ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর পরীক্ষা বাতিলে অভিভাবকদের উদ্বেগ

মোঃ হায়দার আলী রাজশাহী  থেকে।।  নতুন শিক্ষাক্রম না মেনে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নে মডেল টেস্ট বা পরীক্ষা নিলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তর।
গত সোমবার মাউশি থেকে দেওয়া এক আদেশে এ কথা বলা হয়। কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মডেল টেস্ট বা পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়ায় মাঠ পর্যায়ে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের কঠোর বার্তা দিতে এ আদেশ জারি করে মাউশি।
আদেশে আরও বলা হয়, শিক্ষার্থীদের শিখন-শেখানো ও মূল্যায়ন কার্যক্রম জাতীয় শিক্ষাক্রম এবং পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) প্রণীত শিক্ষক সহায়িকা ও শিক্ষাক্রমের নির্দেশনা অনুসারে করতে হবে। ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন বিষয়ে এনসিটিবি থেকে যে গাইডলাইন পাওয়া যাবে, তা পরে জানিয়ে দেওয়া হবে।
নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে শিক্ষক, প্রতিষ্ঠান প্রধান, উপজেলা বা থানা একাডেমিক সুপারভাইজার, উপজেলা বা থানা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, আঞ্চলিক উপপরিচালক এবং আঞ্চলিক পরিচালকদের নিয়মিত পরিবীক্ষণ জোরদার করতে বলা হয়েছে ওই আদেশে।
এ বছর ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে পাঠদান চলছে নতুন প্রণীত শিক্ষাক্রম অনুযায়ী পরীক্ষানির্ভরতা কমিয়ে শ্রেণিভিত্তিক মূল্যায়নের ওপর জোর দিতে এটি চালু করা হয়েছে।
পরীক্ষা বাতিলের এমন নির্দেশনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অভিভাবক। তারা বলছেন, শিক্ষার্থীরা এমনিতেই পড়ার টেবিলে বসে না। এখন যদি পরীক্ষাও বাতিল করা হয় তা হলে তো আমাদের সন্তানদের পড়ালেখাতেই আর ফেরানো যাবে না।
অন্য দিকে শিক্ষাবিদরা বলছেন, পরীক্ষা অবশ্যই থাকবে বা রাখতে হবে। তবে এই পরীক্ষা পদ্ধতির হয়তো পরিবর্তন আনতে হবে। আর পরীক্ষা নামের ভীতি দূর করতেই মূলত নতুন কারিকুলামে পরীক্ষা শব্দটি বাদ দিয়ে বরং সামষ্টিক মূল্যায়নের কথা বলা হয়েছে।
আর অভিভাবকদের উদ্বেগের বিষয়টিও একেবারে অমূলক নয়। শিক্ষকরা যদি অভিভাবকদের সাথে রেখে মূল্যায়ন পদ্ধতিতেও তাদের মতামত নিতে পারেন তাহলেই শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা ভীতি কাটিয়ে উঠে আনন্দের সাথে শিক্ষালাভ করতে পারবে।
সূত্র মতে, ২০২৩ সালের শুরু থেকে নতুন কারিকুলামে পাঠদান চলছে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীতে। এ দুই শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নে কোনো প্রচলিত পরীক্ষা বা মডেল টেস্ট নেয়া যাবে না বলে ইতোমধ্যে জানিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর। এ দুই শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন হবে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের গাইডলাইন অনুযায়ী। এ গাইডলাইনের বিষয়ে পরে স্কুলগুলোকে জানিয়ে দেয়া হবে বলেও জানিয়েছে মাউশি। এর আগে গত সোমবার মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর থেকে এক আদেশে এ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
আদেশে বলা হয়েছে, মাধ্যমিক পর্যায়ের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী শিখন-শেখানো ও মূল্যায়ন কার্যক্রমের ক্ষেত্রে এনসিটিবি প্রণীত শিক্ষক সহায়িকা এবং শিক্ষাক্রমের নির্দেশনা অনুসারে করতে হবে। শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের ক্ষেত্রে প্রচলিত কোনো পরীক্ষা বা মডেল টেস্ট নেয়া যাবে না। ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের বিষয়ে এনসিটিবি থেকে যে গাইডলাইন পাওয়া যাবে, তা পরবর্তীতে জানিয়ে দেয়া হবে।
অপর দিকে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে এই দু’টি শ্রেণীতে পাঠদান করাতে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ আসছে। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অন্যান্য শ্রেণীর মতো এখানেও মডেল টেস্ট বা পরীক্ষা নেয়া প্রস্তুতি চলছে।
