বান্দরবন জেলার দর্শনীয় স্থান গুলি, কোথায় থাকবেন

মোঃ হায়দার আলীঃ ভ্রমন সাবার কাছে  প্রিয়, প্রাকৃতিক পাহাড় থাকলে তো কথা নেই। সবাই সে দিকে ঝুঁকে পড়েন। বান্দরবন বাংলাদেশের নৈসর্গিক সৌন্দর্য্যের লীলা ভূমি। এর অপার সৌন্দয্যে মুগ্ধ হয় না এমন মানুষ খুব কমই আছে। বান্দরবান জেলার দর্শনীয় স্থান গুলোর মধ্যে বাকলাই ঝরণা, বগা লেক, বুদ্ধ ধাতু জাদি, চিম্বুক পাহাড় রেঞ্জ, চিনরি ঝিরি ঝরণা, ফাইপি ঝর্ণা, জাদিপাই ঝর্ণা, কেওকারাডং, মেঘলা পর্যটন কমপেস্নক্স, মিরিংজা পর্যটন, নাফাখুম, রেমাক্রি, নীলাচল, নীলগিরি, থানচি, পতংঝিরি ঝরণা, প্রান্তিক লেক, রাজবিহার, উজানিপারা বিহার, রিজুক ঝরণা, সাংগু নদী, শৈল প্রপাত, তাজিডং, উপবন পর্যটন বান্দরবান জেলার তথা সমগ্র বাংলাদেশের পর্যটন স্থান গুলোর মধ্যে জনপ্রিয়

বান্দরবানের কোথায় কী দেখবেন

চোখজুড়ানো প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর রোমাঞ্চকর অনেক জায়গার কারণে বান্দরবান বাংলাদেশের পর্যটন মানচিত্রে উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশের তিনটি উচ্চতম স্থান বান্দরবানে অবস্থিত। সেগুলো হচ্ছে- তাজিনডং (বিজয়), মৌদক মৌল (সাকা হাফং) ও কেওক্রাডং।

এই তিন পর্বতশৃঙ্গ জয় করার জন্য যে কেউ খুশিমনে জঙ্গল ও পাহাড়ি নদী বেয়ে উঠতে পারে। একবার পর্বতারোহণ শুরু করলে আকর্ষণীয় ঝরনার দেখাও মিলবে। আদিবাসীদের কাছ থেকে পাওয়া ব্যতিক্রমী উপহার, খাদ্যসামগ্রী, হস্তশিল্প প্রভৃতি মনকে প্রফুল্ল করবে। এসবের মধ্যদিয়ে আদিবাসী সংস্কৃতির সান্নিধ্যও পাবেন।

শৈল প্রপাত: শৈল প্রপাত মিলনছড়ি এলাকায় অবস্থিত এবং বান্দরবান থেকে থানচিগামী সড়কের চার কিলোমিটারের মধ্যেই। বান্দরবানের উল্লেখযোগ্য জলপ্রপাতের মধ্যে এটি একটি। বর্ষাকালে এখনকার পানির প্রবাহ খুব বেশি থাকে। এখানে ভ্রমণকালে ছোট ছোট বাজারগুলোতে আদিবাসীদের তৈরি হস্তশিল্প, তাঁতের দ্রব্যাদি ও খাদ্যসামগ্রীর সংস্পর্শও পাবেন। বান্দরবান জেলা শহর থেকে পাহাড়ি জিপ রিজার্ভ করে থানচি উপজেলার শৈল প্রপাতে যেতে পারেন।

নাফাখুম: বাংলদেশের সবচেয়ে আকর্ষণীয় জলপ্রপাতগুলোর মধ্যে নাফাখুম অন্যতম। থানচি উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা রেমাক্রিতে পাহাড় ও বনের মধ্যদিয়ে প্রবাহিত খরস্রোতা সাঙ্গু নদীতে অবস্থান নাফাখুমের। নাফাখুম আবার রেমাক্রি জলপ্রপাত নামেও পরিচিত। একবার এখানে গেলে বারবার যেতে মন চাইবে। এখানে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় বাহনও বান্দরবান জেলা শহরেই পাওয়া যাবে।

জাদিপাই জলপ্রপাত: বাংলাদেশের প্রশস্ততম জলপ্রপাতগুলোর একটি হলো জাদিপাই। এটি রুমা উপজেলায় অবস্থিত। কেওক্রাডং চূড়া থেকে হেঁটে জাদিপাই জলপ্রপাতে পৌঁছতে হলে ঘণ্টাখানেকের পথ অতিক্রম করতে হবে।

বগা লেক: বগা লেক বাংলাদেশের সবচেয়ে আকর্ষণীয় প্রাকৃতিক হ্রদ। রুমা উপজেলা সদর থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে বগা লেকের অবস্থান। প্রায় ১৫ একর জায়গাজুড়ে বিস্তৃত এই লেক। লেকের স্বচ্ছ নীল পানি আপনার নজর কাড়বেই। প্রতিবছর বিপুলসংখ্যক পর্যটক লেকটি ঘুরে দেখেন বিশেষ করে শীতকালে। লেকটির আশেপাশে বেশকিছু আদিবাসী সম্প্রদায়ের বসতি রয়েছে। বর্ষাকালে লেকটির চারপাশে ঘুরে বেড়ানো একটু কঠিন। তবে লেকটিতে পর্যটকদের জন্য অবসর বিনোদনের কোনো কমতি নেই। লেকের আশপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা সব শিলাখণ্ড দেখে নিশ্চিতভাবেই চমকে উঠবেন। চাইলে লেকের আশপাশে ক্যাম্পফায়ার করতে পারেন।

