মোঃ আল আমিন নাহিদ: কৃষি নির্ভর দেশ হিসেবে বিশ্ব খ্যাত বাংলাদেশ । এ দেশটি মুলত গ্রাম প্রধান দেশ । প্রায় ৬৮ হাজার গ্রাম নিয়ে গঠিত এদেশের মোট জনসংখ্যার শতকরা ৮০ ভাগ এবং শ্রম শক্তির ৬০ ভাগ কৃষি কাজে নিয়োজিত । দেশের ১৬ কোটি মানুষের মুখে অন্নের যোগান দেয় আমাদের কৃষক সমাজ। জাতিসংঘের খাদ্য সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী ধান উৎপাদনে প্রবৃদ্ধিতে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে । ২০১৮ সালে যার হার ছিল ৫ দশমিক ৬৭ শতাংশ । অন্যদিকে বিশ্বের অন্যান্য শীর্ষ ধান উৎপাদন কারী দেশ সুমুহে এই হার ছিল অনেক কম । চীনে দশমিক ৭৮ শতাংশ ,ভারতে ২ শতাংশ ।মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেরৃ কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী এই প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে ।এত সব সাফল্যর পরেও আমরা যখন উৎফুল্য কিন্তু এই সকল সাফল্যর কারিগর আমাদের কৃষক সমাজ সবচেয়ে বেশি অবহেলিত এবং বঞ্চিত তাঁদের ন্যায্য পাওনা থেকে ।বর্তমান সময়ে জনসংখ্যা ,নগরায়ন ,শিল্পায়ন ,ইত্যাদি নানা কারণে কৃষি জমি হ্রাস, সেঁচের পানি সল্পতা ,বন্যা খরা ইত্যাদি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে ধান উৎপাদন করতে হয় ।তাঁর পরও তাঁদের উৎপাদন মূল্য জুটছে না ।সরকারি হিসাব অনুযায়ী ২৪ টাকা প্রতি কেজি ধান উৎপাদন খরচ ।অথচ এই বোরো মৌসুমে প্রতি কেজি ধানের দাম ছিল ১০ থেকে ১২ টাকা কেজি দর ।সরকার নির্ধারিত ক্রয় মূল্য ২৬ টাকা এখানে প্রশ্ন থেকে যায় দেশে যে পরিমাণ ধান উৎপাদন হয় তার খুব নগণ্য পরিমান ধান সরকার ক্রয় করতে পারে যেমন এই বোরো মৌসুমে উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা ছিল প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ মেট্রিক টন অথচ সরকার ক্রয় করেছে মাত্র দের লাখ টন ।স্বাভাবিক ভাবেই সিংহ ভাগ টন ধান কৃষক কে বিক্রি করতে হচ্ছে ব্যাবসায়িদের কাছে পানির দরে যেখানে কৃষকদের লাভ লস হিসাব করা হয় না মুনাফা অর্জন বড় কথা ।যে কৃষক সন্তানের মমতায় লালন পালন এবং কঠোর পরিশ্রম শরীরের রক্ত পানি করে ফসল ফলায় সেই ফসল যে আজ যেন তাঁদের গলার কাঁটা ।গরমের খড় তাপ হাঁর কাঁপানো শীত রোদ বৃষ্টি উপেক্ষা করে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে যে ফসল ফলানো হয় আজ তার ন্যায্য মূল্য নেই ।ন্যায্য মূল্য না পেয়ে তাঁরা আজ দিশেহারা ।আমাদের দেশের কৃষক সমাজ বিভিন্ন জায়গা থেকে উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে ধান চাষ করছে তাই তাদের ঋণ শোধের জন্য তাৎক্ষণিক ভাবে ধান বিক্রি করতে হয় । আর এই সুযোগ কে কাজে লাগায় মুনাফা লোভী দালাল চক্র , মৌসুমী ব্যবসায়ী তারা কৃষকের এই অসহায় অবস্থার সুযোগ নেয় । কৃষক তার ঋণের বোঝা থেকে মুক্তি পেতে স্বল্প মূল্যে মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছে পানির দরে ধান বিক্রি করতে বাদ্ধ্য হয় ।যার ফলে তারা ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে । যার অন্যতম কারণ সরকারি ধান সংগ্রহে অব্যাবস্থাপনা ও অবহেলা এবং ধান ক্রয় প্রক্রিয়া মজুদদারদের নিয়ন্ত্রণ ।যার ফলে কৃষক কে ৫০০-৫৫০ টাকায় এক মন ধান বিক্রি করতে হচ্ছে । বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন দেশে দ্রব্য সামগ্রীতে সরকার জনগনের পাশাপাশি উৎপাদকের স্বার্থ রক্ষা করে আমাদের দেশেও সরকার অনেক কিছুতেই ভর্তুকি দেয় কিন্তু ফড়িয়া মজুদদার ও কিছু অসৎ ব্যাবস্যায়ির কারণে সরকার কে বেকায়দায় পরতে হয় তাই সরকারকে বিভিন্ন ভাবে ধান ক্রয় না করে সরাসরি কৃষকের কাছ হতে ধান ক্রয় করা প্রয়োজন এবং মাঠে ধান থাকা অবস্থায় কৃষকদের কাছ হতে কিনতে হবে এছারাও ধান ক্রয়ে একটি সুস্থ নীতিমালা তৈরি করতে হবে ।মোট উৎপাদনের এক তৃতীয়াংশ সরকার কে কৃষকদের কাছ হতে কিনতে হবে সরকারের মজুদ ব্যবস্থার উন্নয়ন করতে হবে । অবিলম্বে নতুন কাঠামো নির্মাণ করতে হবে স্বল্প মেয়াদে বা বেসরকারি পর্যায়ে গুদাম ভারা করতে হবে নিয়মিত বাজার মনিটরিং এবং চাল আমদানি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে দেশের আপদ কালীন চাল মজুদ করে অতিরিক্ত চাল রপ্তানি করতে হবে চাল কল মালিকদের জবাব দিহিতার আওতায় আনতে হবে । বাজারে চালের মুল্য ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি কিন্তু ধানের দাম ১০ থেকে ১২ টাকা কেজি ধানের উৎপাদন ও বিক্রয় মূল্যর মধ্য সমন্বয় হীনতার কারনে বার বার লোকসানে পরে তারা ধান উৎপাদনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে । আমাদের কৃষক সমাজ ধানের বাম্পার ফলনের ধারাবাহিকতা রক্ষা দেশের জিডিপি ও খাদ্য নিরাপত্তায় বড় অবদান রাখছে। অথচ সে কৃষক আজ সর্বস্বান্ত যার অন্যতম কারণ আমাদের দেশে মজুদদারদের রয়েছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট সব চেয়ে হতাশার কথা হল পাইকারি বাঁজারে ধানের দাম কমে গেলেও চালের দাম বারছে প্রতিনিয়তও যার ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে ভোক্তা এবং কৃষক ধানের বাম্পার ফলনের সুফল ভোক্তা এবং কৃষক কেও পাচ্ছে না । সরকারকে কে এ বিষয়ে আরও সচেতন এবং দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে কারন একটি দেশের সরকার তার জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষার শেষ ভরসার স্থল কেননা সব কিছু নিয়ন্ত্রণের একছত্র ক্ষমতা কেবল সরকার রাখে ।তাই কৃষকের ন্যায্য মুল্যটুকু সরকারকেই নিশ্চিত করতে হবে আমাদের ভুলে গেলে চলবে না কৃষি এবং কৃষকের অস্তিত্ব বিলিন মানেই আমাদের অস্তিত্ব সঙ্কট ।