কালীগঞ্জে হঠাৎ করেই রোটা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, চিন্তিত অবিভাবক মহল

স্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহ-হঠাৎ গত দুই দিনে ঝিনাইদহ কালীগঞ্জে ব্যপকভাবে নেমে এসেছে তাপমাত্রা। ফলে হিমশীতল ঠান্ডায় বাড়ি বাড়িতে ছড়িয়ে পড়েছে সর্দি কাঁশি ও জ্বর। আবার এর সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে শিশুদের কোল্ড ডায়রিয়া বা রোটা ভাইরাস। বড়রা অসুস্থতা কাটিয়ে উঠতে পারলেও রোটা ভাইরাসে আক্রান্ত শিশুদের ঘনঘন পানির মত পাতলা পায়খানা ও কারও কারও বমি দেখা দিচ্ছে। যে কারনে আক্রান্ত শিশুরা অল্প সময়ের ব্যবধানে অধিকমাত্রায় দূর্বল হয়ে পড়ছে। রোটা ভাইরাসে আক্রান্ত গত এক সপ্তাহে ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে ৪১ টি শিশু। তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় গত দুই দিনে রোটা ভাইরাসের আক্রান্ত শিশু ভর্তি আরও বেড়েছে। এমন অবস্থায় হাসপাতালের চিকিৎসকেরা বলছেন ভয়ের কিছু নেই, এটা পানিবাহিত রোগ। আক্রান্ত শিশুদের প্রচুর পরিমানে বিশুদ্ধ পানি ও খাবার স্যালাইন খাওয়ালে সুস্থ হয়ে যাচ্ছে। কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসূত্রে জানাগেছে, গত এক সপ্তাহে মোট ৪১ টি রোটা ভাইরাসে আক্রান্ত শিশু হাসপাতালটিতে ভর্তি হয়েছে। হাড় কাপুনে হিমশীতল ঠান্ডা আবহাওয়ায় এমনটি হচ্ছে। হাসপাতালসূত্রে জানাগেছে, প্রচন্ড ঠান্ডায় আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। প্রতিবছর শীত মৌসুমে এ রোগের প্রকোপ বাড়ে। কিন্ত এ বছর আক্রান্তদের সংখ্যা বেশি। এর লক্ষণ হিসেবে পানির মত পাতলা পায়খানার সঙ্গে কখনও কখনও বমি,সর্দি কাঁশি ও কিছু কিছু ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্ট থাকে। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ব্যবস্থা নিলেই আক্রান্তরা তাড়াতাড়িই সুস্থ হয়ে ওঠে।

উপজেলার চাপরাইল গ্রামের ১৭ মাসের শিশু লাবিবের মা নাছিমা খাতুন জানান, লাবিব গত ২ দিন আগে হঠাৎ পানির মত পাতলা পায়খানা করছিল। অবস্থা খারাপ দেখে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্ত তার পায়খানায় কমছেই না। ঘনঘন বমির সঙ্গে ও পাতলা পায়খানা হওয়ায় সে দূর্বল হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, সারাদেশে নতুন করে একদিকে করোনার প্রকোপ বাড়ছে। অন্যদিকে পাল্লা দিচ্ছে শিশুদের রোটা ভাইরাস। তবে করোনা সংক্রমনের এমন উবর্ধগতির সময়ে ভুক্তভোগী অভিভাবকেরা করোনা সংক্রমনের কথা মাথায় নিয়ে ডাক্তার- হাসপাতাল করতে এক ধরনের শঙ্কার মধ্যে পড়ছেন। তবে শিশু সন্তানদের কথা চিন্তা করে ঝুঁকি নিতে তারা বাধ্য হচ্ছেন। হাসপাতালে ভর্তি দেড় বছরের ফাতেমার মা ভিটশ্বর গ্রামের রিয়া খাতুন জানান, তার মেয়ে গতকাল থেকে পাতলা পায়খানা করছে। সঙ্গে ঘনঘন বমি হচ্ছে। আজ কিছুটা কমলেও তার সম্পর্ণভাবে সুস্থ হতে এখনও সময় লাগবে।

