মায়া-কামরুল-পিনুকে নিয়ে বিব্রত আ.লীগ

জিটিবি নিউজ ডেস্ক : তিন নেতার বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক সময়ে গুরুতর কিছু অভিযোগ ওঠায় বেশ বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দল গোছানোর এই সময়ে বহুল পরিচিত নেতাদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ দলটির ভাবমূর্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। এমনকি এসব নিয়ে গণমাধ্যমে কথা বলতেও নারাজ শীর্ষ নেতারা।
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত অবৈধভাবে ৬ কোটির বেশি টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠেছে। উচ্চ আদালত তার দন্ড বহাল রেখেছেন। এখন মন্ত্রিত্ব ও সংসদ সদস্য পদ নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।অন্যদিকে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম ব্রাজিল থেকে আমদানি করা পচা ও পোকায় খাওয়া গম নিয়ে পড়েছেন চাপে। এ ছাড়া মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পিনু খানের ছেলে বখতিয়ার আলম রনির আলোচিত জোড়া খুনের ঘটনায় দেশব্যাপী চলছে আলোচনার ঝড়।
মায়ার বিরুদ্ধে গত ২০০৭ সালের ১৩ জুন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সূত্রাপুর থানায় ২৯ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলা করে। এ ছাড়া ২০০৮ সালে ১৪ ফেব্রুয়ারি জ্ঞাত আয় বহির্ভূত অবৈধভাবে ৬ কোটির বেশি টাকার সম্পদ অর্জনের মামলায় নিম্ন আদালতে ১৩ বছরের কারাদ-ে দন্ডিত হন তিনি। এ রায়ের বিরুদ্ধে মায়া ২০০৯ সালের ২৫ মে হাইকোর্টে আপিল করেন। ২০১০ সালের ২৭ অক্টোবর সাজার রায় বাতিল করেন হাইকোর্ট। দুদক এর বিরুদ্ধে আপিল করলে গত ১৪ জুন আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় বাতিল করে হাইকোর্টে পুনঃশুনানির নির্দেশ দেন। এতে করে সংবিধান অনুযায়ী মায়া সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী থাকবেন কি থাকবেন না এনিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।এ সম্পর্কে জানতে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া ফোন করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি ফোনে কথা বলি না। একসময় অফিসে বা বাসায় আসেন কথা হবে।ব্রাজিল থেকে আমদানিকৃত দুই লাখ টন গমের কার্যাদেশ পায় ইমপেক্স ইন্টারন্যাশনাল এবং ওলাম ইন্টারন্যাশনাল নামের দুটি বিদেশি প্রতিষ্ঠান। এই দুই প্রতিষ্ঠান থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টন নিম্নমানের, খাওয়ার অযোগ্য গত আমদানির বিষয়টি নিয়ে বিপদে পড়েছেন খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম। তিনি শুরুতে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ওই গমের আটা না নেয়ায় আরো জটিল আকার ধারণ করে। এ ছাড়া এই কেলেঙ্কারি ঢাকতে বেশি দামে এক লাখ টন গম দেশের কৃষকের কাছ থেকে কেনার আদেশ দেয় খাদ্য মন্ত্রণালয়। এখানেই শেষ নয়, কৃষকের কাছে পর্যাপ্ত গম না থাকায় বেশি দাম দিয়েও কিনতে পারেনি। প্রতি কেজি গম ২৮ টাকা দরে কেনার সিদ্ধান্তও ভেস্তে যায়। ফলে এক নাস্তানাবুদ অবস্থায় পড়েছেন খাদ্যমন্ত্রী।
এদিকে খাদ্যগুদামে ৩ লাখ ১৪ হাজার টন গম মজুদ রয়েছে। এর মধ্যে ১ লাখ ৫০ হাজার টন ব্রাজিল থেকে আনা বাকিগুলো আগের ও দেশীয়। কিন্তু প্রতি কেজি ২৮ টাকা দরে কৃষকের কাছ থেকে এক লাখ টন গম ক্রয়ের নির্দেশ দেওয়া হয় ব্রাজিল থেকে গম আনার পরে, যা বাজার মূল্যের অন্তত ৮ থেকে ১০ টাকা বেশি। যেখানে গত এপ্রিলে কৃষকের কাছ থেকে দেড় লাখ টন গম কেনা হয় প্রতি কেজি ১৮ টাকা দামে।যদিও এসব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেছেন, ‘আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে। আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি আপনারা গোডাউনে যান। এটা আমার বিরুদ্ধে একটি স্বার্থান্বেষী মহল ষড়যন্ত্র করছে। অন্যদিকে গত ১৩ এপ্রিল গভীর রাতে রাজধানীর নিউ ইস্কাটনে একটি গাড়ি থেকে মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সংসদ সদস্য পিনু খানের ছেলে বখতিয়ার আলম রনির ছোড়া গুলিতে দৈনিক জনকণ্ঠের অটোরিকশাচালক এবং এক রিকশাচালক নিহত হন। প্রায় দুই মাস বিষয়টি গোপন থাকলেও চলতি মাসের শুরুর দিকে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হওয়ার পর হৈ চৈ পড়ে যায়।
গত ১০ জুন ঢাকার মহানগর হাকিম আমিনুল হকের কাছে রনির বন্ধু কামাল মাহমুদ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। ওই জবানবন্দিতে তিনি বলেন, ওই দিন গাড়ি থেকে পিনু খানের ছেলে বখতিয়ার আলম রনি গুলি ছুড়েছিলেন। এরপর থেকেই মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পিনু খানের ছেলে বখতিয়ার আলম রনির জোড়া খুনের ঘটনা সরাদেশে সাড়া ফেলে। এরপর থেকে পিনু খানকেও সংসদ অধিবেশনে ও দলীয় কর্মসূচিতে দেখা যাচ্ছে না।
এ সম্পর্কে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলেন, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামের গম কেলেঙ্কারি ও মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পিনু খানের ছেলে বখতিয়ার আলম রনির জোড়া খুনের ঘটনা আলোচনায় আসার পর তারা বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন। তাদের নানা ধরনের প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছে। তারা চান এর বিচার হোক। এ সম্পর্কে জানতে মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পিনু খানের সঙ্গে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য নূহ-উল-আলম লেনিন কিছুটা ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, ‘আপনারা আওযামী লীগের কোথায় কি আছে সেই খবর নিয়েই কমেন্ট নেন, কোনো ভালো খবর নিয়ে তো প্রতিবেদন লেখেন না! আওয়ামী লীগ নেতারা কি ভালো কিছু করেন না? দেখুনে এ বিষয়ে আমি কোনো কথা বলব না।এ সম্পর্কে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

সর্বশেষ সংবাদ