্ঠানে ষোষিত হয় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র। এইদিন থেকে ওই স্থানটি মুজিবনগর নামে পরিচিতি লাভ করে। জাতি আজ যথাযোগ্য মর্যাদায় মুজিবনগর দিবস উদযাপন করবে।আর অস্থায়ী সরকারের সফল নেতৃত্বে ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জনের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর বর্বরোচিত হামলা চালানোর পর একই বছরের ১০ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা ঘোষণা করা হয়। এ দিন ঘোষিত ঘোষণাপত্রে ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণাকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন ও অনুমোদন করা হয়।
ঘোষণাপত্রে সংবিধান প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি ও সৈয়দ নজরুল ইসলামকে প্রজাতন্ত্রের উপ-রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করা হয়। এ ছাড়া তাজউদ্দিন আহমেদ অস্থায়ী সরকারের প্রধানমন্ত্রী, খন্দকার মোশতাক আহমেদ পররাষ্ট্রমন্ত্রী, ক্যাপ্টেন মুহাম্মদ মনসুর আলী অর্থমন্ত্রী এবং এ এইচ এম কামারুজ্জামান স্বরাষ্ট্র, ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রী নিযুক্ত হন। অপরদিকে জেনারেল আতাউল গনি ওসমানী অস্থায়ী সরকারের মুক্তিবাহিনীর প্রধান কমান্ডার এবং মেজর জেনারেল আবদুর রব চিফ অব স্টাফ নিযুক্ত হন।
আজকের বিষয় নিয়ে কলাম লিখেছেন জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা ডা.এম এম মাজেদ তার কলামে লিখেন.. ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর আম্রকাননে বাংলার যে স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়েছিল তার ঠিক ২১৪ বছর পরে, ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল কুষ্টিয়ার মেহেরপুরের মুজিবনগরের আরেক আম্রকাননে বাংলার সেই অস্তমিত স্বাধীনতার সূর্য আবারও উদিত হয়ে বাংলাদেশ নামক ভূখণ্ডটিকে স্বাধীন দেশ হিসেবে বিশ্বের মানচিত্রে জায়গা করে দিলো।
তাই ১৭ এপ্রিলকে ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করা মানে নিজের আত্মপরিচয়কেই ভুলে যাওয়া, নিজের সঙ্গে নিজেরই প্রতারণা করা। দুর্ভাগ্য, এদেশে এখনও অনেকে আছেন যারা মহান ১৭ এপ্রিলের মুজিবনগরের ঘটে যাওয়া ঘটনাকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেন।
তাদের সেটা করার যৌক্তিকতাও আছে কিন্তু। তারা মননে-সৃজনে আর কর্মে সব সময়ই পাকিস্তানি ভাবধারায় বিশ্বাসী। পাকিস্তানের পরাজয়ের মূল ভিত্তি তৈরি হয়েছিল যেই মুজিব নগরের ঘটনার প্রেক্ষিতে, তাকে তো তারা তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করবেনই। বিএনপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলকে আমরা দেখি ২৬ মার্চের মহান স্বাধীনতা দিবস, ১৬ ডিসেম্বরের বিজয় দিবস নামেমাত্র পালন করতে। কিন্তু যেখান থেকে এই দেশ মাতৃকার যাত্রা শুরু সেই বিপ্লবী সরকারের ১৭ এপ্রিলের শপথ গ্রহণ দিবসটি তো তাদের উৎযাপন করতে দেখা যায় না! যেন মুজিবনগর দিবসটি হারিয়ে গেছে তাদের স্মৃতির অন্তরালে! এই নিয়ে যদি তাদের যদি প্রশ্ন করি কী জবাব দেবেন তারা?