উপজেলার আলাইপুর গ্রামের মৌমিতা দাসের মা মিতু দাস জানান, গত একদিন আগে আমার শিশু সন্তান মৌমিতার প্রচন্ড জ্বর এসেছিল। ওই রাতেই দেখা দিল ঘনঘন বমি ও পায়খানা। যখন সে নিস্তেজ হয়ে পড়লো ওই রাতেই তাকে দ্রুত হাসপাতালে এনে ভর্তি করা হয়। এখন সে কিছুটা ভালো। রঘুনাথপুর গ্রামের উজ্জল হোসেন জানান, তার শিশু কন্যা ফাতেমা গত তিনদিন আগে ডাইরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে নিস্তেজ হয়ে গিয়েছিল। পরে তড়িঘড়ি হাসপাতালে এনে ভর্তি করেছি। এখনও পুরোপুরি সুস্থ হয়নি। চিকিৎসক বলেছেন আরও দুই একদিন হাসপাতালে থাকতে হবে। আক্রান্ত এক শিশুর মা মনিরা বেগম জানান, বর্তমান সময়ে হাসপাতালে রোটা ভাইরাসে আক্রান্ত শিশুদের সংখ্যায় বেশি। হাসপাতালে আলাদা ডায়রিয়া ওয়ার্ড থাকলেও শয্যা সংখ্যা অনেক কম। আবার জেনারেল ওয়ার্ডেও বেড খালি নেই। ফলে বাধ্য হয়ে ঠান্ডা ফোরে বিছানা পেতে আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসা করাচ্ছেন। আবার শিশুদের জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। এমন দৈন্যতার মধ্যে শিশুদের সব রোগের চিকিৎসা চলছে। এই অভিভাবকের দাবি শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এ হাসপাতালে দীর্ঘদিন নেই। শিশুদেও জটিল কিছু হলে কমপক্ষে ২০ কিলোমিটার দুরে ঝিনাইদহ যশোরে নিয়ে গিয়ে শিশুদের চিকিৎসা করাতে হয়। যা অনেক ব্যয়বহুল ও সময় সাপেক্ষ ব্যাপার।

কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডঃ মাজাহারুল ইসলাম জানান, শীতের সময়ে সাধারনত সব বয়সী মানুষের ঠান্ডাজনিত রোগব্যাধি বেশি দেখা যায়। তবে আক্রান্তদের মধ্যে বেশি থাকে বয়ষ্ক ও শিশুরা। শিশুদের খাবারসহ ঠান্ডা স্যাতসাঁতে পরিবেশে থাকলে রোটা ভাইরাস জেকে বসে। গত সাত দিনে হাসপাতালে মোট ৪১ টি শিশু রোটা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছে। আবার নতুন করে কিছু যোগ হচ্ছে। কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কর্মকর্তা ডাঃ আলমগীর হোসেন জানান, ঋতুর সাথে আবহাওয়া পরিবর্তনের কারনে কোন কোন সময়ে কিছু রোগব্যাধির প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। যেমন হাড়কাঁপুনী শীত আসলে শিশুরা নিউমোনিয়া, ঠান্ডা, কাঁশি জ্বরে আক্রান্ত হয়ে থাকে। আবার কয়েকদিন পরে তা স্বাভাবিক পর্যায়ে চলে আসে। তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি সময়ে শিশুরা রোটা ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে। তবে গত দুই দিন আক্রান্তের সংখ্যা কিছুটা কম ছিল। আবার আজকে নতুন করে ১১ টি শিশু রোটা ভাইরাসে আক্রান্ত হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। রোটা ভাইরাসে আক্রান্ত শিশুরা কয়েক দিনের চিকিৎসায় সুস্থও হয়ে উঠে। ফলে ভয়ের কিছু নেই।

 

সর্বশেষ সংবাদ