রাণীনগরে জনতার রষানল থেকে শিক্ষিকাকে উদ্ধার

 

রাণীনগর (নওগাঁ) প্রতিনিধি : নওগাঁর রাণীনগরে চকমনু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকাকে স্থানীয় জনতার রষানল থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। স্কুল চলাকালীন সময়ে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সহকারি শিক্ষকের সাথে বাকবিতান্ডা, ধস্তা-ধস্তির এক পর্যায়ে প্রধান শিক্ষিকা তার হাতে কামড় দিলে আতœরক্ষার জন্য সে চিৎকার দেওয়া শুরু করে। শিক্ষকের সাথে নেক্কার জনক আচরণ করার বিষয়টি ছড়িয়ে পড়লে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য সহ গ্রামবাসিরা উপযুক্ত ব্যবস্থার দাবিতে প্রায় ৩ ঘন্টা ধরে তাকে অবরুদ্ধ করে রাখে। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানালে পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশের সহযোগীতায় শিক্ষা অফিসের একাধিক কর্তা ব্যক্তিরা এই প্রধান শিক্ষিকার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা হবে এমন আশ্বাস দেওয়ায় পরিস্থিতি শান্ত হলে ঘটনাস্থল থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়। এব্যাপারে একটি তদন্ত কমিটি গঠন সহ ওই শিক্ষিকাকে তিন দিনের নৈমোত্তিক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। তদন্ত রির্পোটটি হাতে পেলেই উর্ধদ্ধন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তক্রমে তার বিরুদ্ধে উপযুক্ত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার জানান।
জানা গেছে, উপজেলার কাশিমপুর ইউপি’র চকমনু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২০১৫ সালে প্রধান শিক্ষিকা হিসেবে যোগদান করেন স্বপ্না রানী সাহা। তখন থেকেই তার সহকর্মীদের সাথে ছোট-খাট নানা বিষয় নিয়ে দ্বন্দে জরাতো। বিষয় গুলো নিয়ে পর্যায়ক্রমে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হলে ওই প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে রহস্যজনক কারণে শক্ত কোন বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় দিনদিন সে আরো বেপরোয়া হয়ে পড়ে। গত ২৪ এপ্রিল স্কুল চলাকালীন সময়ে ছাত্র-ছাত্রীদের পুরাতন অমূল্য সংরক্ষিত পাঠ্যপুস্তক ম্যানেজিং কমিটি ও সহকারি শিক্ষকদের না জানিয়ে গোপনে বিক্রয় করেছে এমন অভিযোগে অন্যান্য শিক্ষকের সাথে তার ঝগড়া হলে স্বপ্না রাণী সাহা বাহির থেকে বেশ কয়েক জন মাস্তান নিয়ে এসে তার সহকর্মীদেরকে সরাসরি হুমকি প্রদান করে। ঘটনাটি স্থানীয় শিক্ষা অফিস এবং থানা পর্যন্ত গড়ালেও তার বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোন ব্যবস্থা না হওয়ায় বীরদর্পে সহকর্মীদের উপর নানান কায়দায় নির্যাতন ও হয়রানি করে যাচ্ছে স্বপ্না রানী সাহা। অভিযোগের ভিত্তিতে বিভাগীয় তদন্ত সম্পূর্ণ হলেও দায়িদের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। তার অপকর্মের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুললেই নেমে আসে হয়রানি খড়গ। ওই স্কুলের চার জন সহকারি শিক্ষক সহ ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিও তার হয়রানি ও নির্যাতন থেকে রেহাই পাইনি। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে আত্রাই উপজেলার সাহেবগঞ্জ মহল্লার বাসিন্দা হিসেবে ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে ২০১০ সালে নারী কোঠায় চাকুরী নেওয়ার ঘটনা বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও আঞ্চলিক দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয় যা বিভাগীয় তদন্ত চলমান রয়েছে।
এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার দুপুরে স্কুলে হিসাব-নিকাশ চলাকালীন সময়ে স্বপ্না রানীর হাতে লিখিত পুরাতন বই বিক্রয়ের রেজিষ্টার খাতা সহকারি শিক্ষক জেকের আলীর নজরে পড়ে। তাৎক্ষনিক ভাবে বই বিক্রয়ের প্রতিবাদ করলে জেকের আলীর সাথে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে অন্যান্য শিক্ষকদের উপস্থিতিতে ওই রেজিষ্টারের হিসাবের পাতাটি প্রধান শিক্ষিকা ছিড়ে তার হেফাযতে নেওয়ার চেষ্টা করলে তার সহকর্মীরা বাধা দেয়। ধস্তা-ধস্তির এক পর্যায়ে শিক্ষক জেকের আলীর হাতে স্বপ্না রাণী কামড় দিলে তার চিৎকারে গ্রামবাসি স্কুলে এসে নেক্কার জনক ঘটনার বিবরণ যেনে তার কঠোর শাস্তির দাবিতে ওই প্রধান শিক্ষিকাকে ৩ ঘন্টা অবরুদ্ধ করে রাখে। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ ও সহকারি শিক্ষা অফিসাররা গিয়ে স্বপ্না রানীকে উদ্ধার করে।
চকমনু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা স্বপ্না রাণী সাহা জানান, আমি বর্তমানে অসুস্থ্য, এখন কথা বলতে পারবো না বলে এরিয়ে যান।
উপজেলা সহকারি শিক্ষা অফিসার ওহেদুল্লাহ জানান, চকমনু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংরক্ষিত কিছু পুরাতন বই প্রধান শিক্ষিকা স্বপ্না রানী সাহা গোপনে বিক্রয় করে। এমন অভিযোগ নিয়ে বেশকিছু দিন ধরেই শিক্ষকদের মাঝে মনোমালিন্য চলছিল। বুধবার দুপুরে স্কুলের হিসাব-নিকাশ চলাকালীন সময়ে সহকারি শিক্ষক জেকের আলী একটি রেজিষ্টারে প্রধান শিক্ষিকার হাতে লেখা বই বিক্রয়ের হিসাব দেখতে পেয়ে স্বপ্না রাণী সাহার সাথে কথা কাটাকাটি ও ধস্তা-ধস্তির এক পর্যায়ে পাতাটি ছিড়ে ফেলার চেষ্টা করলে জেকের আলী বাধা দেয়। তখন প্রধান শিক্ষিকা রাগান্বিত হয়ে তার হাতে শক্ত করে কামড় দেয়। তার চিৎকারে গ্রামবাসিরা এসে প্রধান শিক্ষিকাকে ৩ ঘন্টা অবরুদ্ধ করে রাখে। খবর পেয়ে আমি রাণীনগর থানাপুলিশের সহযোগীতায় তাকে উদ্ধার করি।

 

সর্বশেষ সংবাদ