ঈদ যাত্রা না মরণ যাত্রা ?

মোঃ আবু সাইদ: একটি বৎসর প্রতিক্ষার পর মুসলিম উম্মার জন্য আসে কাঙ্খিত দুটি ঈদ উৎসব। ১ মাস সিয়াম সাধনার পর পবিত্র ঈদ-উল ফেতর, অপরটি ঈদ-উল আযাহা। যা আমাদের সকলের জানা । ঈদ-উল আযাহা সর্ম্পকে এক কথায় বলতে গেলে বলা যায়, আত্নত্যাগের মহিমায় পবিত্র ঈদ উল-আযাহা। মুসলিম উম্মার পবিত্র স্থান সৌদি আরবের মক্কা- মদিনা সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ন স্থানে হুকুম আহকাম পালনের মধ্যে দিয়ে পবিত্র হজ্বের পরের দিন ঈদ উল-আযাহা অনুষ্টিত হয়ে থাকে। ভৌগলিক আবস্থান গত কারনে পশ্চিমা বিশ্বে ঈদ উদযাপনের পরের দিন বাংলাদেশ, ভারত, ভুটান, মালয়েশিয়া সহ বিভিন্ন রাষ্ট্রে ঈদ উদযাপন করা হয়। আর এই ঈদকে সামনে রেখে বাংলার মানুষ নারীর টানে শহর ছেড়ে ছুটে চলেন আপনজনদের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে পরিবার পরিজন নিয়ে শুরু হয় ঈদ যাত্রা নামে মরণ যাত্রা।
কেউ স্থল পথে, কেউ নৌ-পথে, আবার কেউ আকাশ পথে পাড়ি জমিয়ে থাকেন। ঈদকে সামনে রেখে বেশি ভাগ কর্মজীবি মানুষের ঢল নামেন স্থলপথে বাস, ট্রেনে বা অন্যান্য যানবাহনে। দেশের দক্ষিনাংশে নৌ-পথে ঈদ যাত্রায় কোন অংশে কম না। প্রিয় জন্ম ভূমির জন্য শহর ছেড়ে গ্রামে ফেরার জন্য মানুষকে বিভিন্ন প্রন্থায় ছুটে চলতে দেখা যায়। বাসের ছাদে যাত্রি বহন করতে এখন তেমন একটা দেখা না গেলেও রেল পথে ট্রেনের কামরার বাহিরে বা ছাদে তিল পরিমান খালি জায়গা চোঁখে পরে না। এমন কি এবার ঈদ যাত্রায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা স্যোসাল মিডিয়ার বদৌলতে ট্রেন যাত্রার ভাইরাল হওয়া একটি দৃর্শ্য সকলের মনে নারা দিয়েছে। ট্রেন যাত্রায় দেখা যায়, ট্রেনের বগি বা কামরার সংযোগস্থলের মাঝখানে পাইপের উপর বসে এক মা তার কোলের সন্তানকে এক হাতে ধরে অপর হাত দিয়ে কোন রকমে পাইপ ধরে রয়েছেন। আর ট্রেনটি দ্রুত গতিতে ছুটে চলছেন। কোন সচেতন ভাই বা বোন এমন করুন দৃশ্যের ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম (ফেইস-বুকে) পোষ্ট করায় এমন দৃশ্য আমাদের দেখার সুযোগ হয়েছে। কিন্তু রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বা সরকারের কোন দায়িত্ব শীল মহলের এমন ঈদ যাত্রার দৃশ্য দৃষ্টিগোচর হয়েছিল কি না অধমের জানা নেই। তবে মনে হয় এমন দৃর্শ্য সরকারের উচ্চ মহলের অবশ্যই দৃষ্টিগোচর হওয়া দরকার ছিল। আর সাধারণ জনগনেরা এমন দৃর্শ্য দেখে হতবিহবল হওয়া ছাড়া তাদের কিছুই করার নেই। তবে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কিছুই করার ছিল না কি ? হয়ত এমন দৃর্শ্য দেখে আর সাধারণ মানুষের মত রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ হতবিহবল ছিল। বাংলার মানুষ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের নিকট জানতে চায়, আপনারা যদি এমন একজন ঈদ যাত্রায় ঘর মূখী মায়ের করুন দৃর্শ্য দেখে থাকেন তাহলে রেলওয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা কর্মচারীর বিরুদ্ধে কি ধরণের ব্যবস্থা নিয়েছেন ? অবশ্য প্রতি বৎসর ইদ যাত্রায় ট্রেনের কামরার ভিতর থেকে শুরু করে ছাদ পর্যন্ত তিল পরিমান ঠাই যে থাকে না, যা নতুন কিছু না। আর ঈদ যাত্রায় ঘর মূখ মানুষ গুলোর মধ্যে সড়ক ও নৌ-পথে কেউ নিরাপদে গন্তব্যস্থলে পৌঁছিতে পারেন আবার কেউ পরিবার সহ দূর্ঘটনায় পতিত হয়ে বিলিয়ে দিচ্ছেন নিজের জীবন। তার সঙ্গে পরিবারের স্বজনদেরও ঈদ অনন্দের পরিবর্তে শোকের ছাঁয়া নেমে আসেন। তাই আমাদের কাম্য নিজেদের সচেতনতার পাশাপশি সরকারের দায়িত্ব পূর্ন মহল সজাগ দৃষ্টি রাখলে কাহারো ঈদ যাত্রা মরণ যাত্রায় পরিনত হওয়া থেকে দেশ ও জাতী রক্ষা পাবে।
যাত্রি অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের প্রতিবেদনে জানা যায়, এবার ঈদ উল-আযাহাতে ঈদ যাত্রায় ২৫০ টি দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছেন ২৯৯ জনের। আর আহত হয়েছেন ৮১৮ জন। তার ভিতর সড়ক পথে বেশি দূর্ঘটনা ঘটেছে। নৌ-পথে ও একে বারে যে কম তা নয়। তবে আকাশ পথে কোন দূর্ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। সামর্থবান ও বিত্তবানেরা ঢাকা থেকে আকাশ পথে অভ্যান্তরিন বিভিন্ন রুটে নিরাপদে ঈদ যাত্রা করেছেন। আমরা সকলেই চাই আকাশ পথের মতো সকল পথই নিরাপদ ঈদ যাত্রা হোক। যারা দূর্ঘটনায় নিহত বা আহত হয়েছেন অতি সাধারণ বা মধ্যবিত্ত পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যাক্তি বিশেষেরা। আর বিত্তবান ব্যাক্তিদের মধ্যে দূর্ঘটনায় পতিত হয়েছেন যারা নিজস্ব পরিবহন কার, মাইক্রোবাসে ঈদ যাত্রা করেছেন। যাই হোক নিন্ম বিত্ত, মধ্যেবিত্ত বা উচ্চ বিত্ত কাহারো যাত্রা অ-মঙ্গলজনক হোক তা আমাদের কাহারো কাম্য নয়। সকলের ঈদ যাত্রা সহ সর্বসময় সকল যাত্রাই হোক মঙ্গলময় ও নিরাপদ। আর এই বৎসর ঘটে যাওয়া দূর্ঘটনা থেকে যাত্রি সাধারণদের সচেতনতা ও সরকারের সমন্নিত প্রচেষ্টায় আগামীতে “ঈদ যাত্রা , মরণ যাত্রা ” না হয়ে বাংলার প্রতিটি ঘরে ঘরে ঈদ আনন্দে ভরে ঊঠবে এই প্রত্যশা করছি।

সর্বশেষ সংবাদ