বদলগাছীর সেই পল্লবের রোগ আরোগ্য যোগ্য নয়–সিভিল সার্জন নওগাঁ

আবু সাইদ বদলগাছীঃবিরোল রোগে আক্রান্ত নওগাঁর বদলগাছীত তিন বছরের শিশু পল্লব চন্দ্র সরদারের রোগ আরোগ্য যোগ্য নয় বলে নওগাঁ সদর হাসপাতাল থেকে রিলিজ করার সিন্ধ্যান্ত নিয়েছে নওগাঁ সিভিল সার্জন ডাঃ রওশন আরা খানম।
বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় পল্লবের সচিত্র রিপোর্ট প্রকাশের পর প্রধান মন্ত্রীর নির্দেশে তাকে বদলগাছী স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সের ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য ও প.প কর্মকর্তা সহ একটি মেডিক্যেল টিম গঠনের মধ্যে দিয়ে রোগ নির্নয় ও উন্নত চিকিৎসার জন্য দ্রুত নওগাঁ সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। প্রায় নওগাঁ হাসপাতালে ১১ দিন চিকিৎসার পর তার তেমন কোন উন্নতি না হওয়ায় অবশেষে বাড়ী পাঠানোর সিন্ধান্ত নিওয়া হয়েছে। গত ৬ আগষ্ট নওগাঁ সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ৯নং বেডে পল্লবকে ভর্তি করা হয়। এর কয়েকদিন পর হাসপাতালের ৩ নম্বর কেবিনে স্থানান্তর করা হয়।

এ বিষয়ে নওগাঁ সিভিল সার্জন ডা. রওশন আরা খানম বলেন, পল্লবকে আমরা ঢাকায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। এরমধ্যে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রফেসর ডা. তুষার সিকদার এর সাথে আমরা পল্লবকে দেখালাম ও তার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো। তিনি আমাদের চিকিৎসার ব্যবস্থ্যাপত্র অনুয়ায়ী বলেন, নওগাঁতে যে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে ঢাকায় নেয়া হলে সেখানেও একই চিকিৎসা দেয়া হবে। এজন্য পল্লবকে আর ঢাকায় নেয়ার প্রয়োজন হচ্ছে না। তবে ঢাকার ওই ডাক্তার আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থাপত্রের সাথে নতুন কিছু ঔষুধ যোগ করেছেন,পল্লব এখন অনেক ভাল আছে। আরো কয়েকদিন হাসপাতালে রাখার পর পল্লবকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হবে।

সিভিল সার্জন ডা. রওশন আরা খানম আরো বলেন, এটি একটি জন্মগত বা জেনেটিক্স সমস্যা। চামড়া বা স্কীনের সমস্যা। বর্তমানে যে ঔষুধ গুলো চলছে সমস্যা কিছুটা কমে যাবে বলে আশা করেন তিনি। তবে একটু সাবধানে থাকতে হবে। চুলকানি ও অসস্থি বোধ থাকতে পারে। কিভাবে গোসল ও কি তেল ব্যবহার করতে হবে সেটা ইতি মধ্যেই পল্লবের মাকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
পল্লব চন্দ্র বদলগাছী উপজেলার মিঠাপুর ইউপির হাকিমপুর গ্রামে আদিবাসী সুরেশ সরদারের ছেলে। পল্লবের বাবা পেশায় একটি বেসরকারি কোম্পানির ক্যাভার্ড ভ্যান চালক। পল্লব জন্মের পর থেকেই গায়ের চামড়া কুচকানো। পা থেকে মাথা পর্যন্ত সমস্ত শরীর চামড়া যেন সাপের চামড়ার মতো দাগ কাটা। এরপর যতোই দিন যায় গায়ের চামড়া শক্ত হয়ে অস্থিরতা বাড়তে থাকে। নির্দিষ্ট সময় পর সাপের মতো গায়ের চামড়া পরিবর্তন হয়ে পাতলা ও প্রতিটি দাগ থেকে রস বের হওয়া। শরীর থেকে প্রচুর তাপ বের হওয়ায় ঠান্ডা পরিবেশে এবং মাঝে মধ্যে নলকুপের ঠান্ডা পানিতে গামছা ভিজিয়ে সমস্ত শরীর মুছে দিতে হয় ও ভেজা গামছা পেচিয়ে রাখলে এতে কিছুটা আরাম বোধ করে। বিভিন্ন ডাক্তার ও কবিরাজী চিকিৎসা দেয়া হলেও অবস্থার কোন উন্নতি হয়নি।

পল্লবের মা প্রার্থনা রানী বলেন যখন সাংবাদিক ভাইয়েরা আমার ছেলের পাশে দাঁড়িয়ে পত্র-পত্রিকায় লেখা লেখি করলেন তখন মানণীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমার কলিজার টুকরা পল্লবের চিকিৎসা দায়িত্ব নিয়েছেন তখন শান্তি পেলাম যে,আমার শন্তান অবশ্যই সুস্থ্য হবেই। এমন আশা নিয়ে হাসপাতালে ছেলেকে নিয়ে আসছিলাম। ভাবলাম এতোদিনে হয়তো সুচিকিৎসার অভাবে ছেলের রোগ আরোগ্য হয়নি। এবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ডাক্তারা নিজেরাই আমার ছেলেকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে আসছে। তখন বিশ্বাস ছিল আমার কলিজার টুকরা পল্লব এবার সুস্থ্য হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আর ১০ টা শিশুর মত আমার ছেলে ও দৌড়া-দৌড়ি ও খেলা ধুলা করতে পারবে। কিন্তু যখন ডাক্তার বাবুরা বললেন এ রোগ ভাল হবার না। তখন আমার মাথায় যেন বজ্রপাত ঘটার সামিল হয়ে গেল।
তিনি আরও দুঃখের কথা বলেন যে, দিন দিন ছেলে বড় হচ্ছে কিন্তু তার সাথে অন্যকেউ মিশতে চায়না। এছাড়া পল্লব রোদ গরম সহ্য করতে পারেনা। তার বাহিরে বা স্কুলে যাওয়ার সুযোগ ও হবেনা। আমি মানণীয় প্রধান মন্ত্রীর আবার ও দৃষ্টি আকর্ষন করছি তার নেতৃত্বে দেশের উন্নয়ন তরান্নিত হচ্ছে এবং আমাদের দেশের ডাক্তার বাবুরা অসাধ্যকে সাধন করছেন তখন নওগাঁ থেকে আমার শন্তানের চিকিৎসা সমাপ্ত না করে অনুগ্রহ করে তার আর ও উন্নত চিকিসার জন্য ঢকায় নিতেন তাহলে আমার বিশ্বাস আমার কলিজার টুকরা পল্লব অবশ্যই সুস্থ্য হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে হতদরিদ্র বাবা-মায়ের আশা পুরুন করতো।

সর্বশেষ সংবাদ