বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও ১৫ আগষ্ট

মো: হায়দার আলী : মানব জাতি মানব সভ্যতার ধারাবাহিক ইতিহাসের ধারায় এমন কিছু দুঃখজনক, বেদনাদায়ক, হৃদয় গ্রাহী ঘটনা সংযোজিত হয়েছে যা অধ্যায়ন করলে মন শুধু ব্যথিত ও মর্মহত হয় । আর এ সব ঘটনা সংঘটনের নায়কদের উদ্দোশ্যে মন থেকে বেরিয়ে আসে নানা ধিক্কারজনক উক্তি। ইতিহাসের পাতা থেকে জানা যায় এমন কিছু মহাস্থানের জীবন এই পূথিবীতে অকালে ঝরে গেছে, যাদের এই অপমৃত্য বিবেকই কোন অবস্থাতেই মেনে নিতে পারে না । মানব জাতি ও মানব সভ্যতার চিরকল্যানকামী এ রকম এক মহপুরুষের নাম সর্বকালের শ্রেষ্ট বাঙ্গালী, জাতির জনক বর্তমান প্রধান মন্ত্রী, জননেত্রী শেখ হাসিনার পিতা শেখ মুজিবুর রহমান

১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস। ১৯৭৫ সালের এ দিনে মানব ইতিহাসের বর্বরতম হত্যা কান্ডের স্বীকার হয় সর্বকালের শ্রেষ্ট বাঙ্গালী জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান। ঘাতকেরা শুধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করে খ্যান্ত হননি তার সাথে প্রাণ দিতে হয়ে ছিল বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিনী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব, পুত্র ক্যাপ্টেন শেখ কামাল, লে. শেখ জামাল, স্কুল ছাত্র ছোট শিশু শেখ রাশেল, পুত্রবধু সুলতানা কামাল ও রোজি কামাল, বঙ্গবন্ধুর সহোদর শেখ নাসের, কৃষকনেতা অব্দুর রব সেরনিয়াবাত, যুবনেতা শেখ ফজলুল হক মনি, তার অন্ত:সত্ত্বা স্ত্রী আরজু মনি, বেবী সেরনিয়াবাত,  সুকান্ত বাবু, আরিফ, আব্দুল নঈম খান রিন্টুসহ পরিবারের ১৮জন সদস্যকে হত্য করা হয়। হত্যা করা হয় বঙ্গবন্ধুর সামরিক সচিব কর্ণেল জামিলকে। ঘাতকদের নিক্ষিপ্ত কামানের গোলার আঘাতে মোহম্মদপুরে  একটি পরিবারের বেশ কয়েকজন প্রাণ হারান। শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহেনা দেশে বাইরে থাকায় প্রাণে বেচে যান। সকল হত্যাই দু:খজনক ও নিন্দনীয়।

১৫ আগষ্ট এ দেশের এ জাতীর জন্য একটি দু:খজনক অধ্যয়। ১৯৪০ দশকের মাঝামাঝি থেকে ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ পর্যন্ত তিনি বাঙ্গালী জাতির কান্ডারী ছিলেন, যিনি পর্যায়ক্রমিক আন্দোলন স্বাধীন স্বার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয়কে অবশ্যম্ভাবী করে তুলেছিলেন সেই বঙ্গবন্ধু শেখ   শেখ মুজিবুর রহমানের দূরদর্শী, গতিশীল এবং ঐন্দ্রজালিক সাহসী নেতৃত্বে এই ভূ-খন্ডের মানুষ  হাজার বছরের পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙ্গে ছিনিয়ে এনেছিলেন স্বাধীনতার রক্তিম সূর্য্য। বাঙালি পেয়েছে লাল সবুজের পতাকার নিজস্ব জাতিরাষ্ট্র। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে বঙ্গবন্ধু যখন সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে সোনার বাংলা গড়ার সংগ্রামে নিয়োজিত তখনই তাকে হত্যা করা হয়। সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে জন্য গণতান্ত্রিক উত্তরণের কেবল তৈরী হচ্ছিল, বঙ্গবন্ধুর মৃত্যু সেটা মুছে দিল। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি বাঙালির ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, কৃষ্টি ও অগ্রযাত্রাকে স্তদ্ধ করা অপপ্রয়াস চালায়। অসাম্প্রদায়িক গনতান্ত্রিক বাংলাদেশের রাষ্ট্র কাঠামোকে ভেঙে ফেলাই ছিল তাদের মূল লক্ষ্য। হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি শুরু করে হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি। জনগনের ভোটেি নর্বাচিত সরকারকে হটিয়ে সংবিধান স্থগিত করে মার্শাল ল জারি করা হয়। সেনা শাসক জিয়উর রহমাকে দিয়ে গণতন্ত্রকে হত্যা করে দেশে কায়েম করে সামরিক শাসন।

