৭ বছরেও সরকারী তালিকা ভুক্ত হয়নি বদলগাছীর আবু তাসির বে-সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়

আবু সাইদ বদলগাছীঃপ্রতি মানুষের প্রাথমিক শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষা জীবন শুরু হয়। আর এই শিক্ষা ও মনুষ্যত্বের বীজ রোপিত হয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শৈশবে কাটানো দিন থেকেই। বাংলাদেশে এখন প্রায় ৮২,৮৬৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাধ্যমে সরকার শিক্ষা প্রসারের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সরকারি-বে সরকারি সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মূল উদ্দেশ্য দেশে শিক্ষার সম্প্রসারণ করা। শিক্ষার সম্প্রসারণ করলেই শিক্ষিত জাতি গঠন সম্ভব হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো দেশের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্নভাবে গড়ে উঠেছে। যে সকল এলাকায় সরকারি প্রতিষ্ঠান নেই সেখানে গড়ে ওঠেছে ব্যাক্তি ও এলাকাবাসীর প্রচেষ্টায় বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। নওগাঁ জেলার বদলগাছী উপজেলার কোলা ইউপির আদিত্যপুর গ্রামে “আবু তাসির বে-সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়” এমনি একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ২০১০ সালে স্থাপিত এই প্রতিষ্ঠানটি গ্রাম্য দরিদ্র বালক-বালিকাদের মাঝে শিক্ষা প্রসারে কাজ করে চলেছে ৪ জন শিক্ষক। বিদ্যালয়টি স্থাপন ও চালুর অনুমতির জন্য ১৯ জুলাই ২০১১ প্রথমিক শিক্ষ অধিদপ্তরে কাগজপত্রাদি জমা দিয়া হয়। যার স্মারক নং জে প্রশিঅ/ নও/১৪৩৪/৪ তারিখ ৩০/৬/১১ সেই আলোকে ৭ ডিসেম্বর ২০১১ইং তারিখে ৩৫ তম প্রথমিক শিক্ষ অধিদপ্তরে সভায় উপস্থাপিত হয়। আবু তাসির প্রথমিক বিদ্যালয়ের এস এম কর্তৃক ১৫০ টাকা নন-জুডিশিয়াল ষ্টাপে একটি অঙ্গীকার নামা ও স্কুলের ছবি চাওয়া হয়। চাহিদা মোতাবেক জেপ্রশিঅ/নও/২০১২/১০৭২/১ নং স্মারকে ২৫/৪/২০১২ইং তারিখে শিক্ষা অধিদপ্তরে জমা দেওয়া হয়। কিন্ত ৩৬ তম সভার আগেই মাননীয় প্রাধানমন্ত্রী ২৭ মে ২০১২ এর পৃর্বে স্থাপন ও চালুর অনুমতির জন্য জমা কৃত বিদ্যালয়গুলোকে জাতীয় করনের ঘোষনা দেন কিন্ত দুরভাগ্য ক্রমে সেই সময়ে আবু তাসির বিদ্যালয়টি বাদ পড়ে যায়। শিক্ষা অধিদপ্তর সুত্রে জানা যায়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষনা মোতাবেক ৩৫ তম সভায় উপস্থাপিত নওগাঁ জেলার আবু তাসির সহ ৩টি বিদ্যালয়, ৩য় ধাপে ৯৬০টি বিদ্যালয়ের মধ্যে তালিকা ভুক্তি করার জন্য ২৫/২/১৩ ইং তারিখে ২৭নং স্মারকে শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রনালয়ে একটি আদেশ প্রদান করেন। পরবর্তীতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রনালয়ে উপ-সচিব জনাব আবুল কালাম এর স্বাক্ষরিত অফিস আদেশ যাহার স্মারক নং- ৩৮,০০৭,০১৫,০,০০,১৪.০০,২০১৩-৪৯৯ এর আলোকে ওই মন্ত্রনালয়ের প্রকল্প পরিচালক দারিদ্রপীড়িত এলাকায় স্কুলফিড প্রোগ্রাম ডিপিই, বাবুল কুমার সাহা ১৯ জানুয়ারী ২০১৪ইং তারিখে আবু তাসির বে-সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সহ নওগাঁ জেলার ১১টি বিদ্যালয় পরিদর্শন করেন। তার পর সারা বাংলাদেশে ৫৩৩ টি বিদ্যালয় জাতীয় করন করা হয়। ওই সময় অজ্ঞাত কারনে আবু তাসির বিদ্যালয়টি জাতীয় করন থেকে বাদ পরে। পরবর্তীতে গত ২৬/২/২০১৫ইং তারিখে উপ-সচিব মোঃ কেরামত আলী স্বাক্ষরিত যাচাই বাচাই কমিটি কর্তৃক পূন তদন্তের নির্দেশ দেন এবং চিঠির মন্তব্য কলামে উল্লেখ করা হয় আবু তাসির বিদ্যালয়টি তালিকা ভুক্ত নয়। