বিশ্ব এইডস দিবস: এইডসে আক্রান্ত হওয়া থেকে বাঁচতে  চাই বেশি সতর্কতা 

ডা.মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ-বৃহস্পতিবার  (১ ডিসেম্বর) বিশ্ব এইডস দিবস ২০২২। বাংলাদেশে প্রতিবারের মতো এবারও দিবসটি পালন করার যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।বিশ্ব এইডস দিবস হলো একটি আন্তর্জাতিক দিবস। ১৯৮৮ সাল থেকে প্রতি বছর ১ ডিসেম্বর দিনটিকে বেছে নেওয়া হয়। এইচআইভি সংক্রমণের জন্য এইডস মহামারি ছড়িয়ে পড়ার বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে এবং যারা এ রোগে মারা গেছেন তাদের প্রতি শোক পালন করতে এ দিনটিকে বেছে নেওয়া হয়েছে। সরকারি ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, বেসরকারি সংস্থাগুলো এবং বিশ্বে বিভিন্ন ব্যক্তি, এইডস প্রতিরোধ এবং নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সবাইকে সচেতন করতে এই দিনটি পালন করে আসছে।
> এইডস ভাইরাসের উৎপত্তিস্থলঃ-
হিউম্যান ইমিউনোডিফিসিয়েন্সি ভাইরাস (এইচআইভি) আবিষ্কারের তিন দশক পরে এসে এর উৎপত্তিস্থল খুঁজে বের করার দাবি করেছেন যুক্তরাজ্যের গবেষকেরা।
* অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা দাবি করেছেন, গত ৩০ বছরেরও বেশি সময়ে সাড়ে সাত কোটি মানুষ আক্রান্ত হওয়ার পর শেষ পর্যন্ত ঠিক কোথা থেকে এইচআইভি ভাইরাস এসেছে, তা শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে।
* গবেষকেরা বলেন, আফ্রিকার বেলজিয়ান কঙ্গোর রাজধানী কিনসাসা থেকে ১৯২০ সালের দিক প্রথম এইচআইভি ছড়ানোর প্রমাণ মিলেছে।
* হাজারো মানুষের জেনেটিক বিশ্লেষণ করে এই প্রমাণ পাওয়ার দাবি করেছেন তাঁরা। মধ্য আফ্রিকার দেশ বেলজিয়ান কঙ্গো ১৯০৮ থেকে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত বেলজিয়ানদের ঔপনিবেশিক শাসনের অধীনে ছিল। এখান থেকে রেলওয়ে নেটওয়ার্ক মাধ্যমে মধ্য আফ্রিকায় এইচআইভি ছড়িয়ে পড়ে বলে গবেষকেরা দাবি করেন।
* গবেষকেরা বলছেন, ‘ঔপনিবেশিক একটি শহর থেকে মারাত্মক এইডসের উৎপত্তি হয়। এখনকার কিনসাসা তখন লিওপোল্ডভিল নামে পরিচিত ছিল, পরে মধ্য আফ্রিকার বৃহত্তম শহুরে এলাকা হয়ে দাঁড়ায়। এখানে নিকটস্থ বন থেকে সংগৃহীত বন্য পশুর মাংস বিখ্যাত ছিল।
* অক্সফোর্ডের গবেষকেরা দাবি করেছেন, এইচআইভি-১ ভাইরাস আবিষ্কারের ৩০ বছর পর মানুষের মধ্যে ব্যাপক আকারের এইচআইভি ছড়িয়ে পড়া, স্থানান্তরিত হওয়ার কারণ অজানাই ছিল। মধ্য আফ্রিকার এইচআইভি-১ সংক্রান্ত তথ্য-পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ১৯২০ সালের দিকে কিনসাসা থেকেই উৎপত্তি হয়েছিল এই ভাইরাসের। মানুষের মধ্যে ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ার পেছনে সামাজিক পরিবর্তন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার ভূমিকা রয়েছে।