বুদ্ধ ধাতু জাতি মন্দির: বুদ্ধ ধাতু জাতি মন্দিরের আরেক নাম বান্দরবান স্বর্ণমন্দির। বান্দরবান থেকে দশ কিলোমিটার এবং বালাঘাটা থেকে চার কিলোমিটার দূরে পালপাড়ায় এ মন্দির অবস্থিত। এখানে রয়েছে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বুদ্ধ মূর্তি। মাটি থেকে ২০০ ফুট উঁচু এই মন্দিরের নির্মাণ কাজ ১৯৯৫ সালে শুরু হয়ে ২০০০ সালে শেষ হয়। শুধু বৌদ্ধ তীর্থযাত্রীই নয়, দেশ-বিদেশের যেকোনো পর্যটকের জন্যই এটি এক আকর্ষণীয় স্থান।

পাহাড় চূড়ায় মন্দিরের পাশেই রয়েছে একটি ছোট পুকুর যা ‘দেবতাদের পুকুর’ নামে পরিচিত। এই জায়গা থেকে বালাঘাটা এবং এর চারপাশের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। প্রতি বছরই এখানে বিভিন্ন ধরনের মেলার আয়োজন করা হয়। মন্দিরটি বিকেল ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকে। প্রবেশ মূল্য ১০ টাকা। হাফপ্যান্ট পরে কিংবা জুতা পায়ে দিয়ে এখানে যাওয়া নিষেধ। বান্দরবান শহর থেকে রিকশা কিংবা অটোরিকশায় চড়ে বুদ্ধ ধারে যাওয়া যায়।

সিপ্পি আরসুয়াং (Sippi Arsuang) পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবান জেলার পূর্বপ্রান্তে ভারতীয় সীমান্ত ঘেঁষে মোটামুটি দুর্গম অঞ্চলে রোয়াংছড়িতে অবস্থিত। এটি বাংলাদেশের ১০ম সর্বোচ্চ চূড়া। যার উচ্চতা ২৯৩৯ ফুট।

বিভিন্ন আদিবাসীর ভাষায় এর নাম ভিন্ন ভিন্ন। বম জাতি বলে সিপ্পি, তঞ্চঙ্গারা বলে রামেতং, মার্মারা বলে রামাতং, পাংখোয়ারা বলে আরসুয়াং- যার অর্থ মোরগের ঝুঁটি। এ ছাড়া রামজুমসহ অনেক নামে ডাকে।

সিপ্পি পাড়া থেকে যে তিনটি চূড়া দেখা যায় তার দক্ষিণের চূড়াটি (বাম পাশের) সিপ্পি। মাঝেরটি আরসুয়াং। ডানেরটির নাম নেই। কেউ কেউ আবার দক্ষিণের টিকে সিপ্পি আরসুয়াংও বলে। তবে যত নামই থাকুক আমাদের কাছে এই পাহাড় পরিচিত সিপ্পি আরসুয়াং নামেই।

সিপ্পি যেতে আসতে সব মিলিয়ে আট ঘণ্টা লাগে। এখানে নাকি আগে ব্রিটিশদের একটা ক্যাম্প ছিল। রনিনপাড়ার আগমুহূর্তে একটা খাড়া পাহাড় বেয়ে নামতে হয়, ওটা থেকে সিপ্পি দেখা যায়। সিপ্পির চূড়া থেকে আশপাশের বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত পাহাড়রাজির সৌন্দর্য মন ভরে দেখা যায়।

সিপ্পি আরসুয়াং যাওয়ার রুট প্লান

যেহেতু শুধু পাহাড় সামিটই মূল লক্ষ্য তাই বর্ষায় না যাওয়াই ভাল। নভেম্বর থেকে মার্চ এর মধ্যে যাওয়া ভাল। এই পাহাড়ে যাওয়ার তিনটি রাস্তা আছে। যে কোনোটি দিয়ে গিয়ে অন্যটি দিয়ে ফেরা যাবে।

বান্দরবান – রোয়াংছড়ি- পাইক্ষ্যাং পাড়া – রনিন পাড়া – সিপ্পি ।

বেশীর ভাগই এই পথে যায়। এই পথটি পরিচিত ও একটু সহজ। বান্দরবান থেকে প্রথমে রোয়াংছড়ি যেতে হবে। রোয়াংছড়ি থেকে পাইক্ষ্যাং পাড়া যেতে হবে সময় লাগবে ৩ ঘন্টার মত। পাইক্ষ্যাং পাড়া থেকে রনিন পাড়া ২.৪০ ঘন্টার মত লাগবে। রনিনপাড়া থেকে সিপ্পি চুড়ায় যেতে ৪ ঘন্টার মত লাগবে।
কোথায় থাকবেনঃ

বান্দরবান শহরে থাকার অনেক আবাসিক হোটেল আছে। রোয়াংছড়িতে দুইটি আবাসিক হোটেল আছে। রুমা বাজারে কয়েকটি আবাসিক হোটেল আছে। পাহাড়ের ভিতরে আদিবাসীদের ঘরে থাকতে পারবেন।

কোথায় খাবেনঃ

বান্দরবান শহরে,রোয়াংছড়ি ও রুমা বাজারে খাবার হোটেল আছে । পাহাড়ে আদিবাসীদের ঘরে নিজেদের রান্না করে খেতে হবে । যাবার সময় তেল মসলা আলু পিঁয়াজ নিয়ে যেতে হবে।

সর্বশেষ সংবাদ