একটি সুচিন্তিত গনতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে জাতীয় অধিকার প্রতিষ্ঠা যে সম্ভাব শেখ মুজিবুর রহমান তার প্রমান সমগ্র পৃথিবীর সামনে তুলে ধরেছিলেন। তার সব চাইতে বড় কৃতিত্ব হলো তিনি আমাদের বাঙ্গালী জাতিসত্ত্বাকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। এ প্রক্রিয়া আপনা আপনি  শুরু হয়নি বাঙালীর দীর্ঘদিনের আন্দোলন ও সংগ্রামের অমোঘ পরিণত হিসেবে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম হয়েছিল, বঙ্গবন্ধু শুধু বাঙালীর বন্ধু ও অধিনায়ক ছিলেন না, তিনি ছিলেন পথপ্রদর্শক ও মহান নেতা। তাছাড়া বঙ্গবন্ধুর আগ্রহ শুধু রাজনৈতিক স্বাধীনতাতেই সীমাবদ্ধ ছিল না তিনি চেয়েছিলেন বহুদলীয় গণতান্ত্রিক সভ্যতা, সার্বজনীন শিক্ষা ব্যবস্থা, সব মানুষের মানবাধিকারের স্বীকৃতি। তার চিন্তা ধারার সঠিক মূল্য শুধু বাংলাদেশে নয় সমগ্র পৃথিবীও স্বীকার করে। বঙ্গবন্ধু একদিনে অভিভূত হয়নি।
যৌবনে রাজনৈতিক কর্মী থেকে শুরু করে পর্যায়ক্রমে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বপ্নদ্রষ্টা ও স্থপতি ছিলেন। যে মানুষটি দীর্ঘদিনের সাংগঠনিক কার্যক্রম, ত্যাগ, আন্দোলন এবং চূড়ান্ত পর্বে মুক্তি সংগ্রমে সফল নেতৃত্ব দিয়ে একটা বিশাল জনগোষ্ঠির জন্য একটা মুক্ত স্বাধীন স্বদেশ এনে দিতে পারেন তিনি তিনি কোনভাবেই শুধু মাত্র একটা দলের সম্পদ বা নেতা হতে পারেন না। তিনি ছিলেন জাতির সম্পদ। এ মহান নেতাকে যারা হত্যা করেছেন তারা দেশ, জাতি ও বিশ্বের অনেক ক্ষতি করেছেন যা আজও পূরণ হবার নয়।
স্বাধীনতা বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ে আপোষহীন সকল রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে, দেশের মানুষের জন্য নিজের জাগতিক সব সুখ বিসর্জন, পরিবার পরিজনের চেয়ে মানুষের জন্য বেশী আকুলতা-সব বৈশিষ্ট্য ছিল দীর্ঘদেহী এই ক্ষণজন্মা পুরুষের। পলিমাটি বিধোত এ অঞ্চলের মানুষের মনও এমনধারা সহজেই আমরা ভুলে যাই শত্রুতা। আর তাই যারা এ দেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে, মানুষের বিরুদ্ধে,ষড়যন্ত্র করেছে তাদের সেই অপরাধও নিজের মানবিক গুনের ফলে তেমন করে আমলে নেননি বৃহৎ
হৃদয়ের এ সিংঘপুরুষ। বিভিন্নমূখী চক্রান্তকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর হতে পারেননি এ কোমল হৃদয়ের মানুষটি। আর তারই মাসুল গুনেছেন নিজের এবং পরিজনদের রক্ত দিয়ে। শোকের মাস আগষ্ট এ মাসে শ্রোদ্ধা জানাই এই মহাপুরুষকে। বঙ্গবন্ধু এবং সামর্থক। রাজনীতির খাতিরে যে যাই বলুক না কেন চরমবিরোধীরাও প্রকাশ্যে না হলেও নিজ বিবেকের কাছে নিশ্চয়ই বঙ্গবন্ধু না হলে বাংলাদেশ নামের এই ভূখন্ডের জন্ম হতো না এটা স্বীকার করবেনই। জাতির দুর্ভোগ্য, পিতৃ হত্যার বিচার তো দূরের কথা, পিতৃ হত্যার বিচার যেন না করা যায়, না হয় সে লক্ষ্যে ইনডেমিনিটি পর্যন্ত দেয়া হয়ে ছিল। পুরস্কৃত করা হয়েছল আতœস্বীকৃত খুনিদের।
সব প্রকার রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় দেয়া হয়েছিল নারী ও শিশু হত্যাকারীদের। পরিবেশ পরিস্থিতির কারণে এদেশের সাধারণ মানুষ এ বেদনা বুকে চেপে অপেক্ষা করেছে কলঙ্কতিলক মোচনের। আমাদের সৌভাগ্য জাতির ললাট থেকে এ কলঙ্কতিলক মোচনের কাজটি শুরু হয়েছে। আতœস্বীকৃত খুনিদের কয়েক জনের দন্ড কার্যকর হওয়ায় আংশিক বিচার কাজ শুরু হয়েছে। খুনিদের মধ্যে যারা এখনও বিদেশে পালাতক তাদের দেশে নিয়ে এসে দন্ড কার্যকর করতে পারলে আমরা স্বস্তির পুরো নিশ্বাস নিবো। আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বঙ্গবন্ধুর কোন বিশেষ আদালতে নয় সাধারণ আদালতেই বিচার হয়েছে বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের। বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার সরকার এখন ক্ষমতায়। যারা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করেছিল, হাতের নাগালে বঙ্গবন্ধুর স্বজন-পরিজন, রাজনৈতিক ঘনিষ্ঠজন, সমরিক সচিব, নারী, শিশু নির্বিশেষে সবাইকে যারা হত্যা করেছিল তাদের লক্ষ্য ছিল একটাই- বঙ্গবন্ধুকে মুছে দেয়া। কিন্তু ওই মূর্খরা বুঝেনি এক মজিবের রক্ত থেকে এদেশে লক্ষ মজিব জন্ম নেবে সেটাও কল্পলা করতে পারেনি। আজকে জননন্দিত প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা পিতার অসম্পূর্ণ কাজ সম্পূর্ণ করতে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন সেদিনে থেকে চক্রান্তকারীদের টার্গেটে পরিণত হয়েছেন শেখ হাসিনা। একাধিকবার তার প্রাণনাশের চেষ্টা করা হয়েছে। তার সুযোগ্য পুত্র সজিব ওয়াজেদ জয়কেও হত্যার চক্রান্ত করা হয়েছে কিন্তু ব্যর্থ হয়েছে কুচক্রী মহল।

