বগুড়া কাহালু-নন্দীগ্রামে জাতীয় সংসদ নির্বাচনী আগাম বাতাস

নাজমুল হুদা সরকার নন্দীগ্রাম (বগুড়া) থেকেঃ বর্তমান সরকারের মেয়াদ সাড়ে ৩ বছর অতিক্রম করছে। তাই ১১তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় এগিয়ে আসছে। সেই সাথে জাতীয় সংসদ নির্বাচনী আগাম বাতাস বইতে শুরু করেছে। কাহালু-নন্দীগ্রাম নির্বাচনী এলাকার আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা সাংগঠনিক কর্মকান্ডের চেয়ে প্রার্থীতা লাভের জন্য লবিং গ্রুপিং নিয়েই বেশি ব্যস্ত সময় অতিক্রম করছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কিছু মনোনয়ন প্রত্যাশীরা নামকাওয়াস্তে গণসংযোগ দেখিয়ে দলীয় টিকিট পাওয়ার ধান্দা করছে। সেসব নেতারা জনগণ ও দলীয় নেতাকর্মীদের স্বার্থের চেয়ে নিজের অস্তিত্ব প্রতিষ্ঠা নিয়েই বেশি ব্যস্ত। সে বিষয়ে এলাকার জনগণ ও দলীয় নেতাকর্মীরা অনেকটা সজাগ রয়েছে। ওই ধরণের কয়েকজন প্রার্থী আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে রয়েছে। বগুড়া জেলার কাহালু-নন্দীগ্রাম উপজেলা নিয়ে গঠিত বগুড়া-৪ আসন। এই এলাকা ধান উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। তাই ধানের শীষ প্রতীক বেশি জনপ্রিয়। বিএনপির ঘাটি হিসেবে গণ্যকরা হয় বগুড়া জেলা তথা কাহালু-নন্দীগ্রাম উপজেলা। এই নির্বাচনী এলাকা ১৯৯১ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত বিএনপির দখলেই ছিল। ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই নির্বাচনী এলাকা থেকে বিএনপির প্রয়াত যুগ্ম মহাসচিব আজিজুল হক মোল্ল¬া এমপি নির্বাচিত হন। ১৯৯৪ সালে তার মৃত্যুর পর উপ-নির্বাচনে আজিজুল হক মোল্লার বড়ছেলে ডা. জিয়াউল হক মোল্ল¬া এমপি নির্বাচিত হয়। ডা. জিয়াউল হক মোল্ল¬া প্রথমে উপ-নির্বাচনসহ মোট ৪ বার এমপি নির্বাচিত হয়েছে। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে বিএনপি থেকে জেডআইএম মোস্তফা আলী মুকুল মনোনয়ন লাভ করে বিপুল ভোটে এমপি নির্বাচিত হয়। ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাসদ প্রার্থী একেএম রেজাউল করিম তানসেন এমপি নির্বাচিত হয়েছে। এখন ১১তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে। ১৪ দলীয় জোট থেকে বর্তমান এমপি একেএম রেজাউল করিম তানসেন, আওয়ামী লীগ থেকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মমতাজ উদ্দিন, উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান রেজাউল আশরাফ জিন্নাহ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. ইউনুস আলী, কাহালু উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা কামাল উদ্দিন কবিরাজ সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে প্রচারনা চালাচ্ছে। ২০ দলীয় জোট তথা বিএনপি থেকে সাবেক এমপি ডা. জিয়াউল হক মোল্ল¬া, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি এ্যাড. আব্দুর রাফি পান্না, ঢাকার বিশিষ্ট শিল্পপতি জেলা বিএনপি নেতা আলহাজ্ব মোশারফ হোসেন ও নন্দীগ্রাম পৌর বিএনপির সভাপতি আহসান বিপ্লব রহিম মনোনয়ন লাভের চেষ্টা করছে। এদিকে নন্দীগ্রাম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম মন্ডল স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। জাতীয় পার্টি থেকে উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি হাজী নুরুল আমিন বাচ্চু মনোনয়ন লাভের জন্য চেষ্টা করছে। বর্তমান এমপি একেএম রেজাউল করিম তানসেন ১৪ দলীয় জোটের মনোনয়ন লাভের চেষ্টা চালাচ্ছে। তিনিও নির্বাচনের আগাম প্রস্তুতি নিয়েছে। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মমতাজ উদ্দিন তার সাংগঠনিক ভিত্তি ও ব্যক্তিগত ইমেজ নিয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান রেজাউল আশরাফ জিন্নাহ তিনি উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও জেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি ছিল। আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান হিসেবে তিনি ব্যাপক পরিচিত। তার ইমেজ নিয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণ করে মাঠে নেমেছে। সাবেক এমপি ডা. জিয়াউল হক মোল্লা তার ইমেজ নিয়ে নির্বাচন করার চিন্তাভাবনা করছে। সাবেক এমপি জেডআইএম মোস্তফা আলী মুকুল তিনিও তার ইমেজ নিয়ে নির্বাচন করার চিন্তাভাবনায় রয়েছে। জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আব্দুর রাফি পান্না তার ইমেজ নিয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। জেলা বিএনপি নেতা আলহাজ্ব মোশারফ হোসেন নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে ২০০৮ সাল থেকে মাঠে নেমেছে। তিনি বিরামহীনভাবে নির্বাচনী তৎপরতায় রয়েছে। আলহাজ্ব মোশারফ হোসেন জনপ্রিয়তার দৌড়ে এগিয়ে আছে। এদের মধ্যে কয়েক জন সম্ভাব্য প্রার্থীর কাহালু-নন্দীগ্রাম নির্বাচনী এলাকায় গ্রহণ যোগ্যতা অর্জন করতে গিয়ে হিমশিম খেয়েছে। তাদের অবস্থা সুবিধাজনক নয়। তবুও হাল ছাড়ছেনা। শেষ সময়ে তারা উঠেপড়ে লাগতে পারে। সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজের অবস্থান ধরে রাখার জন্য এখন ব্যাপক লবিং গ্রুপিংয়ে ব্যস্ত সময় অতিক্রম করছে। কাহালু-নন্দীগ্রাম এলাকার হাট-বাজার গ্রাম-গঞ্জে চা’স্টলে ও পাড়া-মহল্লায় ভোট ভাবনা শুরু হয়েছে। তাই কাহালু-নন্দীগ্রামে জাতীয় সংসদ নির্বাচনী আগাম বাতাস বইছে। যা নির্বাচন পর্যন্ত থাকবে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কিভাবে হচ্ছে? তা এখন বড় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে ২০ দলীয় জোট তথা বিএনপি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে কিনা এমন প্রশ্ন এমন প্রশ্ন সবার।

সর্বশেষ সংবাদ