* গবেষকেরা বলছেন, নতুন ধরনের পদ্ধতিতে এইচআইভি ভাইরাসের জেনেটিক বিশ্লেষণ করে এই তথ্য জানা সম্ভব হয়েছে। শিম্পাঞ্জি, গোরিলা ও বানর থেকে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার ১৩টি ঘটনা নথিভুক্ত রয়েছে। কিন্তু এইচাইভি-১ এর এম গ্রুপটিই মানুষের মধ্যে বেশি ছড়ানোর প্রমাণ পাওয়া যায়। এইচআইভি-১ ভাইরাসের গ্রুপ ‘এম’ এবং আরেকটি গ্রুপ ‘ও’ ১৯৬০ সাল পর্যন্ত একই হারে বাড়লেও পরে এম গ্রুপটি তিন গুণ হারে বেড়েছে। এর কারণ হতে পারে সুচের একাধিকবার ব্যবহার ও যৌনকর্মীদের কাছে যাওয়ার হার বেড়ে যাওয়া।
* গবেষক অলিভার পাইবাস এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমরা প্রথমবারের মতো সব সহজলভ্য প্রমাণ ফাইলোজিওগ্রাফিক পদ্ধতিতে বিশ্লেষণ করি। এতে ভাইরাসটি কোথা থেকে এসেছে তা পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে ধারণা করা সম্ভব হয়। এর অর্থ ভাইরাসের উৎপত্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেই বলা সম্ভব।
* গবেষক নুনো ফারিয়া এ প্রসঙ্গে বলেন, কিনসাসা ওই সময় দ্রুত এগিয়ে চলছিল। মধ্য আফ্রিকার বৃহত্তম শহর হিসেবে পুরো কঙ্গোর সঙ্গে সংযুক্ত ছিল। ঔপনিবেশিক আমলের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ১৯৪০ সালের শেষ নাগাদ প্রতিবছর রেলে ১০ লাখেরও বেশি মানুষ কিনসাসায় যেতেন। জেনেটিক তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, কঙ্গোতে দ্রুত এইচআইভি ছড়িয়ে পড়ে।
আজকের বিষয় নিয়ে কলাম লিখেছেন বাংলাদেশের বিশিষ্ট গবেষক ও জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা ডা.এম এম মাজেদ তার কলামে লিখেন…বিশ্ব এইডস দিবসটি, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা দ্বারা চিহ্নিত। বিশ্ব জনস্বাস্থ্য সচেতনতার উদ্দেশ্যে ঘোষিত, আটটি বিশেষ দিনের মধ্যে এটি একটি। বাকি সাতটি দিন হলো বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস, বিশ্ব রক্তদাতা দিবস, বিশ্ব টিকা দিবস, বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস, বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস, বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস এবং বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস।