এসব অভিযোগ সামনে আসার পর সারা দেশে মাঠ পর্যায়ে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের কঠোর বার্তা দিয়েছে মাউশি। ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীতে পরীক্ষা বাতিলের ঘোষণা আসার পর থেকে দেশের বিভিন্ন স্কুলের অভিভাবকদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা গেছে।
অনেকেই জানতে চাইছেন পরীক্ষাই যদি না থাকে তাহলে আমার সন্তান কি শিখছে বা কি জানতে পারছে তার প্রতিফলন আমরা কিভাবে বুঝতে পারব? অনেক অভিভাবক জানতে চাইছেন বিকল্প উপায়ে মূল্যায়নের কথা বলা হলেও আমরা তো এ বিষয়ে একেবারেই জানিনা । তাই সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে তারাও এ বিষয়ে উদ্বিগ্ন।
যদিও মাউশি থেকে জারি করা পাঁচ দফা নির্দেশনায় বলা হয়েছে, এই দুই শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী শিখন-শেখানো ও মূল্যায়ন কার্যক্রমের ক্ষেত্রে এনসিটিবি প্রণীত শিক্ষক সহায়িকা এবং শিক্ষাক্রমের নির্দেশনা অনুসারে পড়াতে হবে।
শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের ক্ষেত্রে প্রচলিত কোনো পরীক্ষা/মডেল টেস্ট নেয়া যাবে না। এর কোনো রকমের ব্যত্যয় ঘটলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও শিক্ষা কমিশনের সাবেক সদস্য কাজী ফারুক আহমেদ গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জানান, সারা পৃথিবীতেই এখন পরীক্ষা পদ্ধতির পরিবর্তন হয়েছে। তবে সেখানে যেভাবে বা যে প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হয়ে অভিভাবকরা সেই মূল্যায়ন কাজে সম্পৃক্ত থাকেন।
কাজেই অভিভাবক অবহিত থাকেন তার সন্তান কিভাবে বা কতটুকু শিক্ষা অর্জন করতে পারছে। আমাদের দেশে যেহেতু আগের কোনো অভিজ্ঞতা নেই তাই অভিভাবকদের এই উদ্বেগ রয়েছে।
এই শিক্ষাবিদ আরো বলেন, পরীক্ষার ভীতি দূর করতে এবং শিক্ষার সাথে আনন্দ দিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ধরে রাখতেই বিকল্প উপায়ে এখন নতুন কারিকুলামে মূল্যায়ন পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা হয়েছে।
গতানুগতিক পাঠ   পরিবর্তন আনতেই সরকার এই প্রক্রিয়া চালু করছে। নতুন এই মূল্যায়ন পদ্ধতির সাথে শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং অভিভাবক সবাই যখন পরিচিত হয়ে যাবে এবং।। ্  অভ্যস্ত হয়ে যাবে তখন আরন কোনো সমালোচনাও থাকবে না আমি মনে করি।
গোগ্রাম আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ শাহিদুল ইসলাম বলেন, ৬ ষ্ঠ  ৭ ম, শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা বাতিল হওয়ার কারণে প্রতিযোগিতা কমেছে, ছাত্র ছাত্রীরা বিদ্যালয়ে আসার ব্যপারে আগ্রহ হারাচ্ছে,  নেতা, পাতিনেতা, মেম্বার, চেয়ারম্যান, জনপ্রতি, প্রভাবশালীর ছেলে মেয়েরা নাম্বার নেয়ার জন্য এখন থেকে চাপ প্রয়েগ করছেন। এঅবস্থায় শিক্ষার গুনগত মান ব্যাহত হচ্ছে। পরীক্ষা পদ্ধতি চালু থাকলে অভিভাবক, শিক্ষার্থীর ভীতি থাকতো না, মেধার মূল্যয়ন হতো, প্রতিযোগিতা বাড়তো।
সপ্তম শ্রেণীর এক শিক্ষার্থীর এক অভিভাবক মোঃ জোহরুন নেসা বলেন, ছাত্র ছাত্রীদের যদি পরীক্ষা না  থাকে, তারা তো পড়া লিখা করবে না। পড়ার টেবিলে বসবে না।  সারাক্ষন টিভি মোবাইলে গেম, কার্টন নিয়ে ব্যস্ত থাকবে, শিক্ষা  প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার আগ্রহ কমে যাবে। পড়া লেখা গোল্লায় যাবে। একই মন্তব্য করেন, অভিভাবক পারভীন খাতুন। নবম শ্রণীর ছাত্রের অভিভাবক নার্গিস খাতুন বলেন, শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ ধ্বংস কারার পরীক্ষা পদ্ধতি বাতিল করা হচ্ছে। এমনি তো শিক্ষার্থীরা পড়া লিখা করতে চাই না। তাদেরকে পড়ার টেবিলে বসানো হয়। আর তারা এখন বলছে পরীক্ষা হবে না তো পড়ে কি লাভ। তারা এখন পড়া টিভি ও মোবাইল চালিয়ে অলস সময় কাটাচ্ছে। স্কুলে যাওয়ার অগ্রহ কমে গেছে।

সর্বশেষ সংবাদ