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানান, শিক্ষা অধিদপ্তরের চাহিদা মোতাবেক সকল কাগজপত্রাদি যথা সময়ের মধ্যে উপস্থাপন করা হলে ও তালিকা ভুক্তি না হওয়ার করনটি রহস্যজনক বিধায় বিদ্যালয়টি জাতীয়করন থেকে বাদ পরেন। এলাকায় শিক্ষা সম্প্রসারণের চিন্তা থেকে স্কুলের সভাপতি ফরিদা খানম স্কুল স্থাপনের জন্য ৩৩ শতক জমি প্রদান করেন। সেখানে বর্তমানে সর্ব মোট ১৫৫জন শিক্ষার্থী প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষা গ্রহন করছে। বিনা পারিশ্রমিকে ৭ বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটিতে পাঠ দান চলছে। যারা পাঠদান করছেন তারা হলেন প্রধান শিক্ষক উপজেলার ইসমাইলপুর গ্রামের শামীম হোসেন, সহকারী শিক্ষিকা শারমীন সুলতানা, আদিত্যপুর গ্রামের রহিমা খাতুন (বকুল)ও ভান্ডারপুর গ্রামের চম্পা রানী। সরজমিনে ওই বিদ্যালটিতে যাওয়া হলে এ প্রতিবেদককে জানান, ৭ বছর ধরে তারা বিদ্যালয়টিতে শিক্ষকতা করছেন কিন্তু কোন বেতন ভাতা না থাকায় বা কোন সরকারী সুবিধাদি না পাওয়ায় পরিবার পরিজন নিয়ে অতি কষ্টে জীবন যাপন করছেন।বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামীম হোসেন জানান, ২০১১ ইং সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্টালগ্ন থেকে শিক্ষার্থীরা নিয়মিত শিক্ষা সমাপনীতে অংশগ্রহন করে আসছে এবং পাসের হার শতভাগ। তিনি আর ও জানান, ২০১৪ সালে শিক্ষা সমাপনীতে মোট ১২ শিক্ষার্থি অংশ গ্রহন করেন যার মধ্যে ২ জন জিপিএ-৫ , ২০১৫ সালে মোট ২৫জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহন করে যার মধ্যে ৪ জন জিপিএ-৫, ২০১৬ সালে ২৬ জন শিক্ষার্থী যার মধ্যে জিপিএ-৫ পায় ৪ জন। যা উপজেলার কিছু কিছু সরকারী বিদ্যালয়ে সম্ভব হয়নি। বিদ্যালয়টি টিনের বেড়া টিনের ছাউনির কারনে বর্ষার সময় আকাশে মেঘ দেখা দিলেই স্কুল ছুটি দিতে হয় এবং শীতের সময় কচি কাচা শিক্ষার্থিদের কষ্টের পশা পাশি শিক্ষকদের ও অতি কষ্টে পাঠদান করতে হয়। আদিত্যপুর গ্রামের আবু রায়হান আলম,এরশাদ আলী, আজিজার রহমান, আব্দুল রাজ্জাক, মাসুদ রানা সহ কয়েকজন গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা হলে তারা জানায়,পাড়োরা গ্রামের মৃত আবু তাসির নামে স্কুল নাম করনীয় করার জন্য তার স্ত্রী ফরিদা বেগম অদিত্যপুর গ্রামে ৩৩ শতক জমি ও নগদ ৩ লক্ষ টাকা স্কুলের নামে দান করলে স্থানীয় গ্রামবাসীর উদ্যোগে ঠিনের ছাউনি ও টিনের বেড়া দিয়ে ৪ কক্ষ বিশিষ্ট বিদ্যালয়টি স্থাপন করা হয়। ২০১৩ সালে বিদ্যালয়টিতে স্যানিটারি ল্যাকট্রিন ও টিউবয়েল প্রদান করেন রোটারি ইন্টারন্যাশনাল নামে এক বে-সরকারী প্রতিষ্টান। শিক্ষার্থি অনুযায়ী বিদ্যালয়টিতে শিক্ষকদের নেই তেমন কোন চেয়ার টেবিল ও শিক্ষার্থিদের বসার মতো ব্রেঞ্চ, ব্লাকবোর্ড ও শিক্ষা উপকরণ।
এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সানাউল হাবিব বলেন আবু তাসির প্রাথমিক বিদ্যালয়টি শিক্ষারমান অনুযায়ী জাতীয় করণ করার প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। .
বিদ্যালয়টির শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির প্রবল ইচ্ছা শক্তি এবং সমাজে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেয়ার প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে চলা প্রতিষ্ঠানটিতে সরকারের সু-দৃষ্টি দিয়ে বিদ্যালয়টি সরকারী করন ও প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরন দিয়ে অএ এলাকার শিক্ষার মান উন্নয় ঘটানোর জন্য এলাকাবাসী উর্ধতন কতর্িৃপক্ষের আশু হস্থক্ষেপ কামনা করেছেন।

সর্বশেষ সংবাদ