২০১৭-এর হিসাব অনুযায়ী, এইডসের জন্য বিশ্বজুড়ে ২৮.৯ মিলিয়ন থেকে ৪১.৫ মিলিয়ন মানুষ মারা গেছেন এবং আনুমানিক ৩৬.৭ মিলিয়ন মানুষ এইচআইভি সংক্রামিত হয়ে বেঁচে আছে। এর ফলে এটি নথিভুক্ত ইতিহাস অনুযায়ী বিশ্বব্যাপী গুরুত্বপূর্ণ অন্যতম জনস্বাস্থ্য বিষয় হিসেবে পরিণত হয়েছে। বিশ্বের অনেক অঞ্চলে সাম্প্রতিক উন্নত অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল চিকিৎসা পৌঁছোনোর ফলে ২০০৫ সালে সর্বোচ্চ সংখ্যায় মৃত্যুর পর এইডস মহামারি থেকে মৃত্যুর হার কমেছে (২০১৬ সালে ১ মিলিয়ন, যেখানে ২০০৫ সালে ছিল ১.৯ মিলিয়ন)।
সুইজারল্যান্ডের জেনেভাতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় এইডস সম্পর্কিত বিশ্ব কর্মসূচির দুজন জনতথ্য কর্মকর্তা জেমস ডব্লু বুন এবং টমাস নেটটার দ্বারা ১৯৮৭ সালের আগস্টে প্রথম বিশ্ব এইডস দিবসের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। এইডস সম্পর্কিত বিশ্ব কর্মসূচির (বর্তমানে আনএইডস নামে পরিচিত) পরিচালক ড. জোনাথন মানের কাছে বুন এবং নেটটার তাদের ধারণাটির কথা জানিয়েছিলেন। ড. মান এই ধারণাটি পছন্দ করে এটির অনুমোদন করেন এবং ১৯৮৮ সালের ১ ডিসেম্বর বিশ্ব এইডস দিবসটি প্রথম পালন করা উচিত এমন পরামর্শের সঙ্গে একমত হন।
সান ফ্রান্সিসকোর প্রাক্তন টেলিভিশন সম্প্রচার সাংবাদিক বুন ১ ডিসেম্বর তারিখটির সুপারিশ করেছিলেন। তার বিশ্বাস ছিল মার্কিন নির্বাচনের যথেষ্ট পরে কিন্তু বড়দিনের ছুটির আগে, পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমগুলোর দ্বারা বিশ্ব এইডস দিবসের প্রচার সর্বাধিক হবে।
এর প্রথম দুই বছরে, বিশ্ব এইডস দিবসের প্রতিপাদ্য শিশু এবং তরুণদের লক্ষ্য করে তৈরি হয়েছিল। এই প্রতিপাদ্যটি বেছে নেওয়ার সময়, কিছু ঘটনা উপেক্ষা করার কারণে এর সমালোচনা করে বলা হয়েছিল যেসব বয়সের লোক এইচআইভিতে আক্রান্ত হতে পারে, প্রতিপাদ্যটি রোগটিকে ঘিরে থাকা কিছু কালিমা মোচন করতে এবং পারিবারিক রোগ হিসেবে সমস্যাটির স্বীকৃতি বাড়াতে সহায়তা করেছিল।
১৯৯৬ সালে এইচআইভি/যৌথ জাতিসংঘের এইডস সম্পর্কিত কর্মসূচি (ইউএনএআইডিএস) চালু হয়েছিল, এবং এটি বিশ্ব এইডস দিবসের পরিকল্পনা ও প্রচারের দায়িত্ব অধিগ্রহণ করে। শুধু একটি দিনে মনোযোগ না দিয়ে আনএইডস ১৯৯৭ সালে বছরব্যাপী যোগাযোগ, প্রতিরোধ ও শিক্ষার উপর গুরুত্ব দেওয়ার জন্য বিশ্ব এইডস অভিযান তৈরি করেছিল।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে, দেশের ২৮ দশমিক ৫ শতাংশ নারীই এইডস বিষয়ে অবগত নন। অবশ্য এইডসের অন্তত একটি বাহক সম্পর্কে অবগত ৭১ দশমিক ৫ শতাংশ নারী। ৩৬ শতাংশ নারী সবগুলো বাহক সম্পর্কে অবগত। পাঁচ বছর আগে ২০১৬ সালে এ হার ছিল ২৯ শতাংশ। অর্থাৎ বাহক সম্পর্কে নারীদের মধ্যে সচেতনতার হার বেড়েছে ৭ শতাংশ। যদিও ৮-১০ শতাংশ বাড়ানোর পরিকল্পনা ছিল সরকারের।