উত্তরাঞ্চলে কৃষকদের হলুদ তরমুজ চাষে বাজিমাত 

মোঃ হায়দার আলী  রাজশাহী  থেকে ।। রাজশাহী গোদাগাড়ী উপজেলাসহ উত্তরাঞ্চলে কৃষকগন হলুদ রংয়ের তরমুজ চাষ করে বেশ সাফল্য পেয়েছেন। প্রথমবারের মতো হলুদ রংয়ের তরমুজ চাষ করে তাক  লাগিয়েছেন রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার সোহেল রানা সহ অরো কয়েক যুবক। কীটনাশক ব্যবহার না করায় এটি সম্পূর্ণ বিষমুক্ত তরমুজ।
জানা যায়, এ তরমুজ খেতে সুস্বাদু। বাইরে হলুদ ভেতরে টকটকে লাল। নতুন জাতের ও রংয়ের এ তরমুজ দেখতে উৎসুক লোকজন ভিড় করছেন। এ তরমুজ চাষে অন্যান্য কৃষকদের মধ্যেও আগ্রহ দেখা দিয়েছে।
গোদাগাড়ী উপজেলার  যুবকেরা লেখাপড়া শেষ করে বেকার হয়ে পড়ায় করোনার এমন পরিস্থিতিতে বসে না থেকে কিছু একটা করার চিন্তা করেন। কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে ও উপজেলা কৃষি বিভাগের সহযোগিতায়  জমিতে হলুদ রংয়ের তরমুজ চাষাবাদ শুরু করেন। প্রথম অবস্থায় কিছু পরিমান জমিতে চাষ শুরু করেন তারা । প্রথমবারেই বেশ ফলন হয়েছে। প্রতি বিঘা জমিতে খরচ হয়েছে ১ লাখ টাকা,  জমিতে  ফলন এসেছে তা থেকে ভালো লাভবান হবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উদ্যোক্তা তৈরি করার লক্ষ্যেই ওই বেকার যুবককে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। প্রথমবারের মতো হলুদ রংয়ের তরমুজ চাষাবাদ করে যুবকরা সফলতাও পেয়েছেন। জমিতে কীটনাশক ব্যবহারের পরিবর্তে ফেরোমেন ও ইয়েলো ট্যাপ ব্যবহার করা হয়েছে। এতে পোকা-মাকড় ও রোগ-বালাইয়ের হাত থেকে ফসল রক্ষা পেয়েছে। ফলনও বেশ ভালো হয়েছে। পরিপক্ক প্রতিটি তরমুজ ২-৩ কেজি পর্যন্ত ওজন হয়ে থাকে। এর আগে সবুজ ও ছোপছোপ রংয়ের তরমুজ চাষ হলেও এ উপজেলায় হলুদ রংয়ের তরমুজ চাষ এই প্রথম। এটি গোল্ডেন ক্রাউন জাত হিসেবে পরিচিত। এ বছর উপজেলায় এ জাতের তরমুজ চাষ করা হয়েছে। এটি ৬০-৭০ দিনের ফলন দেয়। এর মধ্যে চাষাবাদ শুরু হয়ে পরিপক্ক হয়ে বিক্রির উপযোগী হয়ে যায়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ শফিকুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে বলেন, দেওপাড়া  ইউনিয়নের যুগিড্যাইং এলাকার কৃষক সোহেল রানা প্রায় ৭ বিঘা জমিতে হলুদ তরমুজ চাষ করেছেন। তিনটি জাত। এগুলো জাপান এবং চীন থেকে আমদানি করা হয়েছে । কৃষি অফিস শুরু থেকেই তাকে সকল ধরনের সহযোগিতা করে আসছে। তিনি প্রতি বিঘা থেকে কমপক্ষে ১ লাখ টাকা লাভ করবেন। মাত্র ৬০ দিন পর ফল ধরে। জাত হলো কালো, মানিক এবং নয়ন। অনেকে সোহেল রানার জমিতে তরমুজ দেখার জন্য ভীড় করছেন। আগামীতে অনেক বেকার যুবক এ জাতের তরমুজ চাষ করবেন বলে তিনি জানান। শিক্ষিত তরুণরা চাষাবাদে এগিয়ে এলে কৃষিখাত আরো সমৃদ্ধ হবে। পাশাপাশি বেকারত্ব থেকে মুক্তি লাভ করে উদ্যোক্তা হবে। এতে ব্যক্তি, সমাজ ও দেশ উপকৃত হবে ।
সোহেল রানার জমিতে গিয়ে দেখা গেছে, জমির চারপাশে জাল দিয়ে বেড়া দেয়া হয়েছে। মাচা পদ্ধতিতে হলুদ রংয়ের তরমুজ চাষ করা হয়েছে। প্রতিটি মাচা জাল দ্বারা আবৃত। প্রতিটি গাছে চার থেকে পাঁচটি করে ঝুলে আছে। একেকটি তরমুজ দুই থেকে তিন কেজি ওজনের মতো হবে।
