শহীদ চাঁন্দু স্টেডিয়াম থেকে সকল স্টাফ ও মালামাল সরিয়ে নিলো বিসিবি

বগুড়া প্রতিনিধিঃ ওয়াই সি এল এর ম্যাচ আয়োজনকে কেন্দ্র করে জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাথে বিরোধের জেরে দেশসেরা শহীদ চাঁন্দু স্টেডিয়ামের সকল স্টাফসহ মালামাল সরিয়ে নিলো বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। গত ১ মার্চের এক মৌখিক নির্দেশের পর বৃহস্পতিবার বিকেলে স্টেডিয়াম থেকে সকল মালামাল, ভেন্যু ম্যানেজারসহ সকল স্টাফকে ঢাকায় নিয়ে যায় বিসিবি।
জানাগেছে, ২০০৬ সালের পর দেশের অন্যতম সেরা এই স্টেডিয়ামে  কোন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ আয়োজন করেনি বিসিবি। একপর্যায়ে আন্তর্জাতিক ভেন্যুর স্বীকৃতি বাতিল করে আইসিসি। এরপর থেকেই চরম অবহেলায় তিলে তিলে ধ্বংস হতে থাকে দেশের অন্যতম সেরা শহীদ চাঁন্দু স্টেডিয়াম। গত টি-টুয়েন্টি বিশ^কাপে বাংলাদেশ দলের বাজে পারফরমেন্সের পর বগুড়ার উইকেট নিয়ে ব্যাপক আলোচনার প্রেক্ষিতে বিসিবি নতুন করে স্টেডিয়াম সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। তারই অংশ হিসেবে বিসিবির শীর্ষ কর্মকর্তারা স্টেডিয়াম পরিদর্শন করে নতুন আরও ২টি সেন্টার উইকেট এবং অনুশীলনের জন্য নতুন করে আরও ৪টি উইকেট বানানো হয়। একই সাথে খেলোয়াড়দের ড্রেসিং রুমের পুরাতন আসবাবপত্র নতুন করে সাজানো হয়। দেয়া হয় ঘাস কাটার নতুন মেশিনসহ আরও বেশকিছু নতুন সরঞ্জাম। এছাড়াও আরও বেশকিছু সংষ্কার পরিকল্পনা করা হয়। কিন্তু হুট করেই বিসিবি বগুড়া থেকে তাদের সকল কার্যক্রম গুটিয়ে নেয়ার নির্দেশ পাঠায়। শহীদ চাঁন্দু স্টেডিয়ামের ভেন্যু ম্যানেজার জামিলুর রহমান জামিল জানান, বিসিবি থেকে অফিসিয়াল কোন চিঠি পাঠানো হয়নি। বুধবার মৌখিক ভাবে সকল মালামাল ও স্টাফদের নিয়ে ঢাকায় যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। এই নির্দেশের পর দুপুর থেকে সকল মালামাল ট্রাকে বোঝাই করার প্রস্তুতি শুরু হয়। আপাতত: মালামালসহ সকল স্টাফকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এর বেশি তিনি তিনি কিছু বলতে পারেননি।
এদিকে বিসিবি সূত্রে জানাগেছে, বিসিবি ৮ মার্চ থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত বগুড়ায় মোট ৩টি ৪ দিনের ম্যাচ আয়োজন করেছিল। সূচী অনুযায়ী ৬মার্চ টীমগুলো বগুড়ায় এসে ৭ মার্চ অনুশীলনের কথা ছিল। কিন্তু ১ মার্চ থেকে জেলা ক্রীড়া সংস্থা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগ শুরু করায় বিসিবি’র সাথে জেলা ক্রীড়া সংস্থার বিরোধ চরমে ওঠে। ২৫ মার্চ পর্যন্ত স্টেডিয়াম ব্যবহারে অনঢ় অবস্থান নেয় জেলা ক্রীড়া সংস্থা। এতে বিসিবি ওয়াই সিএল এর পূর্ব নির্ধারিত ৩টি ৪ দিনের ম্যাচ অন্য ভেন্যুতে সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়। এঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে বিসিবি তড়িঘড়ি করে বগুড়া থেকে তাদের সকল স্টাফ ও স্টেডিয়ামে ব্যবহৃত মালামাল ঢাকায় সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নেয়।
বৃহস্পতিবার বিকেলে স্টেডিয়ামে গিয়ে গ্রাউন্ডসম্যানদের চোখে বেদনার অশ্রু দেখা গেল। নাম, প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক গ্রাউন্ডসম্যান জানান, দীর্ঘ ১৭টি বছর তারা এই স্টেডিয়ামে কাজ করছেন। স্টেডিয়াম তৈরির পর থেকেই তারা কঠোর পরিশ্রম করেছেন। রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে স্টেডিয়ামের উইকেট এবং আউটফিল্ড রক্ষা করেছেন। হঠাৎ বিসিবি’র সিদ্ধান্তে তারা হতবাক। কেউ কেউ চাকরি ছেড়ে দেওয়ার কথাও ভাবছেন।
এবিষয়ে জানতে বিসিবি’র ন্যাশনাল ম্যানেজার এম এ বাতেনের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। বিসিবি’র পরিচালক সাইফুল ইসলাম স্বপনের নিকট এবিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এবিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। বগুড়া জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারন সম্পাদক মাসুদুর রহমান মিলন জানান, এবিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। বিসিবি থেকে তাকে কিছু জানানো হয়নি।
এদিকে, বগুড়া থেকে আচমকা স্টেডিয়ামের সকল মালামাল এবং স্টাফ প্রত্যাহারের খবরে তীব্র ক্ষোভ জানিয়েছেন জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাবেক কর্মকর্তা এবং ক্রীড়া সংগঠকরা। বিসিবি’র সাবেক পরিচালক ও বগুড়া জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাবেক সাধারন সম্পাদক এম আর সিদ্দিক লেমন ক্ষোভের সাথে জানান, “আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই শহীদ চাঁন্দু স্টেডিয়াম ধ্বংসের খেলায় মেতে ওঠে। মরহুম আরাফাত রহমান কোকো’র স্বপ্নে গড়া আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামকে তারা তিলে তিলে ধ্বংস করেছে। এখন স্টেডিয়ামের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দিলো। আমরা বিসিবি’র এই অন্যায় সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।

সর্বশেষ সংবাদ