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, ২০২০ সালের নভেম্বর থেকে ২০২১ সালের নভেম্বর পর্যন্ত দেশে ১২ লাখ ৯১ হাজার ৬৯ জনের এইচআইভি/এইডস শনাক্তকরণ পরীক্ষা হয়েছে। আগের বছর এ সংখ্যা ছিল প্রায় ১৩ লাখ ৩২ হাজার ৫৮৯।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে গত বছর নতুনভাবে এইচআইভি সংক্রমিত ৭২৯ জনের মধ্যে পুরুষ ৪২০ জন, নারী ২১০ ও তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠী ১২ জন। গত এক বছরে নতুন আক্রান্তদের মধ্যে সাধারণ জনগোষ্ঠীর ১৮৬ জন (২৬%), রোহিঙ্গা ১৮৮ জন (২৬%), বিদেশফেরত প্রবাসী ও তাদের পরিবারের সদস্য ১৪৪ জন (২০%), ইনজেকশনের মাধ্যমে শিরায় মাদক গ্রহণকারী ৬১ জন (৮%), নারী যৌনকর্মী ১৭ জন (২%), সমকামী ৬৭ জন (৯%), পুরুষ যৌনকর্মী ৫৩ জন (৭%) ও ট্রান্সজেন্ডার ১৩ জন (২%) রয়েছেন।
বিবিএস জরিপে উঠে এসেছে, দেশে ১৪ হাজারেরও বেশি এইডস রোগী শনাক্ত হয়েছেন। চিকিৎসার আওতায় এসেছেন ৮৪ শতাংশ। এই রোগে আক্রান্ত হয়ে ২০২০ সালে বাংলাদেশে মৃত্যু হয় ২০৫ জনের। এখন পর্যন্ত মোট মৃত্যু হয়েছে এক হাজার ৫৮৮ জনের।
বাংলাদেশে প্রথম এইডস রোগী শনাক্ত হয় ১৯৮৯ সালে। প্রথম যিনি শনাক্ত হয়েছিলেন, তিনি এখনো সুস্থভাবে বেঁচে রয়েছেন। তিনি নিয়মিতভাবে এইচআইভি চিকিৎসা কর্মসূচির সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন। সংক্রমিতদের মধ্যে রয়েছেন নারী ও পুরুষ যৌনকর্মী, সমকামী, যক্ষ্মা আক্রান্ত ব্যক্তি, প্রবাসী শ্রমিক, হাসপাতালে প্রসব সেবা নিতে আসা মা ও রোহিঙ্গা। আক্রান্তদের ৩৩ শতাংশ সাধারণ মানুষ।
> এইডস এর লক্ষণঃ-
* জ্বর* মাথা ব্যাথা* ফুসকুড়ি
* পেশী বা যৌথ ব্যথা* গলাব্যথা
* ফুসকুড়ি গ্রন্থি গ্রন্থি*  অবসাদ* অতিসার* ওজন কমানো* ছত্রাক সংক্রমণ এরকম হতে পারে, * দ্রুতগতিতে ওজন কমে যাওয়া। * শুষ্ক কাশি। * বার বার জ্বর আসা। * রাতের বেলায় প্রচন্ড ঘামিয়ে যাওয়া।* অনবরত এবং বর্ণনাতীত দুর্বলতা। * কিছু স্থানের লসিকাগ্রন্থি ফুলে যাওয়া। *  এক সপ্তাহের বেশি সময় ডায়রিয়া থাকলে। এর ব্যতিক্রমধর্মী কোনো দাগ জিহ্বা বা মুখের ভিতর দেখা দিলে। * স্মৃতিশক্তি ধীরে ধীরে নষ্ট হওয়া ও বিষন্নতা।যে এইচআইভি ওএইডস রোগের শারীরিক লক্ষণ দেখা না দিলেও তা রোগীর দেহে বিদ্যমান থাকতে পারে।
> এইডস প্রতিরোধে করণীয়ঃ-
