হযরত খাজা শাহ্ শরীফ জিন্দানী(রহঃ) এর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি

এ,এইচ,খোকন চলনবিল প্রতিনিধিঃ সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার নওগাঁয় অবস্থিত দাদা পীর হযরত হাজী খাজা শাহ্ শরীফ জিন্দানী(রহঃ)-এর পবিত্র মাজার শরীফ বিদ্যমান৷
বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ ভারতের আজমীর শরীফে অবস্থিত খাজা মঈনুদ্দিন চিশতীর মাজার জিয়ারত করতে যায় মনের আশা পূরণের জন্য. কিন্তু আজমীর শরীফ গামী মানুষের বেশীর ভাগ মানুষই জানে না, খাজা মঈনুদ্দিন চিশতী যে পীরের অনুসারী ছিলেন, তিনি ছিলেন হযরত শাহ শরীফ জিন্দানীর শিষ্য. একারনে সকলে হযরত শাহ শরীফ জিন্দানী (রহঃ) কে খাজা মইনুনিদ্দন চিশতীর দাদা পীর বলেন. শাহ শরীফ জিন্দানী (রহঃ) শুয়ে আছেন সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ উপজেলার চলনবিল অঞ্চলের নওগাঁ নামক স্থানের এক নিভৃত পল্লীতে৷
হযরত খাজা শাহ্ শরীফ জিন্দানী (রহঃ) ইরাকের বোখারীর অন্তর্গত জিন্দান নগরের রাজ বংশে জন্ম গ্রহন করেন।বাল্যকালে তিনি অত্যন্ত মেধাবী ও  আধ্যাতিক বুদ্ধির অধিকারী ছিলেন।তিনি হযরত ইমাম বোখারী(রহঃ) বোখারী নগরের দরবার হতে এলেম, হাদিস, তাফ্সীর ও ফিকাহ্ শাস্ত্রে অসাধারন ব্যুৎপত্তি লাভ করেন ও জাহেরী এলেম চর্চা সমাপ্ত করেন।আধ্যাতিক বুদ্ধি লাভের প্রবল ইচ্ছায় কিছুদিন বিভিন্ন স্হানে ভ্রমন করে অবশেষে বিশ্ববিখ্যাত আউলিয়া কুলের শিরোমনি হযরত কুতুবউদ্দীন মাওদুদ চিশতি(রহঃ)এর হাতে বায়াত হন।বর্ণিত আছে,  হযরত খাজা হাজী শাহ্ শরীফ জিন্দানী(রহঃ) একাধারে ১২ বছর গভীর জঙ্গলে কঠোর সাধনায় মগ্ন ছিলেন। তিনি অতি সামান্য আহার করতেন তখন।কখনো কখনো একাধারে ৫ থেকে৭ সাত দিন পর্যন্ত জিকির রত অবস্হায় কাটাতেন।হযরত খাজা কুতুব উদ্দীন মাওদুদ চিশতী(রহঃ)হাজী শাহ্ শরীফ জিন্দানী(রহঃ)কে ইসমে আজম শিক্ষা দেন। এর ফলে তিনি এলমে লাদুন্নী ও এলমে তাছাউফ বুদ্ধির অধিকারী হন৷ অতঃপর তার মুর্শিদ তাকে আপন খেরকা পরিধান করিয়া দেন। আর তখন অদৃশ্য হইতে আওয়াজ ভেসে এলো  “হে হাজী এই খেরকা তোমাতেই শোভা পেয়েছে। আর আমি তোমাকে আপন বন্ধু রুপে গ্রহন করে নিলাম”।
খাজা ওসমান হারুনী (রহঃ)এর মুর্শিদ এবং খাজা গরীব নেওয়াজের দাদা পীর হযরত শাহ্ শরীফ জিন্দানী(রহঃ)ছিলেন তদীয় জামানার সকল শ্রেণী  আউলিয়দের সুলতান বা বাদশাহ। অতঃপর তিনি ইসলামের প্রচারের উদ্দেশ্যে ভারত বর্ষে তথা  বাংলাদেশের চলনবিলাঞ্চলের নওগাঁতে আসেন। হযরত খাজা হাজী শাহ্ শরিফ জিন্দনীা(রহঃ) অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন।
কথিত আছে, তিনি বাঘের পিঠে সওয়ার হয়ে  নওগাঁতে এসে আস্তনা করেন। তার এই অলৌকিক ক্ষমতা দেখে মুগ্ধ হয়ে এলাকাবাসী  দলে  দলে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করতে থাকে ।হযরত শাহ্ শরীফ জিন্দানী(রহঃ) তৎকালিন রাজা ভানশিং এর সাথে মতানৈক্যের ফলে ভানসিং এর সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন। যুদ্ধে রাজা ভাংসিং পরাজিত হয়ে  স্ব-পরিবারে পানিতে ডুবে আত্মহত্যা করে ।
 হযরত শাহ শরীফ জিন্দানী (রা:) মুসলিমদের নিয়ে একটা দল গঠন করেন এবং চলনবিলের বিভিন্ন  অঞ্চলে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছান। মুসলমানদের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় তাদের নামাজ আদায়ের জন্য ১৫২৬ খ্রীঃ(১৫১৯ – ১৫৩১খ্রীঃ) পৌড়াধিপতি সুলতান নসরত শাহের রাজত্বকালে এবং তার পৃষ্ঠপোষকতায় একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। মসজিদটি এক গম্বুজ বিশিষ্ট এবং চার প্রান্তে চারটি ছোট গম্বুজ আছে। প্রধান গম্বুজের উচ্চতা ২৬ ফুট যাতে খিলানের কাজ করা। মূল মসজিদটির বাইরের দৈঘ্য ৫০ ফুট, প্রস্থ ৩৩.৫ ফুট, উচ্চতা ২২,৫০ ফুট।  মসজিদ সংলগ্ন বারান্দার দৈঘ্য ২৩.৫ ফুট এবং প্রস্থ্য ১১ ফুট। মসজিদের দেওয়ালের পুরুত্ব ৯.০ ফুট।
মসজিদটির সবুজ গম্বুজের নিচে হাজী শাহ্ শরীফ জিন্দানী(রহঃ)এর পবিত্র মাজার শরীফ অবস্হিত৷
প্রতি বছর চৈত্র মাসের ১ম শুক্রবারে মাজারে পবিত্র ওরস পালিত হয়৷ লক্ষ লক্ষ আশেকান জাকেরান ভক্ত বৃন্দ দেশ-বিদেশ হতে হাজী শাহ্ শরীফ জিন্দানী (রহঃ) এর পবিত্র  মাজার জিয়ারত করতে আসেন।
হাজী শাহ্ শরীফ জিন্দানী(রহঃ) এর প্রকৃত নাম-আব্দুল আলী বাকী শাহ্‌ শরীফ জিন্দানী(রহঃ)৷
তথ্যসূত্র:   উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ,বাংলাদেশের সূফীদের তালিকা, বার আউলিয়ার বাংলাদেশ, পীর আওলিয়ার পুন্যভূমি ও দৈনিক ইত্তেফাক,দৈনিক সংগ্রাম৷

সর্বশেষ সংবাদ