মোহনপুর কেশরহাট পৌরসভার মেয়র শহিদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ 

সারোয়ার হোসেন, তানোর: রাজশাহীর তানোর উপজেলার সিমান্তবর্তী মোহনপুর উপজেলার কেশরহাট পৌরসভার মেয়র শহিদুজ্জামান শহিদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগের পাহাড়। ইতিমধ্যে মেয়র শহিদুজ্জামান শহিদের বিরুদ্ধে সরকারি সম্পত্তির ৭কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তুলে তুলে সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন তার পৌরসভার ৫জন কাউন্সিলর। চলতি মাসের ২৫ জানুয়ারি বুধবার রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়ন(আরইউজে) কর্যালয়ে মেয়র শহিদুজ্জামান শহিদের বিরুদ্ধে এসব অনিয়ম দূর্নীতির অভিযোগ তুলে সাংবাদিক সম্মেলন করেন তার পৌরসভার কাউন্সিলররা।  এতে করে মেয়র শহিদুজ্জামান শহিদের বিরুদ্ধে এতো অনিয়ম দূর্নীতির খবর ফাঁস হয়ে পড়লে এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে চাঞ্চল্য ও বইছে সমালোচনার ঝড়। সেই সাথে স্থানীয় সরকার ও পবা-মোহনপুর আসনের এমপি আয়েন উদ্দিনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন কাউন্সিলররা।
জানা গেছে, সাংবাদিক সম্মেলনে মেয়র শহিদুজ্জামান শহিদের বিরুদ্ধে বিস্তার দূর্নীতির অভিযোগ তুলে বক্তব্য দেন কেশরহাট পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর একরামুল হক, ৫নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ছাবের আলী,৬নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল হাফিজ, ৮নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আসলাম হোসেন ও ৯নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর বাবুল আক্তার। লিখিত বক্তব্যে তারা বলেন, কেশরহাট পৌরসভার মেয়র শহিদুজ্জামান শহিদ বিগত ৭ বছরে পৌরসভার প্রায় ৭ কোটি টাকা দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে আত্মসাৎ করেছেন।
এছাড়াও এডিপির অর্থায়নে কেশরহাট পৌরসভায় প্রতি অর্থবছরে ৭৮ থেকে ৮৬ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়। সেই অর্থ পৌরসভার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে টেন্ডারের মাধ্যমে ব্যয় হওয়ার কথা থাকলেও মেয়র একাই ভুয়া বিল বানিয়ে তা পুরো আত্মসাৎ করেছেন। এ নিয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, উপপরিচালক স্থানীয় সরকার বিভাগ, বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসককে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। তারা আরো বলেন,রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়ক ঘেঁষে এই অঞ্চলের বিখ্যাত আর্থিক লেনদেন সমৃদ্ধ বাজার কেশরহাট। এই হাট থেকে প্রতি বছর ১কোটি টাকার ওপরে হাটের ইজারা মূল্য আদায় করা হয়। এ ছাড়া ভূমি কর, রেজিস্ট্রি অফিস ও হোল্ডিং ট্যাক্স থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আয় করলেও সেসব অর্থের সঠিক ব্যবহার হয়নি। বরং কোনো নিয়মের তোয়াক্কা না করে নামে-বেনামে বিভিন্ন বিল ভাউচার ব্যবহার করে মেয়র নিজের দাম্ভিকতা দেখিয়ে ভোগ বিলাস আর বিপুল সম্পদ গড়েছেন। যা সবগুলো পৌরবাসীর উন্নয়ন বঞ্চিত করে গড়ে তোলা।
কাউন্সিলর ছাবের আলী বলেন, গত ২ থেকে ৩ মাস আগে বিশেষ বরাদ্দ বাবদ ৫০ লাখ টাকা জনসাধারণের উন্নয়নে ব্যবহার করার কথা ছিল। কিন্তু মেয়র তার নিজের অফিসের সাজসজ্জার কাজে এসব টাকা ব্যয় করেছেন। এ ছাড়া কেশরহাট উন্নয়নে ও রাজস্ব আয় বাড়ানোর জন্য সরকার এনসিডিপি মার্কেট নির্মাণ করেছেন। সেখানে ব্যবসায়ীদের ভাড়ার টাকা উন্নয়ন খাতে জমা হওয়ার কথা। তবে মেয়র সেসব দোকান নিজের মনোনীত ব্যক্তিদের ভাড়া দিয়ে সে নিজে টাকাগুলো আত্মসাৎ করছেন। তিনি আরো বলেন, ২০১৫ সালে পৌরসভায় বিএমডিএফের প্রায় ৬ কোটি টাকা অর্থায়নে পৌরসভার পৌর সুপার মার্কেট নির্মাণ করা হয়। মেয়র এই দ্বিতল ভবনের প্রায় শতাধিক ঘর কোনো রেজুলেশন ও নিয়ম-নীতি ছাড়া বরাদ্দের মাধ্যমে ৩ কোটি টাকা নিজে আত্মসাৎ করেন।
কাউন্সিলর বাবুল আক্তার  বলেন, গত পাঁচ বছরে মেয়র শহিদের সম্পদের পরিমাণ শতগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। তার নিজস্ব ব্যবসা-বাণিজ্য, জমি-জমা বা পরিবারের কেউ কোনো চাকরি না করেও নিজ গ্রামে ডুপ্লেক্স দুটি ভবন নির্মাণ করেছেন তিনি। এ ছাড়া তার ছোট ভাই ও কেশরহাট পৌরসভার লাইসেন্স পরিদর্শক রোকনুজ্জামান টিটু দুর্নীতির মাধ্যমে প্রায় ৩ কোটি টাকার অট্টালিকা গড়েছেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন বাংলাদেশকে উন্নতির শিখরে নিয়ে যাচ্ছেন, তখন কেশরহাট পৌরসভার মেয়র শহিদুজ্জামান শহিদ বিভিন্ন দুর্নীতি ও অপকর্মের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও অর্জনকে চরমভাবে বাধাগ্রস্ত করছে। যা অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা।
কেশরহাট পৌরসভার মেয়র শহিদুজ্জামান শহিদের বিরুদ্ধে করা অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে কেশরহাট পৌরসভার মেয়র শহিদুজ্জামান শহিদ তার বিরুদ্ধে করা ব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন ষড়যন্ত্র মূলক।
আমি প্রধানমন্ত্রীর জনসভা নিয়ে ব্যস্ত আছি। ব্যস্ততা শেষ করে তাদের সকল অনিয়মের অভিযোগ সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরা হবে।

সর্বশেষ সংবাদ