এইচআইভির প্রতিরোধের মূল উপাদান হলো শিক্ষা, সচেতনতা, ঝুঁকির মাত্রা সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান ও ধারণা। মানুষের চিন্তায় ও আচরণের ইতিবাচক পরিবর্তন অত্যন্ত জরুরি।
ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা এইডস প্রতিরোধের অন্যতম উপায়। যৌন সম্পর্কের ক্ষেত্রে ধর্মীয় ও সামাজিক অনুশাসন মেনে চলতে হবে। বিবাহপূর্ব যৌন সম্পর্ক এড়িয়ে চলতে হবে। একাধিক যৌন সঙ্গী পরিহার করতে হবে।
নিরাপদ যৌনক্রিয়ার অভ্যাসের মাধ্যমে অসংক্রামিত মানুষ এইচআইভি সংক্রমণ থেকে মুক্ত থাকতে পারে। নিয়মিত ও সঠিকভাবে কনডম ছাড়া যৌন মিলন থেকে বিরত থাকতে হবে। অবাধ ও অবৈধ যৌন ক্রিয়া থেকে বিরত থাকাই হলো এইচআইভি সংক্রমণ থেকে মুক্ত থাকারসর্বোৎকৃষ্ট উপায়।যারা শরীরে ইনজেকশনের মাধ্যমে ড্রাগ নেয়, তাদের বেলায় উৎকৃষ্ট উপায় হলো ইনজেকশনের মাধ্যমে ড্রাগ না নেওয়া। যদি তা সম্ভব না হয়, তবে এইচআইভি সংক্রমিত রোগীর সঙ্গে পুনরায় ব্যবহারযোগ্য সুচ, সিরিঞ্জ, ব্লেড বা অন্যান্য যন্ত্রপাতি ব্যবহার পরিহার করতে হবে।
একবার ব্যবহার করা যায় এমন জীবাণুমুক্ত সুচ ও সিরিঞ্জ ব্যবহার করতে হবে।
শরীরে রক্ত বা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গ্রহণের প্রয়োজন হলে পরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে হবে যে সে রক্ত বা অঙ্গ- প্রত্যঙ্গে এইচআইভি রয়েছে কি না।
যৌনরোগ বা প্রজননতন্ত্রের সংক্রমণ থাকলে এইচআইভি আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই কারো যৌনরোগ বা প্রজননতন্ত্রের সংক্রমণ থাকলে দ্রুত চিকিৎসা করাতে হবে।
এইচআইভি আক্রান্ত মায়ের থেকে সন্তানের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা অনেকখানি। তবে যেসব মায়েরা প্রয়োজনীয় থেরাপি গ্রহণ করেন, তাদের ক্ষেত্রে গর্ভস্থ সন্তান আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা শতকরা ৮৫ ভাগ।
জনসচেতনতা বাড়াতে বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমের সাহায্যে প্রতিরোধমূলক তথ্য জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে হবে।
> হোমিও প্রতিকার:-রোগ নয় রোগীকে চিকিৎসা করা হয়-এইডস নিয়ে হোমিওপ্যাথির অবস্থানঃ-আমরা জানি, এইচআইভি সংক্রমণ ঘটে থাকে রক্ত, বীর্য, ভেজাইনাল বা সার্ভিক্যাল স্রাব এবং মায়ের দুধের মাধ্যমে। প্রাথমিকপর্যায়ে এর লক্ষণ প্রকাশ নাও হতে পারে। তবে একিউট রেট্রোভাইরাল সিনড্রম দেখা দিতে পারে। কিনিক্যাল স্টেজ-১, এতেও লক্ষণ তেমন প্রকাশ পায় না; কিন্তু লসিকাগ্রন্থি অনেক দিন ধরে ফুলা থাকতে পারে, বিশেষভাবে ইঙ্গুইনাল