বগুড়ায় জাতীয় আদিবাসী পরিষদের মিছিল ও সমাবেশ

আদিবাসীদের মর্যাদা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করন; আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও ভূমির অধিকার প্রতিষ্ঠা; সমতলের আদিবাসীদের জন্য ভূমি কমিশন গঠন; আদিবাসীদের শিক্ষা ও সংস্কৃতি রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন এবং সারাদেশে হামলা,
নির্যাতন ও আদিবাসীদের ভূমি জবর-দখলের প্রতিবাদে অদ্যই জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, বগুড়া জেলা শাখার উদ্যোগে বগুড়ার সাতমাথায় বেলা ১২.৩০ টায় মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বিক্ষোভ মিছিল শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিন শেষে সাতমাথা মুজিব মঞ্চের সামনে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জাতীয় আদিবাসী পরিষদ-কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি জননেতা রবীন্দ্রনাথ সরেন, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী সাধারন সম্পাদক কমরেড রাজেকুজ্জামান রতন, বগুড়া জেলা শাখার আহবায়ক অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম পল্টু, নওগাঁ জেলা শাখার আহবায়ক জয়নাল আবেদীন মুকুল, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ-কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারন সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) গণেশ মার্ডী, সাংগঠনিক সম্পাদক ও রাজশাহী জেলা শাখার সভাপতি বিমল চন্দ্র রাজোয়ার, রাজশাহী
বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নরেন চন্দ্র পাহান, দপ্তর সম্পাদক ও মুখপাত্র সূভাষ চন্দ্র
হেমব্রম, কেন্দ্রীয় সদস্য রাজকুমার শাও, রাজশাহীর মানবাধিকার কর্মী আফজাল হোসেন,
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ-বগুড়া জেলা শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসিদ
নিগার খন্দকার ক্বেকা, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন-নাটোর জেলার প্যানেল আইনজীবী
অ্যাডভোকেট বাকী বিল্লাহ রশীদি।
জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, বগুড়া জেলা শাখার সভাপতি সন্তোষ সিং এর সভাপতিত্বে ও সহ
সাধারণ সম্পাদক শিপন রবিদাস প্রাণকৃষ্ণের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জাতীয়
আদিবাসী পরিষদের রাজশাহী মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক আন্দ্রিয়াস বিশ্বাস,
গাইবান্ধা জেলা শাখার সভাপতি ডা. ফিলিমন বাসকে, নাটোর জেলা শাখার সভাপতি প্রদীপ
লাকড়া, সহ সভাপতি রঘুনাথ এক্কা, সাংগঠনিক সম্পাদক যাদু কুমার দাস, নওগাঁ জেলা
শাখার সদস্য সচিব মার্টিন মুর্মু, বগুড়া জেলা শাখার সাধারন সম্পাদক স্বপন কর্নিদাস,
দপ্তর সম্পাদক সুজন রাজভর প্রমুখ।
সমাবেশে রবীন্দ্রনাথ সরেন বলেন, “রাষ্ট্রের কাছে আমাদের কি চাওয়া-পাওয়া মুক্তিযুদ্ধের সময়
বাঙ্গালী-আদিবাসী ভেদাভেদ ছিল না। কাঁধে-কাঁধ মিলিয়ে আমরা যুদ্ধ করেছি, রক্ত দিয়েছি।
অথচ আজ আদিবাসীদের উপর হামলা করে, জমি দখল করে, ধর্ষণ করে। আজকে ৯২% আদিবাসীর
দখলে কোন জমি নাই। আজ শেরপুরে হামলা করেছে, তেল মলিশ করার জন্য-মলম লাগানোর জন্য
সম্প্রীতি মিটিং ডাকে। তারা কথা দিয়ে কথা রাখে না। কর্মকর্তারা কি প্রতিশ্রুতি
রক্ষা করবে,? সরকারই তো রক্ষা করে না। ২০০৮ সালে নির্বাচনী ইসতেহার দিয়েছিল, ২০১৪
সালে দিয়েছিল, ২০১৮ তে দিয়েছিল। অন্য দিকে আদিবাসীদের নিঃস্ব করেছে। দালালদের বিষয়ে
সাবধান থাকবেন। আজকের পর যাতে শেরপুরের ৫ টি আদিবাসী পল্লীতে আর কোন হামলা না
হয়। যাতে ফাঁকা মাঠে গোল দিতে না পারে, আমাদের যাতে ব্যবহার করতে না পারে, সে দিকে
সর্তক থাকতে হবে। আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে, লড়াই জারী রাখতে হবে।”
কমরেড রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, “মুক্তিযুদ্ধে রক্তের রং লাল ছিল, লাল রক্তে সিক্ত হয়েছিল সবুজ
প্রকৃতি এই নিয়ে আমরা পেয়েছিলাম লাল সবুজ পতাকা। আর আজ সেখানে
আদিবাসীদের পৃথক করা হয় কেমনে? রক্তকে পৃথক করা যায় না, কিন্তু মানুষ হিসাবে অধিকার
পেতে গেলে পৃথক করে কেমনে? বাংলা ভাষাকে সমৃদ্ধ করেছে আদিবাসী ভাষা। আমাদের
সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করেছে আদিবাসী সংস্কৃতি। আর আজ আদিবাসীদের সেই
মর্যাদা দেওয়া হয় না, কৃতজ্ঞতা স্বীকার করা হয় না। মানুষ হিসাবে তাদের সকল মর্যাদা
নিশ্চিত করতে হবে। ভাতের অধিকার, ভূমির অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। পৃথক ভূমি কমিশন
নিশ্চিত করতে হবে। অধিকার আদায়ে লড়াইয়ের বিকল্প নাই। লড়াইকে বেগবান করতে হবে, বাসদ
সেই লড়াইয়ে সাথে থাকবে।”

সমাবেশে অন্যন্য নেতৃবৃন্দ বলেন, “আদিবাসীদের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী বলে পৃথক করার
সুযোগ নাই। আদিবাসীরা এই ভূ-খন্ডে বন-জঙ্গল পরিস্কার করে আবাস ভূমি সৃষ্টি করেছে,
আবাদি জমি তৈরি করেছে। আর আজ আমাদের সেই জমি থেকে বিতারিত করা হচ্ছে।”
নেতৃবৃন্দ সমবেশ থেকে সারা দেশের হামলা-মামলার প্রতিবাদ জানান, বিচার দাবি করেন।
নাগরিক হিসাবে সকল অধিকার নিশ্চিত করার দাবি জানান। আদিবাসী হিসাবে
সংবিধানিক স্বীকৃতি ও ভূমির অধিকার এবং আদিবাসীদের ভাষা-শিক্ষা ও সংস্কৃতি রক্ষায়
কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি জোর দাবী জানান।

সর্বশেষ সংবাদ