বদলগাছীতে ফল বাগান প্রদর্শনী বাস্তবায়নে কৃষকের টাকায় ভাগ বসালেন কৃষি কর্মকর্তা

আবু সাইদ বদলগাছীঃ নওগাঁর বদলগাছীতে কৃষক পর্যায়ে মাল্টা ও বিভিন্ন প্রজাতির আম প্রদর্শনী বাস্তবায়ন করতে প্রদর্শনীর টাকায় ভাগ বসালেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাসান আলী। কৃষক পর্যায়ে প্রদর্শনীর টাকায় ভাগ বসানোর ঘটনাটি ঘটেছে গত ৮ আগষ্ট মঙ্গলবার কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয়ে।

উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা যায়, বদলগাছী উপজেলায় গত ২০১৬-১৭ অর্থ বৎসরের ০৩-০৫-২০১৭ ইং তারিখে ৪ লক্ষ ৮৯ হাজার ৬ শত বিরাশি টাকা বরাদ্ধ আসে। ওই বরাদ্ধ দিয়ে মাল্টা ও বিভিন্ন প্রজাতির আম,কমপোষ্টচেম্বার,লাইফ পারচিং,সবুজসার(ধুনচা), সজিনা,মাইমুজা ও রোপা আমন সহ ১১৭ টি প্রদর্শনী করতে হবে। বরাদ্ধ মোতাবেক অন্যান্য প্রদর্শনী বাদে উপজেলায় মাল্টা ও আম এই ২ টি প্রদর্শনী প্রকল্পে কৃষক পর্যায়ে মাল্টা ১০ টি, গৌরমতি,হাড়িভাঙ্গা,আ¤্ররুপালী জাতের ১৪ টি আম বাগানের প্রদর্শনী স্থাপন করেন। প্রতিটি প্রদর্শনীর বরাদ্ধ মোতাবেক ৬০ টি করে গাছের চারা ও ১৫ কেজি টিএসপি, ১৫ কেজি এমওপি. জিপসার ১৮ কেজি করে দেওয়ার কথা। এমওপি,ও জিপসার প্রদানে সঠিকতা থাকলে ও টিএসপি ১৫ কেজির স্থলে ১৩ কেজি প্রদান করা হয়। এ ছাড়া ও প্রতিটি প্রদর্শনীতে গাচের চারা রোপনের শ্রমিকের মজুরী বাবদ ১ হাজার ৫ শত টাকা করে বরাদ্ধ রয়েছে। যা যথা সময়ে প্রদর্শনী মালিক কৃষকদের প্রদান না করার অভিযোগ উঠলে কৃষি কর্মকর্তা হাসান আলী অবশেষে গত ৮ আগষ্ট মঙ্গলবার প্রদর্শনী মালিকদের তার কার্যালয়ে ডেকে প্রকাশ্য বক্তব্য দেয় যে,প্রতিটি প্রদর্শনীর বিপরীতে শ্রমিকের মজুরী বাবদ ১৫০০ শত টাকা বরাদ্ধ রয়েছে। কিন্তু উক্ত পরিমান টাকার ট্যাক্স,ভাট ও অফিসিয়াল খরচাদি ৫০০ টাকা কেটে রেখে ১ হাজার টাকা করে প্রদান করা হচ্ছে। এ সময় কয়েকজন কৃষক ৫০০ টাকা কর্তনের প্রতিবাদ করলে কৃষি কর্মকর্তা হাসান আলীর দাপটের কাছে তারা অসায়ত্ব বরণ করে বাধ্য হয়ে প্রতি কৃষক ওই ১ হাজার টাকা করে নিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়লে ঘটনাটি ওই দিন সন্ধ্যায় প্রকাশ হয়ে পরে।
কৃষি কর্মকর্তা হাসান আলীর এমন ঘটনা প্রকাশের পর উপজেলা সদর ইউপির আইনারা গ্রামের মাল্টা প্রদর্শনীর মালিক আব্দুল হান্নান, আখিট্রি গ্রামের আফজাল হোসেন, ভাতশাইল গ্রামের আম প্রদর্শনীর মালিক আকবর আলী,পাহাড়পুর ইউপির পাহাড়পুর গ্রামের আম প্রদর্শনীর মালিক কৃষক রাসেল, বিলাসবাড়ি ইউপির নাজিরপুর গ্রামের মাল্টা প্রদর্শনীর মালিক কৃষক জুলফিকার আলী, এনায়েতপুর গ্রামের মাল্টা প্রদর্শনীর মালিক আব্দুর রউফ, মথুরাপুর ইউপির আম প্রদর্শনীর মালিক আব্দুল মান্নান, আধাইপুর ইউপির কার্ত্তিকাহার গ্রামের মাল্টা প্রদর্শনীর মালিক কৃষক দুলাল হোসেন সহ প্রায় প্রদর্শনী মালিকদের সাথে গত ৮ আগষ্ট সন্ধ্যা থেকে রাত সাড়ে ১০ টা পর্যন্ত মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে প্রত্যোকে অকপটে শিকার করে অভিযেগ করেন কৃষি কর্মকর্তা হাসান আলী তাদের পাওনা টাকা ১৫০০ এর স্থলে ৫০০ শত টাকা কর্তন করে ১০০০ টাকা করে ২৪ জন প্রদর্শনী মালিকদের প্রদান করেছেন।