১৭ এপ্রিল আমাদের জীবনে আকস্মিকভাবে আসেনি। ‘৪৮, ‘৫২, ‘৫৪, ‘৬২, ‘৬৬, ‘৬৯, ‘৭০, এর পথ বেয়ে আসে ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল। দীর্ঘকাল ব্রিটিশদের কাছে বন্দি থাকার পর বাঙালি ভেবেছিল মুক্তি মিলেছে তাদের। পরাধীনতার গ্লানি আর সইতে হবে না। কিন্তু না, তারা আবারও বন্দি হয়ে পড়ে পাকিস্তানি শাসকদের হাতে। সেই বন্দিত্ব থেকে মুক্তি পেতে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পুরো জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। তার ডাকে সারা দিয়ে জীবনবাজি রেখে মরণপণ লড়াই-সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল গোটা জাতি। দীর্ঘ আন্দোলনের জোয়ারে ধীরে ধীরে বাঙালির হৃদয়ে আঁকা হয়ে যায় একটি লাল-সবুজ পতাকা, একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের ছবি।
৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বাঙালি জাতির মুক্তিরদূত বঙ্গবন্ধু যে ভাষণ দিয়েছিলেন, ওই ভাষণেই ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ কথাটি উচ্চারণের মধ্য দিয়েই একটি স্বাধীন দেশের ঘোষণা করেছিলেন তিনি। এটাকে অনেক দেশবিরোধী চক্র এখন স্বাধীনতার ঘোষণা হিসেবে মানতে নারাজ। খোলা ময়দানে লাখো লাখো জনতার সামনে ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ কথাটি বলার মধ্যে দিয়েই যে আমাদের জাতির পিতা স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন তা একটি শিশুও বুঝতে পারে। কিন্তু যারা পারেনি তারা হয় উন্মাদ, নয় ধূর্ত। স্বাধীনতার ঘোষণা যে বঙ্গবন্ধু আগেই দিয়েছিলেন সেই বিষয়ে আরেকটি ঘটনার কথা বলা যেতে পারে। ইয়াহিয়া খান ১৫ মার্চ ঢাকা এসেছিলেন, তখন বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশ আর পাকিস্তানের অংশ নয়। আর ইয়াহিয়া বিদেশি প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমাদের রাষ্ট্রীয় অতিথি’। তার এই বক্তব্যের মধ্য দিয়েই তিনি বাংলাদেশকে স্বাধীন দেশ হিসেবে পরিচিত করিয়ে দেন। সে যাই হোক, ৭ই মার্চের স্বাধীনতা সংগ্রামের ঘোষণায় পাকিস্তানি শাসকচক্র দিশেহারা হয়ে যায়। প্রতিশোধ স্পৃহা জেগে ওঠে তাদের মাঝে। আর তাই ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদাররা শোষিত ও নির্যাতিত মানুষের স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষাকে রক্তের সমুদ্রে ভাসিয়ে দিতে শুরু করেছিল ভয়ঙ্কর নিষ্ঠুর গণহত্যা। মৃত্যু, ধ্বংস, আগুন আর আর্তনাদে বীভৎস হয়ে ওঠেছিল চারিদিক। বাঙালি জাতিকে এমন পরিস্থিতিতে শত্রুর মোকাবেলা করে বিজয় ছিনিয়ে আনার জন্য বঙ্গবন্ধু ওয়ারলেসের মাধ্যেমে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। এর পরপরই তাকে বন্দি করে পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু দূরদর্শী নেতা ছিলেন। তাই তিনি একদিকে ওয়ারলেসে স্বাধীনতার ঘোষণা রেকর্ড করে রেখেছিলেন, তেমনি একটি সরকার গঠনের পরিকল্পনাও করেছিলেন। তার সেই পরিকল্পনা অনুযায়ীই পরবর্তিতে মুজিবনগর সরকার গঠিত হয়েছিল।
