রাণীনগরে কুজাইল-সর্বরামপুর মেঠো সড়ক পানি-কাঁদাতে একাকার

রাণীনগর (নওগাঁ) প্রতিনিধি: নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার ২নং কাশিমপুর ইউপি’র কুজাইল বাজার হতে সর্বরামপুর হয়ে এনায়েতপুর পর্যন্ত প্রায় আড়াই কিলোমিটার মেঠো সড়কটি লাগাতার কয়েক দিনের বৃষ্টিতে বড় খানা-খন্দ আর পানি-কাঁদাতে একাকার হওয়ায় ওই এলাকার বসবাস কারিরা চলাফেরাই চরম দূর্ভোগ পোহাচ্ছে। বিকল্প কোন যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় কাঁদা-পানিতে ভরা এই সড়কটি তাদের একমাত্র ভরসা। ডিজিটাল বাংলাদেশের গ্রামীণ জনপদের মেঠো পথ গুলো দেখে মনে হয় এযেন অভিভাবকহীন এলাকা। স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তরের নানা মুখী উন্নয়ন কর্মসূচী থাকলেও বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক প্রকল্প আসে-যায় এই মেঠো সড়কের কপালে কিছু জুটে না। দীর্ঘ সাড়ে চার দশক ধরে এই সড়কটির উন্নয়নে কোন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়নি। তবে কর্তা ব্যক্তিদের আশার বানী এই যে কিছু সময় লাগলেও আগামীতে এই সড়ক এর উন্নয়নে প্রকল্প হাতে নেওয়া হবে। দীর্ঘদিন ধরে এই আশার বানী শুনতে শুনতে এই এলাকার তিন/চারটি গ্রামের বসবাসকারি সাধারণ মানুষ ভাগ্যের লেখন মনে করে নিরাস হয়ে আছে। তবে তারা হাল ছাড়তে নারাজ। ইতিমধ্যেই কয়েক বার তাদের চলাচলের দূর্ভোগের কথা সরাসরি স্থানীয় সংসদ সদস্য মো: ইসরাফিল আলম এমপিকে জানানো হয়েছে। হয়তো তিনি বিশেষ উদ্দ্যোগে শীঘ্রই এই সড়কটি জনস্বার্থে পাকা করণ করে দেবেন এমনটায় তাদের শেষ আশা।
জানা গেছে, উপজেলার কাশিমপুর ইউপি’র কুজাইল-সর্বরামপুর মেঠো সড়কটি স্বাধীনতার সাড়ে চার দশক পরও এর বেহাল দশা থেকে মুক্তি ওই এলাকায় বসবাসরত্ব সাধারণ মানুষ। এমনিতে উঁচু নিচু মেঠো সড়কটি একেবারেই অযোগ্য। এর মাঝে আবার লাগাতার কয়েক দিনের বৃষ্টিপাতে সড়কের খানা-খন্দে বৃষ্টির পানি জুমে কাঁদা-পানিতে একাকার হওয়ায় ছোট-খাটো গাড়ি চলাচলতো দূরের কথা খালি পায়ে হেঁটে চলাতে গেলেও চরম দূর্ভোগে পরতে হয়। কিন্তু বাধ্য হয়ে জীবন-জীবিকার টানে সকল কষ্টকে অপেক্ষা করে কাশিমপুর, সর্বরামপুর, কুজাপাড়া, এনায়েতপুর গ্রামের এক অংশ সহ প্রায় আড়াই কিলোমিটার এই পথেই চলাচল করতে হয়। এই এলাকায় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সহ নানা শ্রেণী পেশার প্রায় দুই হাজার মানুষের বসবাস। এই সড়কটি চলাচলের অযোগ্য হওয়ায় তাদের জীবন যাত্রার মান নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তোলে। জরুরি স্বাস্থ্য সেবা নিতে ভূংগুর যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে বড় বেকায়দায় পড়তে হয়। তারা অক্ষেপ করে বলেন, আমাদের আতœীয়-স্বজনরাও খারপ রাস্তার কারণে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া আমাদের বাড়িতে আসতে চাই না। বিয়ে-সাদির ব্যাপারেও এই মেঠো সড়কটি নষ্ট থাকার কারণে নানান প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়, এমনকি আতœীয়তা নষ্ট না হলেও টানাপড়নের মত ঘটনা ঘটেছে। এই তিন গ্রামে অধিকাংশ কৃষিজীবি লোকের বসবাস। ফসল উঠার পুরো মৌসুমে তাদের উৎপাদিত ফসলের নায্য মূল্য থেকেও বঞ্চিত হয়।
কশিমপুর গ্রামের সেলিম জানান, এমনিতেই এই মেঠো সড়কে চলাচল করতে কষ্ট হয়। তার উপর আবার কয়েক দিনের শ্রাবনের লাগাতার বৃষ্টিপাতে পানি-কাঁদা একাকার হওয়ায় বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া বাড়ি থেকে বের হচ্ছি না। নিজের মটরসাইকেল থাকলেও পাশের গ্রাম দিয়ে হেঁটে এসে প্রয়োজনের তাগিদে অন্যের গাড়ি ব্যবহার করছি।
২নং কাশিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মকলেছুর রহমান জানান, স্বাধীনতার পর থেকে অদ্যবদি ওই সড়ক একই অবস্থাই রয়েছে। মাঝে মধ্যে হয়তো কিছু সংস্কার হলেও স্থায়ী কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হওয়ায় বিশেষ করে বৃষ্টি মৌসুমে কাশিমপুর সর্বরামপুর এনায়েতপুর গ্রামবাসির চলাচলের চরম কষ্ট হয়। এলাকাবাসি আমাকে সড়কটি পাকা করণের ব্যাপারে বারবার বলেছে। আমি নিজেই লজ্জা-সরমের কারণে ওই গ্রাম গুলোতে যেতে পারি না। এই সড়কটি পাকা করণ খুবই জরুরি। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল না থাকার কারণে ওই গ্রামের লোকজন গুলো অনেক কষ্ট করে।
উপজেলা প্রকৌশলী শাইদুর রহমান মিঞা জানান, স্থানীয় সংসদ সদস্য ইসরাফিল আলমের নির্দেশক্রমে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এই রাস্তাটি পাকা করণের জন্য একটি প্রস্তাবনা স্থানীয় সরকার প্রকৌশলীর প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাবনাটি পাশ হলেই যত তারাতারি সম্ভব অন্যান্য সকল প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করে সড়কটি পাকা করণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সর্বশেষ সংবাদ