শেখ হাসিনা পিতার মতই অকুতোভয় কন্যা কাজ করে যাচ্ছেন নিজের লক্ষ্য পূরণে। দেশের গন্ডি পেরিয়ে আন্তজাতিক অঙ্গনে শেখ হাসিনা এখন উদাহরণযোগ্য নেতৃত্ব, রোল মডেল। তাই অনেক দেশ তাকে অনুকরণ অনুসরণ করছেন। পাশাপাশি একথাও মনে রাখতে হবে ষড়যন্ত্রকারিরাও এখনও থেমে নেই।
বর্তমান প্রধান মন্ত্রী, বঙ্গবন্ধুর কন্যা, জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে সবার প্রত্যশা বাংলার মানুষকে যেন আর কোন বেদনাভার বইতে না হয়। ষড়যন্ত্রকারীদের প্রতি নমনীয় না হয়। পেট্রোল বোমার আগুনে  আর একটিও প্রাণ যেন না যায়। পাশাপাশি জনদুর্ভোগ লাগবে শেখ হাসিনার সরকার যেন আরও উদ্যোগী হয়। মাদক ও  দুর্নীতিমুক্ত, ক্ষুধামুক্ত মধ্যম আয়ের দেশ গড়তেই হবে। বঙ্গবন্ধুর বাকী ক্ষুনিদের দেশে এসে রায় কর্যকর করা জরুরী প্রয়োজন বলে  দেশবাসী শোকের মাসে মনে করেন।
বহু প্রত্যাশার, বহু আকাংখার এ সরকার যার নেতৃত্বে আছেন বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা- সেই সরকার যেন বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে সক্ষম হয়। একটি দারিদ্রÑক্ষুধা মুক্ত সুন্দর বাংলাদেশের যে স্বপ্ন বঙ্গবন্ধু দেখেছিলেন। শেখ হাসিনার সরকার সে স্বপ্ন পূরণে সফল হবেন ইনসাল্লাহ। এটাই দেশবাসী প্রত্যশা করেন।

সর্বশেষ সংবাদ