ঈদে পর্যটকে ভরে উঠবে শ্রীমঙ্গল রিসোর্ট, কটেজ, রেস্ট হাউজে অগ্রিম বুকিং

শ্রীমঙ্গল, মৌলভী বাজার প্রতিনিধি ঃ কোনো হোটেল, রিসোর্ট, রেস্টহাউজ, কটেজ খালি নেই শ্রীমঙ্গলে। সবগুলোই অগ্রিম বুকিং হয়ে গেছে। বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গলে আসন্ন ঈদ উপলক্ষে প্রতিবারের মতো এবারও পর্যটকদের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠবে। দেশি-বিদেশি হাজার হাজার প্রকৃতিপ্রেমীরা ঈদ উৎসবের ছুটিকে কাজে লাগাতে বেছে নিয়েছেন নৈসর্গিক অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি শ্রীমঙ্গলকে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত বিভিন্ন আবাসিক হোটেল, টি রিসোর্ট, ইকো-কটেজ, বিটিআরআই রেস্ট হাউজ, পিডিইউ রেস্ট হাউজ, লাউয়াছড়া বাঙলোসহ অন্যান্য রেস্টহাউজগুলো আগামি ২ আগস্ট পর্যন্ত অগ্রিম বুকিং হয়ে আছে। এ ছাড়া মৌলভীবাজার জেলার অন্যতম আকর্ষণ ট্র্যপিক্যাল রেইনফরেস্ট লাউয়াছড়া ন্যাশনাল পার্কেও ঈদের দিন থেকে হাজার হাজার পর্যটকের আগমন ঘটবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। ফলে ঈদ পরবর্তী সাতদিন শ্রীমঙ্গলের দর্শনীয় স্থানগুলো দেশি-বিদেশি পর্যটক, দর্শনার্থী, প্রকৃতিপ্রেমী, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী, ব্যবসায়ী, দেশি-বিদেশি সংস্থা, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্রমুখের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠবে।
বাংলাদেশে পর্যটনের অপার সম্ভাবনাময় চায়ের রানি শ্রীমঙ্গল হচ্ছে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের আধার। পাহাড়, অরণ্য, হাওড় আর সবুজ চা বাগান ঘেরা এই শ্রীমঙ্গল। আছে আদিবাসী বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি। চা শিল্পের জন্য শ্রীমঙ্গলের সুনাম ও পরিচিতি বিশ্বব্যাপী। ঢাকা থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরবর্তী দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলা সদর থেকে ২০ কিলোমিটার দক্ষিণে শ্রীমঙ্গলের অবস্থান। সারাদেশের সঙ্গে ৪২৫ দশমিক ১৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই জনপদের রেল ও সড়ক পথে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে। চা ছাড়াও লেবু, আনারস, পান, রাবার, কাঁঠালসহ মূল্যবান প্রজাতির কাঠ ও স্বতন্ত্র স্বত্বার খাসিয়া, মণিপুরী, টিপরা সম্প্রদায়ের কারণে এ অঞ্চলের নাম অনেকের কাছে সুপরিচিত। সবকিছু মিলিয়ে যেকোনো মানুষকে কাছে টানতে সক্ষম এই সবুজ শ্যামলিমায় ঘেরা শ্রীমঙ্গল।
এখানে আছে দিগন্ত জোড়া হাওর Ñ যার নীল ঢেউয়ের ছন্দে প্রাণ জুড়িয়ে যায়। অপার সৌন্দর্যের বাইক্কা বিলের পাড়ে পর্যবেক্ষণ টাওয়ার থেকে হাওরের অফুরন্ত মূল্যবান জলজ সম্পদসহ পাখি দেখার সুযোগ পর্যটকদের আকৃষ্ট করে বারবার। এ ছাড়াও রয়েছে Ñ শ্রীমঙ্গলের প্রবেশ পথে সাতগাঁও চা বাগানে অবস্থিত দৃষ্টিনন্দন চায়ের ভাষ্কর্য, মিনি চিড়িয়াখানা, ডিনস্টন সিমেট্রি, চা গবেষণা কেন্দ্র, ভাড়াউড়া ও বিলাশছড়া লেক, মাগুরছড়া পরিত্যক্ত গ্যাসকূপ, খাসিয়াপুঞ্জি, নির্মাই শিববাড়ি, লেবু ও আনারস বাগান আর চা বাগান ঘেরা পর্যটকদের মনভুলানো সব আয়োজন। পাহাড়ি টিলার উপর রয়েছে টি রিসোর্ট। অত্যন্ত সুরক্ষিত ও নির্জন পরিবেশে অবস্থিত টি রিসোর্টের নজরকাড়া সৌন্দর্য পর্যটকদের বিমোহিত করে তোলে। সম্প্রতি এখানে গড়ে ওঠেছে ইকো-কটেজ ও বেশ কিছু রিসোর্ট। যেখানে পর্যটকরা রাত্রিযাপনসহ প্রকৃতিকে খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ পান। এখানে রয়েছে খাসিয়া, মণিপুরী, টিপরা, উড়িয়া, সাঁওতালসহ আদিবাসী সম্প্রদায়ের বসবাস। আদিবাসীদের বৈচিত্র্যময় জীবনচিত্র, সংস্কৃতি পর্যটকদের বারবার শ্রীমঙ্গল ভ্রমণে উৎসাহিত করে।
শ্রীমঙ্গলের পাঁচ তারকা মানের গ্রান্ড সুলতান টি রিসোর্ট এ- গল্ফ এর সিনিয়র পাবলিক রিলেশন কর্মকর্তা বশির আহমদ জানান, আসন্ন ঈদ উপলক্ষে তাদের রিসোর্টে ১৯ জুলাই থেকে ২৫ জুলাই পর্যন্ত প্রায় ৮০ শতাংশ রুম অগ্রিম বুকিং হয়ে গেছে।
নিসর্গ লিচু বাড়ি ও নিসর্গ নীরব ইকো কটেজের স্বত্বাধিকারী মো. কাজি শামসুল হক জানান, ঈদ উপলক্ষে তাদের দুটি কটেজের সব কক্ষই ১৮ জুলাই থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত অগ্রিম বুকিং হয়ে রয়েছে।
শ্রীমঙ্গলের চা বোর্ড পরিচালিত টি রিসোর্ট এ- মিউজিয়ামের সকল কক্ষ অগ্রিম বুকিং হয়ে গেছে। টি রিসোর্টের বুকিং সুপারভাইজার অরুণ সিনহা জানান, আগামি ১৮ জুলাই থেকে ৩ আগস্ট পর্যন্ত তাদের রিসোর্টে কোনো কক্ষ খালি নাই।

সর্বশেষ সংবাদ