বাগেরহাটে পুরুষশূন্য শতাধিক পরিবার

হামলা ও গ্রেফতার এড়াতে বাগেরহাটের মোল্লাহাটের শাসন গ্রামের শতাধিক পরিবারের পুরুষ সদস্যরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
পুরুষদের পাশাপাশি জীবন ও সম্মান বাঁচাতে নারী ও শিশুরাও একধরনের পলাতক জীবনযাপন করছেন। কেউ কেউ আবার এলাকা ছেড়ে আত্মীয়দের বাড়িতে অবস্থান করছেন।

পুরুষশূন্য পরিবারগুলোর মাঠের ফসলও ঘরে তুলতে পারছেন না প্রতিপক্ষের হুমকি-ধমকিতে। ফসলের পরিচর্যার জন্য শ্রমিকও যেতে পারছে না মাঠে।

গত ১ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) মোল্লাহাট উপজেলার চুনখোলা ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের সদস্য প্রার্থী মামুন শেখ ও কিবরিয়া শরীফের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় মামুন শেখের চাচা শাসন গ্রামের আসাদ শেখ নিহত হন। তার জেরে মামুন শেখের সমর্থকদের তাণ্ডবে শাসন গ্রামের শতাধিক পরিবার এখন পুরুষশূন্য।

ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, আসাদ শেখ নিহতের পরে মামুন শেখের সমর্থকরা এলাকার শতাধিক বাড়িঘর ভাঙচুর করে। মামুনের সমর্থকদের হামলা থেকে বাঁচতে অন্তত শতাধিক লোক এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে শনিবার (০৩ এপ্রিল) নিহত আসাদ শেখের মেয়ে মমতাজ বেগম বাদী হয়ে ৮৭ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ১০-১২ জনকে আসামি করে মোল্লাহাট থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় চুনখোলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুন্সি তানজিল হোসেনকে আসামি করা হয়েছে।

পরবর্তীতে মামলাটি বাগেরহাট জেলা গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। মামলায় এজাহার নামীয় আসামি সাবেক ইউপি সদস্য মিকাইল হোসেন চৌধুরীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

পুলিশের হাতে গ্রেফতার হলেও রক্ষায় পায়নি মিকাইল চৌধুরীর বসবাস করা ভবন। জানা গেছে, ইউপি সদস্য প্রার্থী মামুন শেখের নেতৃত্বে অর্ধশতাধিক লোক হ্যামার দিয়ে মিকাইলের ভবন ভেঙে ফেলে। ভাঙচুর ও লুটপাট করে ভবনের মধ্যেও। ভেঙে ফেলে ফ্রিজ, টেলিভিশন, খাটসহ মূল্যবানসামগ্রী। ভয়ে পালিয়ে গেছে মিকাইলের স্ত্রী সন্তান।

শুধু মিকাইল চৌধুরীর বাড়ি নয়, শাসন গ্রামের সালাউদ্দিন চৌধুরী, এনামুল হোক চৌধুরী, একরামুল হোক চৌধুরী, কিবরিয়া শরিফ, ইউসুফ চৌধুরী, রফিক চৌধুরী, নাজমুল চৌধুরীসহ শতাধিক মানুষের বাড়িঘর ভাঙচুর করেন ইউপি সদস্য প্রার্থী মামুন শেখের সমর্থকরা। পুরুষদের না পেয়ে ভাঙচুরের সময় মারধরও করেন নারীদের। পুরুষশূন্য পরিবারগুলোর নারীরাও রয়েছেন আতঙ্কে।

মিকাইল চৌধুরীর ছোট ভাইয়ের স্ত্রী রওশন বেগম বলেন, আসাদ শেখ যে রাতে মারা যায়, ওই রাতেই তার ভাইপো মামুনের লোকজন এসে আমাদের অনেকের বাড়িঘর ভাঙচুর করে। তালা ভেঙে ঘরের মধ্যে থাকা মালামাল লুট করে নেয়, যা নিতে পারেনা সেসব ভাঙচুর করে রেখে যায়। পরবর্তী তিন দিন এসে আমার ভাশুরের এই ভবন ভেঙে দিয়ে গেছে তারা। আশপাশের যাকে সামনে পেয়েছে তাকে মারধর করেছে। নারীদেরও বাড়িঘরে প্রবেশ করতে দেয়নি।

মাহফুজা বেগম, হালিমা বেগমসহ আরও কয়েকজন বলেন, যেভাবে বাড়িঘর ভেঙেছে তাতে বসবাস করার কোনো অবস্থা নেই। ঘরের মধ্যে থাকা মূল্যবান মালামাল লুট করেছেন, যা নিতে পারেননি সেসব ভাঙচুর করেছে। ঘরের চালও কুপিয়েছে। ঘরের মধ্যের লেপ, তোশক, বালিশ ও কাপড় চোপরেও আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল তারা। রান্নাঘরের হাঁড়ি-পাতিলসহ সবকিছু ভাঙচুর করেছে। স্বামী-ছেলে সবাই তো পলাতক আছে। কি করব, কীভাবে বাঁচব জানি না।

পলাতক দিনমজুর নাসির মোল্লার স্ত্রী বেবি বেগম বলেন, হত্যার পর থেকে আমার স্বামী পলাতক রয়েছে। মাঠে কিছু ধান রয়েছে, তাতেও পানি দিতে পারছি না। বাড়ি এসে বলে গেছে পানি দিয়ে হবে কি, ধান তো আমরা নিয়ে যাব। শুধু বেবি বেগম নয় আরও কয়েকজন এ ধরনের অভিযোগ করেন।

মোল্লাহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী গোলাম কবির বলেন, এলাকা এখন শান্ত রয়েছে। যে যার প্রয়োজনীয় কাজ করছেন। প্রতিদিন পুলিশ নিয়মিত টহল দিচ্ছে। জেলা গোয়েন্দা পুলিশ হত্যা মামলাটি গ্রহণ করায় তারা তদন্ত করছেন।

এদিকে, ভাঙচুরের ঘটনায় হানিফের স্ত্রী হাফিজা বেগম ২৩ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেছেন। ওই মামলাটিও আমরা গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করে দেখছি বলেও জানান মোল্লাহাট থানার ওসি।

সর্বশেষ সংবাদ