শুভসংঘ স্কুলের উদ্বোধন করলেন কথা সাহিত্যিক ও কালের কণ্ঠের প্রধান সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন

এস আই সুমন,স্টাফ রিপোর্টার,বগুড়াঃ বগুড়ার নিভৃত পল্লী হাপুনিয়া গ্রামে দীর্ঘ ২৬ বছর ধরে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে যাচ্ছেন সহায়-সম্বলহীন এক নারী। রত্না দেবনাথ নামের এই নারী নিজ উদ্যোগে ওই অঞ্চলের শিশুদের অক্ষরজ্ঞান দানের পাশাপাশি শিশুদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির ব্যবস্থা করেন। এরপর আবার নতুন শিক্ষার্থী যোগার করে তাদের পাঠদানের উদ্যোগ নেন। নিজের আপনজন বলতে কেউ না থাকায় ওই এলাকার শিশুদেরই আপন করে নেন তিনি। এক সময় তার এই পাঠদান কার্যক্রমে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান (এনজিও) সহযোগিতা করলেও ২০১৯ সালে সেই সহযোগিতাও বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু বন্ধ হয়নি রত্না দেবনাথের পাঠদান কার্যক্রম। এনিয়ে বিগত ২০২২ সালের ২০ আগষ্ট কালের কণ্ঠের শেষ পাতায় ‘রত্নার পাঠে আলোর পথে শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। নিজের স্বামী-সন্তান এমনকি কোন সম্পদ না থাকার পরও শিশুদের শিক্ষার জন্য এমন নিবেদিত নারীর সংগ্রামের বিষয়টি কালের কণ্ঠ শুভসংঘের নজরে আসে। সেসময়ই রত্না দেবনাথের ওই পাঠশালার দায়িত্ব নেওয়ার উদ্যোগ নেয় শুভসংঘ। বগুড়া শুভসংঘের সদস্যরা একাধিকবার রত্না দেবনাথের পাঠশালা পরিদর্শন করেন। ইতোমধ্যে কালের কণ্ঠের ১৩তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে শিক্ষাক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য বগুড়া অফিসের পক্ষ থেকে রত্না দেবনাথকে সম্মাননা প্রদান করা হয়। ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত বগুড়ার জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম রত্না দেবনাথের সংগ্রামী জীবনীর কথা জেনে তার জন্য বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়ার ঘোষণা করেন । এজন্য প্রয়োজন পড়ে একখণ্ড জমির। শুভসংঘ তার ব্যবস্থা করবে বলে ওই অনুষ্ঠানে জানানো হয়। কালের কণ্ঠ শুভসংঘ কেন্দ্রীয় পর্ষদ বিষয়টি নিয়ে আলোচনার পর রত্না দেবনাথের বাড়ি নির্মাণের পাশাপাশি সেখানেই একটি স্কুল পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়। শুভসংঘ স্কুল নামে পরিচিত সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই পাঠদান করবেন রত্না দেবনাথ। সেই কাঙ্ক্ষিত শুভসংঘ স্কুলেরই উদ্বোধন করা হলো বুধবার। বরেণ্য কথাসাহিত্যিক ও কালের কণ্ঠের প্রধান সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন বুধবার সকালে সেই স্কুলের শুভ উদ্বোধন করেন। এসময় কালের কণ্ঠের প্রধান সম্পাদক বলেন- শুভসংঘ হচ্ছে কালের কণ্ঠের একটি সংগঠন। এর পৃষ্টপোষকতা করেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহম্মেদ আকবর সোবহান। তাঁর পৃষ্টপোষকতায় বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এমন একটি করে স্কুল করার পরিকল্পনা নিয়েছি। এছাড়া প্রতিটি জেলায় একটি করে পাঠাগার করা হবে। আমরা শিশুদের হাতে বই তুলে দিতে চাই এবং শিশুদের শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে চাই। যে এলাকার শিশুরা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত, যারা স্কুলে যেতে পারছে না সেরকম জায়গায় শিশুদের একত্রিত করে আমরা স্কুল করতে চাই। ইতিমধ্যেই ৫টি স্কুল করা হয়েছে। তার মধ্যে এই স্কুলটিই প্রথম আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হলো। এখানে আমরা এই শিশুদের স্কুল ড্রেস, ব্যাগ, বই সবগুলো দিবো। শিক্ষকের বেতনসহ স্কুলের যা যা খরচ সবই বহন করা হবে। এখানেই শুধু তাদের পড়ানো নয়, বরং যখন তারা হাই স্কুলে যাবে তখন তাদের মাসিক বৃত্তি দেওয়া হবে। এরপর যতোদূর সে পড়তে চায় ততোদূর বৃত্তি দেওয়া হবে। যেন অভাবে পড়ে কোন শিশু শিক্ষা থেকে বঞ্চিত না হয় সেই কারণে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আমার মাধ্যমে তা কার্যকর করছেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শুভসংঘের পরিচালক জাকারিয়া জামান, এরুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান, ইউপি সদস্য সেকেন্দার আলী, নিশিন্দারা ফকির উদ্দিন স্কুল অ্যাণ্ড কলেজের প্রভাষক জাকারিয়া পরেভেজ, শিকারপুর-কৃষ্ণপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আশরাফুল ইসলাম পিন্টু, শিকারপুর সরকারি বালিকা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জোবাইদা খাতুন, সমকালের উত্তরাঞ্চল প্রতিনিধি লিমন বাসার, কালের কণ্ঠের বগুড়া প্রতিনিধি জে এম রউফ, বাংলাদেশ প্রতিদিনের সিনিয়র রিপোর্টার আব্দুর রহমান টুলু, নিউজ২৪ এর বগুড়া প্রতিনিধি আব্দুস সালাম বাবু, বাংলানিউজ ২৪ ডট কমের বগুড়া প্রতিনিধি কাওছার উল্লাহ আরিফ, বগুড়া শুভসংঘের সাধারণ সম্পাদক শিশির মোস্তাফিজ, ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের বগুড়া প্রেস ইনচার্জ কারিম উল্লাহ,মহাস্থান প্রেসক্লাবের সাধারন সম্পাদক এস আই সুমন,প্রচার সম্পাদক আব্দুল বারী প্রমুখ। এরুলিয়া ইউনিয়নের হাপুনিয়া গ্রামে শুভসংঘ স্কুলের উদ্বোধনের পর কালের কণ্ঠের প্রধান সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন এই স্কুলের জন্য নির্ধারিত জায়গা পরিদর্শন করেন। ওই জায়গার পাশে থাকা একখন্ড সরকারি জায়গাও শুভসংঘ স্কুল ব্যবহার করবে বলে ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সেই জায়গাটি হস্তান্তর করা হবে বলে বগুড়ার জেলা মো. সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন।

সর্বশেষ সংবাদ