সাইফুর রহমান শামীম,কুড়িগ্রাম-পলিথিনের সঠিক ব্যবহারে এটি পরিবেশের জন্য অভিশাপ না হয়ে আশীর্বাদ হতে পারে, বর্জ্য পলিথিন দিয়ে পেট্রোল ও ডিজেল উৎপাদন করে তাই দেখিয়ে দিলেন ভূরুঙ্গামারীর পারভেজ। পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর উপাদানের অন্যতম একটি পলিথিন। কিন্তু পলিথিন এখন আর ক্ষতিকর বর্জ্য নয় সেটাই প্রমাণ করে দিলেন এই তরুণ মেধাবী পারভেজ। সবাইকে তাক লাগিয়ে দেওয়া এই ঘটনাটি কুড়িগ্রাম জেলার ভূরুঙ্গামারী উপজেলার মইদাম গ্রামের বদিউজ্জামান এর পুত্র মোঃ পারভেজ মোশাররফের। হাতে কলমে উপস্থিত সবাইকে দেখিয়ে দিলেন। পারভেজ মোশাররফ ভুরুঙ্গামারী উপজেলার মইদাম মহাবিদ্যালয়ের এইচ এস সি ১ম বর্ষের ছাত্র। পলিথিন থেকে পেট্রোল ও ডিজেল উৎপাদন করতে প্রযুক্তি হিসেবে তিনি ব্যবহার করেছেন টিনের তৈরি ড্রাম, কয়েকটি বোতল, কাঠ এবং প্লাস্টিকের বয়োম দিয়ে নিজেই তৈরি করা একটি রিফাইনারি মেশিন। এই প্রযুক্তিতে ড্রামের ভেতর পলিথিন রেখে তা আগুনের তাপে গলিয়ে বাষ্পের মাধ্যমে ডিজেল, পেট্রোল ও অকটেন উৎপাদন করছেন তিনি। তার উৎপাদিত পেট্রোল ১০০ টাকা ও ডিজেল বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা লিটার হিসেবে। উৎপাদিত পেট্রোল দিয়ে চলছে মোটর বাইক, ডিজেল দিয়ে চলছে কৃষিতে ব্যবহৃত পাওয়ার টিলার। পারভেজের এই উদ্ভাবনে একদিকে যেমন পলিথিন রিসাইকেল হয়ে সম্পদে পরিণত হচ্ছে, অন্যদিকে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় থাকছে বলে জানান নতুন এই উদ্ভাবক।৷ অপেক্ষাকৃত কম দামে পেট্রোল ও ডিজেল পেয়ে সানন্দে ব্যবহার করছেন এলাকাবাসীও। তিনি এর আগেও এই প্রযুক্তির ব্যবহার করে উৎপাদিত পেট্রোল দিয়ে মোটরবাইক এবং ডিজেল দিয়ে পাওয়ার টিলার চালিয়ে ইতোমধ্যে সফলতা পেয়েছেন । কিন্তু করোনাকালীন সময়ে অর্থনৈতিক সংকট এর কারনে এই কাজ বন্ধ করে দেন। এলাকাবাসী ও বন্ধুদের সহযোগিতায় শুক্রবার (১৯ আগষ্ট) তিনি নতুন করে আবারো চালু করেন তার এই উদ্ভাবনী প্রক্রিয়া। তিনি বলেন, আমার এই উদ্ভাবনী প্রযুক্তির সল্প পরিসরে করতেছি। সরকারি কিংবা কোন প্রতিষ্ঠান এর সহযোগিতা পেলে কম মূল্যে জ্বালানী উৎপাদন ও সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সম্ভব বলে মনে করি। পারভেজ বলেন, এক কেজি পলিথিন থেকে প্রায় ৭৫০ গ্রাম জ্বালানি উৎপাদন হচ্ছে। এর মধ্যে ৩০০ গ্রাম পেট্রোল আর ৪৫০ গ্রাম ডিজেল। এটি অত্যন্ত পরিশোধিত জ্বালানি। সরকার যদি প্রতিটি জেলায় তেল পরিশোধন মেশিন দিয়ে সহায়তা করে তাহলে আমার মত অনেক যুবকই এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্বাবলম্বী হতে পারবে। এদিকে বর্জ্য থেকে জ্বালানী উৎপাদনের খবরে সাড়া ফেলেছে স্থানীয়দের মাঝে। স্থানীয় কৃষক বেলাল হোসেন বলেন, মাঠে সেচের জন্য ডিজেল চালিত পাম্পে নতুন উৎপাদিত ডিজেল ব্যবহার করছি। আমার মতো অনেক কৃষকই এখন এই ডিজেল ব্যবহার করছেন। এটি দামে সাশ্রয়ী ও মানেও ভালো। তাই এলাকার কৃষকের কাছে এই ডিজেলের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আসাদুজ্জামান এ বিষয়ে বলেন, পলিথিনের এ ধরনের পুনর্ব্যবহারই পারে পরিবেশ দূষণ কমিয়ে আনতে। এটি একটি বিস্ময়কর প্রযুক্তি। এ ব্যাপারে সরকারের উচিত তার পাশে দাঁড়ানো। এ প্রযুক্তির সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন ঘটিয়ে খুব সহজেই পলিথিন বর্জ্যের সঠিক ব্যবস্থাপনা এবং তা থেকে তেল উৎপাদনের মাধ্যমে জ্বালানির চাহিদা মেটানো সম্ভব। তরুণ মেধাবী এই উদ্ভাবকের উদ্ভাবন প্রক্রিয়া যদি সরকারি উচ্চ মহলের সহায়তায় বাণিজ্যিকভাবে করা যায় তাহলে জ্বালানি ডিজেল, পেট্রোল প্রভৃতির বর্তমান উচ্চমূল্যের বাজারে তা ব্যাপক সাড়া ফেলবে বলে আশা করেন এলাকার অনেকেই।
কুড়িগ্রামে পলিথিন দিয়ে পেট্রোল ও ডিজেল উৎপাদন করে চমক দেখালেন পারভেজ
5 months ago
28 Views

You may also like
সর্বশেষ সংবাদ
স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে নৌকায় ভোট দিন-শামীমা আকতার জলি
15 hours ago
গাঁজা নিয়ে যাচ্ছিলেন ঢাকায়, গ্রেপ্তার বগুড়ায়
15 hours ago
বগুড়ায় র্যাবের অভিযানে ফেন্সিডিলসহ ২ যুবক গ্রেফতার
15 hours ago