তরমুজচাষি সোহেল রানা  বলেন, পড়ালেখা শেষ করে বাড়িতেই ছিলাম। বসে না থেকে কিছু একটা করার চিন্তা করি। কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে ৭ বিঘা  জমিতে হলুদ রংয়ের তরমুজ চাষ শুরু করি। এতে প্রথমবারই আমি সফল হই।  আমার সবমিলিয়ে প্রায় ৭ লাখ   টাকা খরচ হয়েছে। যে পরিমাণ ফলন হয়েছে তা বিক্রি করে আমি লাভবান হব বলে আশা করছি। প্রতি মন তরমুজ বিক্রি করা হচ্ছে ২৫শ টাকা  করে।
এদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জে হলুদ রঙের তরমুজ চাষ করাও হয়েছে। গত বছর পরীক্ষামূলকভাবে মাত্র ১৫ কাঠা জমিতে হলুদ তরমুজ চাষ করেছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার গোমস্তাপুর উপজেলার শরিফুল ইসলাম। চায়না জাতের এই তরমুজের বীজ চুয়াডাঙ্গা জেলা থেকে ৮ হাজার টাকায় সংগ্রহ করেন। আর শরিফুলকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ফলন ভালো এবং দাম বেশি পাওয়ায় এবার তিনি মোট ৬ বিঘা জমিতে দু’জাতের তরমুজ চাষ করেছেন। শরিফুল ইসলাম জানান, ২০২০ সালে তিনি প্রথমে নিজের ১৫ কাঠা জমিতে হলুদ তরমুজ চাষ করেন। তাতে মোট খরচ হয় ২৫ হাজার টাকা। সেখান থেকে আয় করেন খরচ বাদে ৭৫ হাজার টাকা। সে তরমুজ বিক্রি শেষে আবারও তিনি ১৫ কাটা জমিতে তরমুজ চাষ করে আয় করেন ৭৫ হাজার টাকার ওপরে।
তিনি আরো জানান, বছরে ৩ বার হলুদ জাতের এই তরমুজ পাওয়া সম্ভব। এ বছর তিনি মোট ৬ বিঘা জমিতে কালো এবং হলুদ তরমুজ চাষ করেছেন। দুদিনে ৭০ হাজার টাকার তরমুজ বিক্রি করেছেন।
তিনি আরও জানান, তিনি তরমুজের পাশাপাশি আট বিঘা জমিতে ধানচাষ করেছেন। ধানের ফলনও ভালো হয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের এই কৃষক সব মিলিয়ে একজন সফল উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন।
অন্য একজন  তরমুজ চাষি মমিন জানান, তিনি মূলত ইটভাটার শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। শ্রমিকের পাশাপাশি তিনি তরমুজ চাষ করছেন।
তিনি জানান, তরমুজে যে পরিমাণ আয় হচ্ছে তাতে অন্যের ইটভাটায় আর শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে হবে না। কারণ হিসেবে তিনি জানান, তরমুজের ক্ষেতে বেশ কিছু শ্রমিক লাগে। সে কাজগুলো নিজে করতে পারলে আয় আরও বেড়ে যাবে।
গোমস্তাপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাসুদ আহমেদ জানান, বরেন্দ্র অঞ্চলে সব ফসল উৎপাদন করা সম্ভব। কৃষকদের এখন হলুদ এবং কালো রংয়ের তরমুজ চাষে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। সময়মতো ক্ষেতে গিয়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছেন।
উত্তরাঞ্চলের কৃষকগণ হলুদ, মানিক ও কাল জাতের তরমুজের চাষ করে বিপ্লব ঘটাতে চাই। ফলে নিজেরা একদিকে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে  অন্য দিকে জাতীয়  অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছেন তারা।

সর্বশেষ সংবাদ