আওয়ামী লীগের অন্যতম নেতা তাজউদ্দিন আহমদ ৩১ মার্চ ব্যারিস্টার আমীর উল ইসলামকে নিয়ে মেহেরপুর সীমান্ত দিয়ে ভারতে যান দেশের মানুষকে আত্মরক্ষা ও পাল্টা আক্রমণে ভারতের সাহায্য লাভের উদ্দেশে। দিল্লিতে গিয়ে তাজউদ্দিন বুঝেছিলেন কেবল আওয়ামী লীগের নেতা হিসেবে দেশের জন্য সহানুভূতি ও সমবেদনা ছাড়া তেমন কিছু তিনি আশা করতে পারেন না। ভারত সরকারের জন্য একটি প্রতিষ্ঠিত সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক করা প্রয়োজনীয় ছিল। তাই তিনি ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশের যে স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয়েছে সেটা যেমন বলেছেন, তেমনি শেখ মুজিব‍ুর রহমানকে প্রেসিডেন্ট ও নিজেকে প্রধানমন্ত্রী রূপে পরিচয় করান। সেটাই ছিল বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের ধারণার সূচনা। কলকাতায় ফিরে এসে তিনি সরকার গঠনের প্রস্তুতি নেন। কিন্তু দলের অভ্যন্তর থেকেই আসতে থাকে নানারকম বাধা। সব বাধা অতিক্রম করেই ১০ এপ্রিল তাজউদ্দিন আহমদ অস্থায়ী সরকার ঘোষণা করেন। সেই ঘোষণায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপ-রাষ্ট্রপতি, তাজউদ্দিন নিজেকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ঘোষণা করেন। এই সরকারের মূল ভিত্তি ছিল ১৯৭০ সালের নির্বাচন। সেই নির্বাচনে বাংলাদেশের জনগণ ১৬৯টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ দলীয় ১৬৭ জন প্রতিনিধি নির্বাচিত করেছিল। কিন্তু ইয়াহিয়া সেই পরাজয় মেনে নেননি। সে যাই হোক, তাজউদ্দিন আহমদ সেই ঘোষণায় বলেছিলেন, “বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার অর্জনের আইনানুগ অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ ঢাকায় যথাযথভাবে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং বাংলাদেশের অখন্ডতা ও মর্যাদা রক্ষার জন্য বাংলাদেশের জনগণের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান। ” ঐ ঘোষণা  আকাশবাণীসহ আরও কয়েকটি প্রচারমাধ্যমে তা প্রচারিত হয়েছিল। বস্তুত, স্বাধীনতা যুদ্ধ পরিচালনা ও পাক হানাদার বাহিনীকে এই প্রিয় দেশ থেকে বিতাড়িত করে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষিত এবংনির্দেশিত পথে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় অর্জনের জন্য এই সরকার গঠন করা হয়েছিল।আর মেহেরপুরের অখ্যাত ভবেরপাড়া গ্রামের বৈদ্যনাথতলায় সাদামাটা পরিবেশে একটি আমবাগানে শপথ নিয়েছিল ঐতিহাসিক মুজিবনগর সরকার। শপথের দিনটি ছিল শনিবার। আমবাগানের চারিদিকে রাইফেল হাতে কড়া প্রহরায় ছিল বীর মুক্তিযোদ্ধারা। সকাল ৯টা থেকেই সেখানে নেতৃবৃন্দ ও আমন্ত্রিত অতিথিদের আগমন শুরু হয়ে গিয়েছিল। দেশি-বিদেশি প্রায় জনাপঞ্চাশেক সাংবাদিক ওই অনুষ্ঠানে এসেছিলেন। আম্রকানন লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। মুক্তিযোদ্ধারা শেষ মুহূর্তে খবর পেয়ে যে যেখানে ছিলেন পঙ্গপালের মতো যেন উড়ে আসতে থাকেন। আনন্দ-আবেগে উদ্বেলিত শত শত কণ্ঠের ‘জয় বাংলা’, ‘জয় বঙ্গবন্ধু’, ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো’, গগন বিদারী স্লোগানে স্লোগানে আম্রকাননের আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত হয়েছিল সেদিন। চৌকি পেতে তৈরি করা হয়েছিল শপথ মঞ্চ। মঞ্চের ওপর সাজানো ছয় খানা চেয়ার। আশেপাশের বাড়ি থেকে চৌকি , চেয়ার ও বাঁশ আনা হয়েছিল সেদিন।   উপরে শামিয়ানাও লাগানো সম্ভব হয়নি। ফলে খোলা আকাশেই মঞ্চ তৈরি করা হয়েছিল।
