ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতেই মাকে খুন

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া পৌর এলাকার শান্তিনগর গ্রামে বৃদ্ধা জোহারা খাতুন (৭৮) হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। প্রতিপক্ষের সাথে জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে এবং তাদের ফাঁসাতে বৃদ্ধার ছোট ছেলে জমির খাঁ তার মাকে হত্যা করে। পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারের পর জামির খাঁ এ হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছেন। সোমবার (৩ জানুয়ারি) ব্রাহ্মণবাড়িয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জহিরুল ইসলামের আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী প্রদানকালে তিনি এ হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জায়গা জমি নিয়ে গত তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে চলা বিরোধ নিয়ে প্রতিপক্ষকে ফাঁসিয়ে নিজেরা সুবিধা নিতে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়। নিহত জোহরা খাতুন শান্তিনগর গ্রামের মরহুম রশিদ খাঁর স্ত্রী। পুলিশ জানায়, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দা জামিরের ঘর থেকে উদ্ধারের পর সন্দেহ হয় পুলিশের। এরপর তাকে আটক করে পুলিশ। পরে জিজ্ঞাসাবাদ পর্বে পুলিশ। পরিবারের লোকজনদের সামনে মুখোমুখি করার পর জামির খাঁ এই লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেন এবং ঘটনার বর্ণনা দেন। হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে ১৬১ ধারায় জমির খাঁ পুলিশকে জানায়, প্রতিপক্ষ সম্পর্কে তার চাচাদের সাথে জমি নিয়ে বিরোধের জেরধরে প্রতিবেশী চাচাদের সাথে বিরোধে অতিষ্ঠ হয়ে রাগের মাথায় এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। পরে সোমবার (৩ জানুয়ারি) দুপুরে গ্রেপ্তারকৃত জামির খাঁকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জহিরুল ইসলামের আদালতে হাজির করা হয়। এসময় জামির আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী প্রদান কালে হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেন। এর আগে রোববার (২ জানুয়ারি) দুপুরে বৃদ্ধা জোহরা খাতুনকে নিজ বাড়িতে কুপিয়ে হত্যা করাহয়। পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করেন। এ ঘটনায় জামিরের বড়ভাই জাহাঙ্গীর বাদী হয়ে আখাউড়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। রোববার জামির খাঁর পরিবারের লোকজন অভিযোগ করে বলেন, জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে প্রতিবেশী আত্মীয়রা বৃদ্ধা জোহরা খাতুনকে খুন করেন। পরে পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিপক্ষের তিনজনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। পরে রাতে পুলিশ জামিরকে আটক করে। ঘটনা সম্পর্কে ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. শিপন হায়দার জানান, জমি নিয়ে বিরোধে চাচাতো নাতি সহ অন্যরা এ হামলা চালায় বলে পরিবারের লোকজন গতকাল তার কাছে অভিযোগ করেছেন। পরে পুলিশ তিনজনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। পুলিশের একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, ঘটনার পর বিভিন্নভাবে তদন্ত করে পুলিশ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচনে মাঠে নামে। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দা নিহতের বাড়িতে পাওয়া গেলে সন্দেহ পাকাপোক্ত হয় পুলিশের। পরে নিহতের ছেলে জামিরকে আটক করার পর ঘটনার মোড় ভিন্ন দিকে মোড় নেয়। একপর্যায়ে পুলিশ কঠোর হয়। কৌশলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকেন। তাকে পরিবারের লোকজনের সামনে এনে বিভিন্ন বিষয় জানতে চাইলে একপর্যায়ে সে হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেন। জামির পুলিশকে জানায়, জায়গা জমি নিয়ে বিরোধে তারা ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে গেছেন। আদালতের রায় পেলেও তারা ভোগদখল করতে পারছিলেন না। রোববার প্রতিপক্ষ জায়গার সীমানা প্রাচীর ভেঙে বাড়িতে হামলা করলে তাদেরকে ফাঁসানোর জন্য হুট করে রাগের মাথায় মাকে হত্যা করেন। এ ব্যাপারে আখাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মিজানুর রহমান সোমবার বিকেলে জানান, সন্দেহ হলে জামিরকে থানায় আনা হয়। পরবর্তীতে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ১৬১ ধারায় সে হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেন। পরে সোমবার দুপুরে ১৬৪ ধারায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জহিরুল ইসলামের আদালতে হাজির কর হয়। এসময় জামির আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী প্রদান কালে হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেন।

সর্বশেষ সংবাদ