শিক্ষক সোহরাব হোসেনের কবিতার বই ‘আমি কবি নই’

পাভেল মিয়া, সারিয়াকান্দি (বগুড়া) প্রতিনিধিঃ করোনা অনেক কিছুকে থামিয়ে দিলেও থামাতে পারেনি শিক্ষক সোহরাব হোসেনের কলমকে। সম্প্রতি, বেশ কিছু সাহিত্যপ্রেমী মানুষের উপস্থিতিতে এই প্রথম বাংলা সাহিত্যের আঙিনায় সাফল‍্যের সঙ্গে পা রাখলেন বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার ফুলবাড়ি ইউনিয়নের দক্ষিণ ছাগলধরা গ্রামের শিক্ষক ও লেখক সোহরাব হোসেন। তিনি ০১ মার্চ ১৯৮৬ সালে মধ্যবৃত্ত গরীব কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। তাঁর পিতা নূরমোহাম্মদ আকন্দ। মাতা সাহেরা খাতুন, গৃহিণী। দুই ভাইবোনের মধ্যে তিনিই ছোট। ছোটবেলা থেকেই বেড়ে ওঠেন নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যে দিয়ে। প্রাথমিক জীবনে তাঁকে দারুণ অর্থ কষ্টে ভুগতে হয়। তবুও তিনি হাল ছেড়ে দেন নি।
লেখাপড়া গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয় হতে ৫ম শ্রেনি পাশের পর, মথুরা পাড়া বি.কে উচ্চ বিদ্যালয় ৬ষ্ঠ শ্রেনিতে ভর্তি হন এবং বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি পাশ করেন। সারিয়াকান্দি ডিগ্রি কলেজ হতে এইচএসসি পাশের পর, বগুড়া সরকারি আজিজুল হক বিশ্বঃ কলেজ হতে স্নাতক ও মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন।
প্রশিক্ষণঃ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বি.এড, প্রশিক্ষণ, সোনাতলা পিটিআই হতে সি.ইনএড, প্রশিক্ষণ লাভ করেন।
কর্মজীবনঃ ২০১১ সাল রামচন্দ্রপুর স্কুল এ্যান্ড কলেজে খন্ডকালীন ইংরেজির শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তারপর ২০১২ সাল পশ্চিম ছাগলধরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের যোগদান করেন। বর্তমানে তিনি ধনতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত আছেন।
বৈবাহিক অবস্থাঃ তিনি ২০০৭ সালে পাইকপাড়া গ্রামের মরহুম তোফাজ্জল হোসেন মন্ডলের ছোট কন্যা রত্নাপারভীন (বি.এ) এর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তার দুই ছেলে, রাফসান হোসেন ও নাহিয়ান হোসেন। বড় ছেলে সারিয়াকান্দি সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেনি, এবং ছোট ছেলে সারিয়াকান্দি মডেল সঃপ্রাঃবি শিশু শ্রেনিতে অধ্যায়নরত।
লেখালেখিঃ ছাত্র জীবনে দু’চারলাইন লিখতেন তবে চাকুরী জীবনে এসে শিক্ষকতার পাশাপাশি লেখার প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি পায় এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক পেজ ছন্দ কবিতা কাব্য সাহিত্য পরিষদের মাধ্যমে লেখার বহিঃ প্রকাশ ঘটে। এছাড়াও বিভিন্ন সাহিত্য পরিষদে তার লেখা কবিতা ও গল্প প্রকাশিত হয়। অনেকেই অনেকভাবে তার লেখা কবিতা ও গল্প পড়তে বিশেষভাবে প্রসংশা করেন এবং লেখা চালিয়ে যেতে অনুপ্রেরণা সৃষ্টি করেন এমনি ভাবেই লেখকের লেখা বিস্তার লাভ করে। একপর্যায়ে লেখক সোহরাব হোসেনের শ্রদ্ধেয় শিক্ষক প্রফেসর রেজাউল ইসলাম সারিয়াকান্দি ডিগ্রী কলেজ, তার লেখার মান বিশ্লেষণে মাঝে মধ্যেই সুপরামর্শ দিয়ে থাকেন এবং কবিতা গল্পের মানের উন্নতি হচ্ছে মর্মে প্রসংশা করেন। ধীরে ধীরে করোনাকালীন সময়ে লেখকের কবিতা ও গল্পের সংখ্যা দারুণভাবে বৃদ্ধি পায়।
সম্মাননা ও প্রাপ্তিঃ সম্মাননার ক্ষেত্র ছোট হলেও ফেসবুক পেজের বিভিন্ন গ্রুপে লেখা প্রকাশ পায় প্রতিযোগিতার মাধ্যমে তাদের হতে বেশ সম্মাননা সনদ লাভ করেন। তাছাড়াও উপহার হিসেবে অনেকের বই ও ক্রেস্ট ইত্যাদি পেয়ে থাকেন। তার লেখা কবিতা বেশ কয়েককটি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। লেখকের কবিতার সংখ্যা ছোট বড় গদ্য পদ্য শিশুতোষ সহ প্রায় ২২৫ টির মতো, ছোট গল্প ২৭টি। এখনও তার লেখা চলমান।
বইপ্রকাশঃ লেখকের ইচ্ছা ও সবার মতামত সাপেক্ষে বই প্রকাশ করেন। এটা তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ। পরবর্তী কিছু সময়ের মধ্যে তার লেখা ছোট গল্পের বই ও শিশুতোষ দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হবে বলে জানা গেছে। এছাড়াও প্রকৃতির প্রতি তাঁর অগাধ ভালোবাসা থেকে বছর ধরে তার নিজের সামান্য চাকুরির বেতনের টাকার একটি অংশ দিয়ে উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বৃক্ষরোপনের পেছনে ব্যয় করে আসছেন। তার এই বৃক্ষের প্রতি ভালোবাসা এলাকাবাসীর প্রশংসায় ভাসছেন তিনি। ‘আমি কবি নই’ বইটি বাংলা একাডেমির অনুমোদনে ও সবুজস্বর্গ প্রকাশনীর ব্যানারে প্রকাশিত। বইটি বগুড়া শহরের থানার মোড়ে দুটি লাইব্রেরিতে পাওয়া যাচ্ছে কাজল ব্রার্দাস ও মুসলিম বুক ডিপো। এছাড়াও সারিয়াকান্দি সরকার লাইব্রেরীতেও বিক্রয় করা হচ্ছে। লেখক সবার প্রতি একটি বই কেনার আহবান করেন।

সর্বশেষ সংবাদ