বেলা এগারটায় শুরু হয়েছিল শপথ অনুষ্ঠান। মঞ্চে উঠে এলেন তাজউদ্দিন আহমদ, তার পেছনে ক্যাপ্টেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম, এম মনসুর আলী, এ এইচ এম কামরুজ্জামান, খন্দকার মোশতাক আহমদ ও জেনারেল এমএজি ওসমানী। তাদের গার্ড অব অনার দিয়েছিলেন তৎকালীন মেহেরপুরের এসডিপিও এসপি মাহবুব উদ্দিন বীরবিক্রম। অনুষ্ঠানের শুরুতেই বাংলাদেশকে ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’ রূপে ঘোষণা করা হয়েছিল। এরপর অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম একে একে প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ এবং স্বরাষ্ট্র, ত্রাণ ও পুর্নবাসন মন্ত্রী এ এইচ এম কামরুজ্জামান, অর্থমন্ত্রী এম মনসুর আলী,পররাষ্ট্রমন্ত্রী খন্দকার মোশতাক আহমদকে পরিচয় করিয়ে দেন। এরপর নতুন রাষ্ট্রের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান হিসেবে কর্নেল এমএজি ওসমানী এবং সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফ পদে কর্নেল আবদুর রবের নাম ঘোষণা করেন। তারপর সেখানে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন অধ্যাপক ইউসুফ আলী। স্বাধীনতার এই ঘোষণাপত্রটিই হলো স্বাধীন বাংলাদেশের প্রধান আইনি দলিল যা আমাদের সংবিধান এবং সরকার গঠনের মূল ভিত্তি । একটি সত্য কথন হলো যে, মুজিবনগর সরকারের মন্ত্রিসভার একজন ছিলেন বির্তকিত। তিনি খন্দকার মোশতাক আহমেদ। জ্যেষ্ঠতার কারণে মুজিবনগর সরকারের প্রধান তারই হওয়া উচিত বলে মনে করতেন তিনি এবং সুযোগ বুঝে  তিনি পাকিস্তান ও সিআইএ’র হয়ে কনফেডারেশন গঠন করতে চেয়েছিলেন। খন্দকার মোশতাক কত বড় মীরজাফর আমরা জাতির জনকের হত্যার মধ্যে দিয়েই তা আরও স্পষ্ট বুঝতে পারি। সেই শপথ অনুষ্ঠানে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী দেশের স্বাধীনতা রক্ষায় সকলকে ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের আহবান জানিয়েছিলেন।
শপথ গ্রহণ শেষে তাজউদ্দীন আহমদ তার বক্তব্যে বলেছিলেন, ‘আমরা যা করছি সবই মুজিবের নির্দেশে। ’ তিনি আরও বলেন, “পাকিস্তান আজ মৃত এবং অসংখ্য আদম সন্তানের লাশের তলায় তার কবর রচিত হয়েছে। সাড়ে সাত কোটি বাঙালি অজেয় মনোবল ও সাহসের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম দিয়েছে এবং প্রতিদিন হাজার হাজার বাঙালি সন্তান রক্ত দিয়ে এ নতুন শিশুরাষ্ট্রকে লালিত-পালিত করছেন। স্বাধীন বাংলাদেশ আজ এক বাস্তব সত্য। ’’ তার বক্তব্য মুক্তিযোদ্ধাদের দেশের তরে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে অনুপ্রাণিত করেছিল। এই শপথ অনুষ্ঠানে নতুন সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী দু’জনই বিশ্ববাসীর কাছে নতুন রাষ্ট্রের কূটনৈতিক স্বীকৃতি দান ও সামরিক সাহায্যের আবেদন জানিয়েছিলেন। এই শপথ অনুষ্ঠানটি বাঙালিদের নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন যুগিয়েছিল। শত্রুর বিরুদ্ধে অস্ত্রহাতে লড়াইয়ে উজ্জীবিত হয়েছিলেন আমাদের বীর সৈনিকরা।
পরিশেষে, দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে আমাদের স্বাধীনতা। তবে বিশ্বের অন্য কোন দেশ এতো কম সময় স্বাধীনতা অর্জন করতে পারে নাই। এর থেকে এই একটি বিষয় সুস্পষ্ট হয়ে যায় যে, সঠিক দিকনির্দেশনা ও পরিকল্পনা প্রনয়ণের মাধ্যমেই এত দ্রুত আমরা স্বাধীনতা লাভ করতে পেরেছি। যার কর্নধার ছিলো মুজিব নগর সরকার এবং শেখ মুজিবুর রহমানের অসামান্য নেতৃত্বের গুনাবলি।

সর্বশেষ সংবাদ