এ বিষয়ে গতকাল বুধবার দুপুরে সরাসরি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাসান আলীর সাথে তার কার্যালয়ে সাক্ষাত করা হলে তিনি তার বিরুদ্ধে কৃষকদের আনিত অভিযোগ প্রতিটি প্রদর্শনীতে ৫/৬ টি করে চারা কম প্রদান, টিএসপি সার ১৫ কেজির স্থলে ১৩ কেজি প্রদান ও চারা রোপন করতে গর্ত তৈরী বাবদ শ্রমিকের মজুরী ১৫০০ টাকার স্থলে ১০০০ টাকা প্রদান করেছে মর্মে সকল অভিযোগ গুলো অকপটে স্বীকার করে বলেন মুল বরাদ্ধর টাকা উত্তোলন করতে গেলে ট্যাক্স,ভাট ও আকাউন্স মেইনটেইন্স করতে খরচা পাতি হয় সে গুলো কোথায় থেকে আসবে। তা ছাড়া অফিসে যে গাড়ি ব্যবহার করা হয় সেই প্রকল্প এখন বন্ধ রয়েছে। কিন্তু গাড়ি ও ড্রাইভার তো রয়েছে। তার জ্বালানি খরচ, ড্রাইভারের বেতন বলেন বা তার হাত খরচ বলেন তা তো রয়েছে, সে গুলি কোথায় থেকে আসবে। সব খরচাদি এই সব বিভিন্ন প্রকল্প থেকে ম্যানেজ করতে হয়। আমি তো আর বেতন থেকে দিয়ে ওই সব খরচ বহন করবো না। তিনি গর্ব করে বলেন তার মত সৎ কৃষি কর্মকর্তা নেই। আশে পাশে উপজেলা গুলোতে খোঁজ নিয়ে দেখেন মাল্টা ও আম প্রদর্শনীর করতে শ্রমিকের মজুরি বাবদ টাকা কোন কৃষি কর্মকর্তা প্রদর্শনী মালিকদের প্রদান করেন নাই। আমি তাও তো ১০০০ টাকা করে প্রদান করেছি। এখন দেখছি প্রদান করে ভুল করেছি। কারন জুন/১৭ ক্লোজিং এর সময় প্রতিটি প্রদর্শনীর অনুকুলে শ্রমিকের মাষ্টার রোল তৈরী করে বিল উত্তোলন করেছি। এখন ওই শ্রমিকের মুল্য না দিলে কিছুই হতো না। গর্ত তৈরী না করে তো আর চারা রোপন করা সম্ভব হয়নি। তাছাড়া প্রদর্শনী মালিকেরা ওই টাকার খবর জানতো না।
অবশেষে এই প্রতিনিধিকে উদ্দেশ্য করে বলেন, যাই হোক সকল অভিযোগ সত্য আপনাকে বিশ্বাস করে বল্লাম। বিষয় গুলি নিয়ে পত্রিকায় লেখবেন না। কারন এই প্রকল্পটি সরকারের রাজস্ব খাত থেকে অর্থ নিয়ে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বিধাই খুবি গুরুত্বপূর্ন।

সর্বশেষ সংবাদ