আত্রাইয়ে বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত জনজীবন

আত্রাই (নওগাঁ) প্রতিনিধিঃ নওগাঁর আত্রাইয়ে বিদ্যুতের অসহনীয় লোডশেডিংয়ে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। তীব্র দাবদাহ, ভ্যাপসা গরম ও রৌদ্রের প্রখরতার সাথে যেন পাল্লা দিয়ে চলছে লোডশেডিং। ফলে একদিকে অতিষ্ঠ জনজীবন অপরদিকে কলকারখানায় হ্রাস পাচ্ছে উৎপাদন। প্রায় একমাস ধরে ঘন ঘন অনির্ধারিত এ উপজেলায় চলছে বিদ্যুতের লোডশেডিং। এ লোডশেডিংয়ের কবলে পড়ে প্রায় ৩০ হাজার গ্রাহক ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। ফলে পল্লী বিদ্যুতের প্রায় ৩০ হাজার গ্রাহক দিনে- রাতে অর্ধেক সময়ও বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না। বিপাকে পড়েছে প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক সকল স্তরের শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে বিদ্যুৎ অফিসে ধরনা দিয়েও কোন ফল হচ্ছে না উপজেলাবাসীর।
নওগাঁ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আত্রাই বিলিং এরিয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, আত্রাই উপজেলায় ৬ টি ফিডারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। বর্তমানে দিনে রাতে প্রায় ১২ থেকে ১৩ ঘন্টার লোডশেডিংয়ের কবলে পড়ছে আত্রাই এলাকার পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহকরা। দিনের বেলায় কম হলেও রাতের বেলায় চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন এসব গ্রাহকরা। ৬টি ফিডারের আওতায় রয়েছে আবাসিক, বাণিজিক, দাতব্য ছাড়াও সেচ সংযোগ। গত এক মাসের অধিক সময় ধরে বিদ্যুতের লোডশেডিং হওয়ায় সকল স্তরের গ্রাহক ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। মৎস্য ভান্ডার হিসেবে খ্যাত আত্রাই রেলওয়ে ষ্টেশন সংলগ্ন মাছ বাজার এলাকায় রয়েছে বেশ কয়েকটি বরফ মিল। যে বরফ দিয়ে সংরক্ষিত করা হয় এখানকার শত শত মন মাছ। সম্প্রতি বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের ফলে বরফ মিলগুলোতে বরফ উৎপাদন কমে যাওয়ায় মাছের বাজারে ধ্বস নেমেছে। সেই সাথে লোডশেডিংয়ের ফলে উপজেলার বিভিন্ন মিল মালিকদের দিন দিন আর্থিক লোকসান গুণতে হচ্ছে।
উপজেলার তারাটিয়া ছোটডাঙ্গা গ্রামের রাইচমিল মালিক আব্দুস ছামাদ প্রাং বলেন, বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের ফলে আমরা নিয়মিত মিল চালাতে পাড়ছি না। এ জন্য আমাদের প্রতিদিন লোকসান গুনতে হচ্ছে।
উপজেলার ভবানীপুর জিএস উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য মোঃ ওয়াজেদ আলী লিটন বলেন, বর্তমানে বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের ফলে বিদ্যালযের ছোট কচিকাচাদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। বিশেষ করে সন্ধ্যাকালীন সময়ে ছাত্র-ছাত্রীদের লেখা পড়ার মূল সময়েই বিদ্যুৎ থাকে না। উপজেলা সদর ফিডারে বিদ্যুৎ সরবরাহ কিছুটা থাকলেও মফঃস্বল ফিডারগুলোতে খুবই কম বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়।উপজেলার মিরাপুর গ্রামের গ্রাহক উজ্জল কুমার জানান, এমনিতে প্রচন্ড গরম তার মধ্যে বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিং থেকে কবে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে তা বলা মুশকিল। তিনি ক্ষোভের সাথে আরো জানান রাতের বেলায় বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিং হতে থাকলে ছেলে মেয়ের লেখা পড়ার তো ক্ষতি হবেই, তার সাথে চোর ডাকাতের উপদ্রোব বাড়তে পারে।
উপজেলার ভবানীপুর বাজারের ব্যবসায়ী মোঃ সবুজ সরদার ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে আমরা সাধারণ ব্যবসায়ীরা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছি। দিন দিন আমাদের ব্যবসায় ধস নামতে শুরু করেছে। এদিকে ঘন ঘন বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কারণে ডিজিটালাইষ্ট ও ব্যাংক বীমা প্রতিষ্ঠান অচল হয়ে পড়েছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কল-কারখানা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিপনী বিতান ও কম্পিউটার ব্যবসা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।
আত্রাই পল্লী বিদ্যুৎ এরিয়া অফিসের এজিএম মোঃ আবুল কাশেম জানান, প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম বিদ্যুৎ সরবরাহ পাওয়ার জন্য লোডশেডিং বেশি হচ্ছে। এতে আমাদের করনীয় কিছু নেই। চাহিদা মাফিক বিদ্যুৎ কবে থেকে পাওয়া যাবে এমন প্রশ্নে কোন সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।

সর্বশেষ সংবাদ