লসিকাগ্রন্থি। কিনিক্যাল স্টেজ-২, এতে ওজন হ্রাস পেতে থাকে। বারবার সাইনোসাইটিস, টনসিলাইটিস, ওটাইটিস মিডিয়া ও ফ্যারিনজাইটিস হতে পারে। এ পর্যায়ে হার্পস জোস্টার, মুখে ঘা ও নখে ফাংগাল ইনফেকশন হতে পারে। কিনিক্যাল স্টেজ-৩, এতে ওজন হ্রাস অব্যাহত থাকে। এক মাসের বেশি ডায়রিয়া থাকতে পারে। নিয়মিত জ্বর থাকতে পারে। মুখে ঘা অব্যাহত থাকে। ফুসফুসে যক্ষ্মা দেখা দিতে পারে। অথবা নিউমোনিয়া, এমপায়েমা ও জোড়ায় জোড়ায় ব্যথা হতে পারে। এ সময় রক্তশূন্যতা ও নিউট্রোপেনিয়ার লক্ষণও দেখা যায়। কিনিক্যাল স্টেজ-৪, এতে নিউমোসিস্টাইটিস নিউমোনিয়া কিংবা বারবার ব্যাকটেরিয়াল নিউমোনিয়া দেখা দিতে পারে। এ ছাড়া লিম্পোমা, ক্যাপোসিস সারকোমা, ইনভেসিভ সার্ভিক্যাল কার্সিনোমাও এ পর্যায়ে হতে পারে। ক্রনিক ডায়রিয়া এ ধরনের রোগীদের নিত্যসঙ্গী। এসব বর্ণিত লক্ষণাগুলো বয়স্ক রোগীদের জন্য প্রযোজ্য। আরো অনেক লক্ষণ এ ধরনের রোগীদের মধ্যে পাওয়া যায়।
* এইডস এবং হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা এইচআইভি বা এইডস দুরারোগ্য ব্যাধি। ১৯৮৯ সাল থেকে ভারত সরকার পরিচালিত ক্লিনিক্যাল গবেষণায় দেখা গেছে, এইচআইভি বা এইডস রোগীদের জন্য হোমিওপ্যাথি ওষুধ কার্যকর। ভারত সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন সেন্ট্রাল কাউন্সিল ফর রিসার্চ ইন হোমিওপ্যাথি কর্তৃক প্রকাশিত গবেষণাগ্রন্থ
এইচআইভি / এইডস এবং হোমিওপ্যাথিক ম্যানেজমেন্ট,সারা বিশ্বের জন্য একটি আশার আলো। ২২টি হোমিওপ্যাথিক ওষুধের কিনিক্যাল স্টাডি স্থান পেয়েছে ওই গবেষণা গ্রন্থে। আমরা আশা করি, আমাদের সরকার এ ধরনের গবেষণাগ্রন্থ থেকে দিকনির্দেশনা নিয়ে বাংলাদেশের এইচআইভি বা এইডস রোগীদের জন্য হোমিওপ্যাথি ওষুধের দরজা খুলে দেবে, যাতে করে রোগীরা হোমিওপ্যাথি ওষুধের কার্যকর ফলাফল লাভ করতে পারেন। আর যেকোনো রোগের মহামারীর সময় যে হোমিওপ্যাথিক ওষুধ অধিকাংশ  রোগীর চিকিৎসায় কার্যকর হয় সেই ওষুধ সুস্থ মানুষের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করে এই রোগ প্রতিরোধ করার ব্যবস্থা হোমিওপ্যাথিতে যেটা রয়েছে সেই নিরাপদ প্রাকৃতিক ব্যবস্থা নিয়েও সরকারি গবেষণার বিরাট সুযোগ রয়েছে।করোনা, ডেঙ্গু সোয়াইন ফ্লু-র মতো নতুন নতুন ব্যাধিগুলোর জন্য হোমিওপ্যাথিকের ভাণ্ডারে যে সকল ওষুধ ইতিমধ্যেই সঞ্চিত রয়েছে সরকারি উদ্যোগে গবেষণার মাধ্যমে সে সকল ওষুধের কার্যকারিতা যাচাই করলে হোমিওপ্যাথির উন্নয়ন সাধিত হবে।এইডসে আক্রান্ত হওয়া থেকে বাঁচতে মানুষকে আরও বেশি সতর্কতা অবলম্বন করতে  হবে।

সর্বশেষ সংবাদ