১শ’ বছরের ইতিহাসে এরকম নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ড ঘটেনি : হাইকোর্ট

খুলনার শিশু রাকিবকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে উপমহাদেশে একশ বছরের ইতিহাসে এরকম নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ড ঘটেনি বলে মনে করে হাইকোর্ট। ১২ বছরের একটি বালককে কল্পনার বাইরে অসহনীয় টর্চার করা হয়েছে।’ খুলনার শিশু রাকিব হত্যা মামলায় রায় ঘোষণার সময় আদালত একথা বলেন। তবে অপরাধীরা ভিকটিমকে একাধিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে প্রমাণিত হওয়ায় দণ্ড কমানো হয়েছে।

মঙ্গলবার ( ০৪ এপ্রিল ) বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের বেঞ্চ প্রধান আসামি ওমর শরীফ ও তার সহযোগী মিন্টুর মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবনের রায় ঘোষণা করেন। বিচারিক আদালতের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন হাইকোর্ট। এছাড়া তাদের ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও দুই বছরের কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে।

হাইকোর্টে আসামিপক্ষের শুনানি শেষ করেন আইনজীবী গোলাম মোহাম্মদ চৌধুরী আলাল ও এসএম মোবিন। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুর্টি অ্যাটর্নি জেনারেল জহিরুল হক জহির, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আতিকুল হক সেলিম ও বিলকিস ফাতেমা।

রায় ঘোষণার শুরুতে আদালত বলেন, ‘এ মামলায় শাস্তি নির্ধারণ অনেক কঠিন ছিল। কেননা আসামিদের মধ্যে ক্রিমিনাল অ্যাক্টিভিটিজ ছিল না এবং চিকিৎসকরা এই ধরনের শারীরিক পরিস্থিতির চিকিৎসা কিভাবে করবেন সেটা নিয়েও কনফিশনে ছিলেন। তবে তারা বলেছেন, শরীরে বাতাস ঢোকানোর কারণে শরীরের অভ্যন্তরে সব অঙ্গ নষ্ট হয়ে গিয়েছিল।’

আসামিদের মধ্যে ‘ক্রিমিন্যাল অ্যাক্টিভিটি’ না থাকায় সাজা পরিবর্তন হয়েছে উল্লেখ করে আসামিপক্ষের আইনজীবী গোলাম মোহম্মদ চৌধুরী আলাল রায়ের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘আমরা আপিল করবো। যে ব্যক্তি রাকিবকে হাসপাতালে নিয়ে রক্ত দিয়েছিল সে হত্যা করতে পারে না। আসামিরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিল।’

প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের ৩ আগস্ট বিকালে খুলনার টুটপাড়ায় শরীফ মোটরস নামের গ্যারেজে নির্যাতন করে রাকিবকে হত্যা করা হয়। পর দিন রাকিবের বাবা বাদী হয়ে শরীফ, শরীফের সহযোগী মিন্টু খান ও মা বিউটি বেগমের বিরুদ্ধে সদর থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলা হওয়ার ৯৬ দিনের মাথায় ২০১৫ সালের ৮ নভেম্বর শিশু রাকিব (১২) হত্যার দায়ে প্রধান আসামি শরীফ ও মিন্টুকে ফাঁসির আদেশ দেন আদালত। খুলনা মহানগর দায়রা জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক দিলরুবা সুলতানা এ রায় ঘোষণা করেন। এ মামলায় অপর অভিযুক্ত শরীফের মা বিউটি বেগমকে খালাস দেন আদালত। এরপর রেফারেন্সের পাশাপাশি বিচারিক আদালতের ফাঁসির রায়ের বিরুদ্ধে আসামিরা হাইকোর্টে আপিল করেন। পরে প্রধান বিচারপতির নির্দেশে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এই মামলার পেপারবুক প্রস্তুত করা হয়।

২০১৫ সালের ১০ নভেম্বর রাকিব হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে। চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি এ মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানি শুরু হয়। গত ২৯ মার্চ বিকেলে বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রায় ঘোষণার জন্য ‍এ (৪ এপ্রিল) দিন নির্ধারণ করেন।

সর্বশেষ সংবাদ