বরিশালের আকাশে ইউএসবাংলা ডানা মেলবে ৫ জুলাই

বরিশাল সংবাদ দাতা : জাতীয় পতাকাবাহী বিমানের ফাইট চালুর পর এবার ঢাকা-বরিশাল আকাশ পথে সার্ভিস চালু করতে যাচ্ছে ইউ.এস বাংলা এয়ার লাইন্স। আগামি ৫ জুলাই বেসরকারি এ কোম্পানি তাদের বিমানের সার্ভিস চালু করবে। সপ্তাহে চারদিন এ বিমান চলাচল করবে। ইতোমধ্যেই নগরীর ফকির বাড়ি রোডে সেলস এজেন্ট বুকিং কাউন্টার থেকে টিকেট বুকিং ও বিক্রয় শুরু করা হয়েছে। কোম্পানীর নিজস্ব কাউন্টারের জন্য নগরীর সদর রোডের একটি ভবন ভাড়া নেয়া হয়েছে। সেখানে জনবলও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
ইউএস বাংলা এয়ার লাইন্সের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ইতোমধ্যে তাদের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। আগামি ৫ জুলাই যাত্রী পরিবহনের মধ্যদিয়ে আনুষ্ঠানিক সার্ভিস শুরু করা হবে। আপাতত ঢাকা-বরিশাল রুটে সপ্তাহে শনিবার, রবিবার, মঙ্গলবার ও বৃহস্পতিবার চারদিন ফাইট আপ-ডাউন করবে। ৭৬ সিটের এ এয়ার-ক্রাপটে যাত্রী প্রতি ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে চার হাজার ও সাড়ে চার হাজার টাকা। যদিও ঈদের পূর্বে বরিশালগামী ফাইটের টিকেট ৫ হাজার টাকা করে ক্রয় করতে হয়েছে বলে একাধিক যাত্রী জানিয়েছেন। ঈদের পূর্বে ১৬ জুলাই বরিশালগামী ফাইটের যাত্রী ঢাকার নবাবগঞ্জের সাব-রেজিস্টার শফিউল বারী রানা জানান, তিনি স্ত্রী ও শিশু পুত্রসহ তিনজনের টিকেট ক্রয় বাবদ ইউএস বাংলাকে পরিশোধ করেছেন ১৬ হাজার ১’শ টাকা। তাকে এয়ার লাইন্সের কাউন্টার থেকে জানানো হয়েছে ১৫ হাজার টাকা ভাড়ার সাথে ভ্যাট যুক্ত করে ওই টাকা ভাড়া বাবদ পরিশোধের জন্য। তবুও বাংলাদেশ বিমানের টিকেট আগে ভাগে শেষ হয়ে যাওয়ায় বেশি দামেই ইউএস বাংলার টিকেট ক্রয় করেছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত ফাইট চালু না হলেও ঈদের পূর্বে আগামি ১৬ জুলাই পর্যন্ত ইউএস বাংলার বরিশালগামী সকল ফাইটের টিকেট বিক্রি (শনিবারের মধ্যে) শেষ হয়ে গেছে। বাংলাদেশ বিমানের টিকেট শেষ হয়েছে আরো অনেক আগে। সরকারি ওই বিমানের ভাড়া কম হওয়ায় আগে ভাগেই টিকেট বিক্রি হয়ে যায়। বাংলাদেশ বিমান বর্তমানে সপ্তাহে বুধবার ও রোববার যাতায়াত করে।
দীর্ঘ ৯ বছর এ রুটে সরকারি বিমান চলাচল বন্ধ থাকার পর গত ৮ এপ্রিল সার্ভিস চালু করা হয়। তার আগে সরকারি বিমানের পাশাপাশি বেসরকারি বিমানের সার্ভিসও এক বছরের বেশি সময় ধরে বন্ধ ছিল। সরকারি বিমান চালু করার পর থেকে ব্যাপকভাবে যাত্রীদের সাড়া মিলছে। শুরুতে ভাড়া তিনহাজার টাকা থাকলেও এখন তা বৃদ্ধি করে সাড়ে তিনহাজার ও চার হাজার টাকা করা হয়েছে। তবুও ৭২ সিটের ওই এয়ার-ক্রাফটের টিকেট আগে ভাগে সংগ্রহ না করলে পাওয়া মুশকিল হয়ে যায়। যাত্রীদের দাবীর প্রেক্ষিতে বিমান বাংলাদেশ সপ্তাহে তিনদিন সার্ভিস চালু করার পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা। লোকসানের অজুহাত তুলে এ রুট থেকে বিমান গুটিয়ে যাওয়ার দশ বছর পর সার্ভিস চালু করে বিমান বাংলাদেশ এয়ার লাইন্সের সাফল্য উদ্ধুদ্ধ করেছে বেসরকারি এয়ার লাইন্সগুলোকে। তারা এ রুটের যাত্রী পরিবহনের জন্য আগ্রহী হয়ে উঠেছে। এরমধ্যে ইউএস বাংলা ঈদের আগেই চমক নিয়ে যাত্রী পরিবহনের জন্য ছুটে আসছে বরিশালের আকাশে। ইতঃপূর্বে এ্যারো বেঙ্গল, জিএমজি, এয়ার পারাবত ও ইউনাইটেড এয়ার ওয়েজসহ বেশ কয়েকটি বেসরকারি এয়ার লাইন্স এ রুটে সার্ভিস পরিচালনা করেছিল। তাদের মধ্যে কেউ কেউ বেশি মুনাফার আশায় বিদেশি রুটে ফাইট চালু করতে গিয়ে অভ্যন্তরীন এ রুটের সার্ভিস গুটিয়ে নিয়ে যান। আবার কেউ এয়ার ক্রাফট সংকট ও ব্যবসা ধরে রাখতে না পেরে এ রুট থেকে গুটিয়ে গেছেন। নদী বেষ্টিত দক্ষিনাঞ্চলের ৬ জেলার মানুষের রাজধানী ঢাকায় যাতায়াতের তেমন কোনো সুযোগ নেই। ট্রেন লাইন গড়ে উঠেনি। সড়কের বেহাল দশা আর নৌ-পথে লঞ্চগুলো রোটেশন পদ্ধতিতে চলাচল করায় এ অঞ্চলের যাত্রীরা কার্যত দীর্ঘ কয়েক বছর যাবৎ জিম্মি হয়ে আছে। নৌপথে দীর্ঘ সময় ব্যয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই লঞ্চগুলোতে যাতায়াত করতে হয়। জরুরি ও সহজ যোগাযোগ মাধ্যমের জন্য আকাশ পথে সেতুবন্ধন তৈরীতে দীর্ঘ বিলম্ব হলেও বর্তমানে বেশ সারা পাচ্ছে এয়ারলাইনসগুলো।ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের বিপণন ও বিক্রয় বিভাগের প্রধান কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জানান, দেশের অভ্যন্তরীন অন্যান্য রুটের মতোই যাত্রী সেবা নিশ্চিত করে তারা সার্ভিস পরিচালনা করতে যাচ্ছেন। আর তাদের এয়ার লাইন্সের উপর যাত্রীদের ভরসা রয়েছে। তা টিকিয়ে রেখেই দক্ষিনাঞ্চলের যাত্রী পরিবহনের জন তারা সার্ভিস চালু করতে যাচ্ছেন।

সর্বশেষ সংবাদ