সরকারিকরণের দাবিতে ১১ জুন থেকে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মঘটের ঘোষণা

নিজস্ব  প্রতিবেদকঃ সরকারিকরণের দাবিতে আগামী ১১ জুন থেকে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লাগাতার ধর্মঘট কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি বিটিএ। সরকারিকরণের দাবি আদায়ে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন সংগঠনটির নেতারা।
সোমবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মহাসমাবেশ করে এ ঘোষণা দেন বিটিএ নেতারা। মহাসমাবেশে মাধ্যমিক শিক্ষা সরকারিকরণ, একইসঙ্গে ঈদের আগেই শিক্ষকদের বেতনের শতভাগ উৎসবভাতা, বাড়িভাড়া দেয়া ও পেনশন সুবিধা চালুর দাবি জানিয়েছে বিটিএ।
মহাসমাবেশে আসন্ন ঈদুল ফিতরের আগে মাধ্যমিক শিক্ষা সরকারিকরণ করে শিক্ষক-কর্মচারীদের পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা দেয়া এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ না রাখা হলে আগামী ১১ জুন থেকে সারা দেশে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অবিরাম ধর্মঘট পালনের হুঁশিয়ারি দেন বিটিএর সভাপতি অধ্যক্ষ মো. বজলুর রহমান মিয়া।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ শেখ কাওছার আহমেদের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য মুহাম্মদ আবু বকর সিদ্দিক, রঞ্জিত কুমার সাহা, এসএম শাহাদাৎ হোসেন, দাস আশীয়, মাসুম হাসান, ফরিদুল আলম জাহাঙ্গীর, মীর আশরাফ হোসেন, সহ-সভাপতি আবুল কাশেম, আহসানুল হক মুকুল, আলী আসগর হাওলাদার, বেগম নূরুন্নাহার, গোলাম রব্বানী, আতিয়ার রহমান প্রামানিক, মো. ইকবাল হোসেনসহ অনেকে।
সমাবেশে শিক্ষকরা বলেন, এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা মাত্র ২৫ শতাংশ উৎসব ভাতা, এক হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া এবং ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পান। অথচ একই কারিকুলামের অধীন একই সিলেবাস, একই অ্যাকাডেমিক সময়সূচি, একইভাবে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও উত্তরপত্র মূল্যায়নের কাজে নিয়োজিত থেকেও আর্থিক সুবিধার ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে রয়েছে বৈষম্য। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠান প্রধানদের বেতন স্কেল সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠান প্রধানদের বেতন স্কেলের একধাপ নিচে দেয়া হয়। তাছাড়া উচ্চতর স্কেলপ্রাপ্ত সিনিয়র শিক্ষকদের বেতন স্কেল ও সহকারী প্রধান শিক্ষকদের বেতন স্কেল সমান হওয়ায় সহকারী প্রধান শিক্ষকদের মধ্যে দীর্ঘদিনের অসন্তোষ রয়েছে।
তারা আরো বলেন, বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসরে যাওয়ার পর অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্টের টাকা পেতে বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয়। ফলে অনেক শিক্ষক-কর্মচারী টাকা পাওয়ার আগেই অর্থাভাবে বিনাচিকৎসায় মৃত্যুবরণ করেন। তাছাড়া কয়েক বছর ধরে কোনো ধরনের সুবিধা না দিয়েই অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্ট খাতে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন থেকে অতিরিক্ত ৪ শতাংশ কাটা হচ্ছে, যা অত্যন্ত অমানবিক। দেশ ও জনগণের স্বার্থে দ্রুত জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ বাস্তবায়ন, শিক্ষায় বিনিয়োগে ইউনেস্কো আইএলওর সুপারিশগুলো বাস্তবায়নসহ সবার জন্য শিক্ষা গ্রহণের সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে মাধ্যমিক শিক্ষা সরকারিকরণ প্রয়োজন।
রাজশাহী থেকে আসা রাজশাহী জেলা শাখার সভাপতি, চয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এম.এন. রিদওয়ান ফেরদৌস বলেন, শিক্ষাক্ষেত্রে বৈষম্য  দূরীকরণের লক্ষ্যে শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণ, পূর্ণাঙ্গ বাড়িভাড়া, উৎসব ভাতা ও চিকিৎসাভাতা প্রদান, বেসরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারি প্রধান শিক্ষকদের বেতন স্কেল সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারি প্রধান শিক্ষকদের বেতন স্কেলের অনুরুপ বেতন স্কেল নির্ধারণ করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর নিকট জোর দাবী জানান।
 চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা থেকে আসা জেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও নবাবগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ হাসিনুর রহমান বলেন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্মচারীদেরকে অবসর সুবিধাবোর্ডে ও কল্যাণ ট্যাস্টের মাধ্যমে আর্থিক সুবিধা প্রদানের পরিবর্তে পূর্ণাঙ্গ পেনশন চালুকারার  জোর দাবী জানান।
 চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শিক্ষক সমিতির একাংশের সাধারণ সম্পাদক ও নামশংকরবাটী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আসলাম কবীর জানান, বেসরকারী শিক্ষক কর্মচারীদের চাকুরী জাতীয়করণ করে সকল বৈষম্য দূরকরা সম্ভাব। এ মহৎ কাজটি করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার  নিকট জোর দাবী জানাচ্ছি।
সমাবেশে আসা নোয়াখালী বেগমগঞ্জ বাবপুর জিরতলী উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক মো. আজম খান বলেন, ২৯ বছর ধরে শিক্ষকতা করছি। আমার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, শিক্ষা জাতীয়করণ করা হোক। এতে আমাদের বেতন বাড়বে, অভিভাবকদের খরচ কমবে, শিক্ষার্থীরাও অল্প বেতনে পড়তে পারবে।
ফরিদপুর বড়দিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিউলী বেগম বলেন, আমাদের এমপিওভুক্তি থেকে জাতীয়করণ করে দিলেই সব সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।

সর্বশেষ সংবাদ