রাণীনগরে বসত ভিটা হারানোর আতংকে ৩২ ভূমিহীন পরিবার

রাণীনগর (নওগাঁ) প্রতিনিধি: নওগাঁর রাণীনগরে খাস পুকুর পাড়ে গড়ে ওঠা বসতি উৎছেদ করে নতুন করে গুচ্ছগ্রাম করার খবরে বাড়ি-ঘর হারানোর আতংকে দিশেহারা হয়ে পড়েছে ৩২ টি ভূমিহীন পরিবার। দুইটি খাস পুকুর পাড়ে প্রায় ২০ বছর ধরে বসবাস করে আসা লোকজন দিশেহারা হয়ে পরলেও কর্তৃপক্ষের দাবি, গুচ্ছগ্রাম নির্মাণ করলেও ওখানে বসবাসরত ভূমিহীনরাই বেশি লাভবান হবেন।
জানা গেছে, উপজেলার বড়গাছা ইউনিয়নের চামটা গ্রামের পার্শ্বে পশ্চিম দিকে হরিতলা পুকুর ও টুনি পুকুর নামক দুইটি পুকুর পাড়ে প্রায় ২০/২৫ বছর আগে প্রায় ৩২ টি পরিবার নিজ উদ্যোগে মাটি দিয়ে একতলা ও দু’তলা বিশিষ্ট ঘর নির্মাণ করে বসবাস করে আসছে। বসবাসের পাশা-পাশি তারা গরু-ছাগল পালন ও বিভিন্ন ফলদ বৃক্ষ রোপণ করে পরিবেশ সম্মতভাবেই বাস করছে। দীর্ঘদিন পর হঠাৎ করেই গত এক সপ্তাহ আগে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার, উপজেলা নির্বাহী অফিসার পুকুর পাড় পরিদর্শন করেন। সেখানে গড়ে ওঠা ঘর-বাড়ী ভেঙ্গে নতুন করে গুচ্ছগ্রাম গড়ে তোলা হবে এমন খবর জানতে পেরে বসবাসরত পরিবারের লোকজন দিশেহারা হয়ে পরেছে। তবে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসলেও এখন পর্যন্ত দখলে থাকা জায়গার বৈধ কোন কাগজ-পত্র করতে পারেনি তারা। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দাবি, ওই দুইটি পুকুরের পাড় দিয়ে মাত্র ৩০/৩২ টি পরিবার বসতি গড়ে সবগুলো জায়গা দখল করে নিয়ে আছে। অথচ সেখানে প্রায় দেড় থেকে দুইশত পরিবার বসবাস করতে পারবে।
এব্যাপারে হরিতলা ও টুনি পুকুর নামক পুকুর পাড়ে বসবাস করা আব্দুল খালেক (৩৫), ঝড়না বিবি (৩৭), সেক্সার হোসেন (৪৮), বুলি বিবি (৪৪) ও উজ্জল হোসেন (৩৮) জানান, নিজেদের কোন জায়গা-জমি না থাকায় ২০ বছর আগে আমরা এখানে মাটি দিয়ে ঘর-বাড়ী নির্মাণ করে বসবাস করে আসছি। আমাদের উৎছেদ করে নতুন করে এখানে গুচ্ছগ্রাম নির্মাণ করলে স্ত্রী-সন্তান, গরু-ছাগল ও হাঁস-মুরগী নিয়ে চরম বিপাকে পরবো। অনেক আগে রোপণকৃত বিভিন্ন জাতের গাছ-পালা কেটে ফেললে আর্থিক ভাবে আমরা বিশাল ক্ষতির মুখে পরতে হবে। তবে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসলেও এখন পর্যন্ত আমাদের দখলে থাকা জায়গার বৈধ কোন কাগজ-পত্র করতে পারেনি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে তারা বসত ভিটা বহাল রেখে তাদের উৎছেদ না করার দাবি জানিয়েছে।
রাণীনগর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার মেহেদি হাসান জানান, উপজেলার চামটা গ্রামের ওই দুইটি পুকুর পাড়ে গুচ্ছগ্রাম নির্মাণ করার জন্য আদর্শগ্রাম প্রকল্প-২ এর আওতায় ৬.৫২ একর জায়গার উপর ৬৮ মেট্রিকটন খাদ্যশস্য দ্বারা অনেক আগেই মাটি কেটে বসবাস উপযোগী করা হয়েছে। এখানে গুচ্ছগ্রাম নির্মাণ করার জন্য উর্দ্ধতন কর্তপক্ষ বরাবর একটি প্রতিবেদন পাঠাবো। এরপর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয় থেকে একটি তদন্ত টিম এসে পরিদর্শন করবেন তার পর সরকারি ছক অনুযায়ী প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। তবে ওই স্থানে মাটির তৈরি ঘর ভেঙ্গে গুচ্ছগ্রাম নির্মাণ করলে সাময়িক ভাবে তারা ক্ষতিগ্রস্থ হলেও নির্মাণ কাজ সম্পূর্ণ হলে ওখানকার বসবাসরত লোকজনদেরকেই বেশি প্রাধান্য দেওয়া হবে।
রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোনিয়া বিনতে তাবিব জানান, আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। ওই স্থানে বসবাসরতদের কোন বৈধ কাগজপত্র নেই। তারা সবাই অবৈধ দখলদার। পাশা-পাশি দুইটি পুকুরের পাড় দিয়ে মাত্র ৩০/৩২ টি পরিবার বসতি গড়ে সবগুলো জায়গা দখল করে নিয়ে আছে। অথচ সেখানে প্রায় দেড় থেকে দুইশত পরিবার বসবাস করতে পারবে। সেখানে গুচ্ছগ্রাম নির্মাণ করলে পাকা বাড়ীর মালিকানা সহ সবাই বৈধ কাগজপত্র এবং অনেক সুযোগ-সুবিধা পাবেন। এতে তারাই বেশি লাভবান হবেন। এমন কথাশুনে বসবাসরত লোকজন খুবই খুশি ও সম্মত ছিলেন। কিন্তু ওই এলাকার একজন ব্যক্তি নিজের স্বার্থ রক্ষার জন্য নানা ভাবে তাদেরকে উস্কানি দিয়ে বিভ্রান্ত করছে।

সর্বশেষ সংবাদ