শাজাহানপুরে গবাদি পশুর নকল ওষুধ কারখানার বিরুদ্ধে মামলার প্রক্রিয়া

সজিবুল আলম সজিব শাজাহানপুর(বগুড়া)প্রতিনিধি:বগুড়ার শাজাহানপুরে প্যারাভেট ফার্মা নামের গবাদি পশুর এক নকল ওষুধ কারখানায় জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযানের পর মামলার আলামত হিসেবে মালামাল জব্দ করেছে থানা পুলিশ। এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। আজ সোমবার দুপুরে নকল ওষূধ কারখানা থেকে উপজেলা প্রাণি সম্পদ অফিসের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে মালামাল জব্দ করা হয়। তবে অজ্ঞাত কারণে ওষূধ তৈরির মূল উপাদান কেমিক্যাল জব্দ করা হয়নি।
জানা গেছে, উপজেলার আশেকপুর ইউনিয়নের জোড়া পোদ্দান পাড়া গ্রামের জনৈক নুর মোহাম্মাদ আলীর বাসা ভাড়া নিয়ে দীর্ঘ আড়াই বছর ধরে আশেকপুর হিন্দুপাড়া গ্রামের গৌতম চন্দ্র মোদক প্যারাভেট ফার্মা নামের গবাদি পশুর নকল এক ওষূধ কারখানা চালিয়ে আসছিলেন। আইন শৃংখলা বাহিনীর গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআইয়ের গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত রবিবার দুপুরে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সহকারী কমিশনার রুপম দাসের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমান আদালতের একটি টিম ওই কারখানায় অভিযান চালায়। অভিযানের খবর পেয়ে কারখানার লোকজন পালিয়ে যায়। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অনুমোদনহীন কারখানার বিপুল পরিমাণ নকল ওষূধ ও ওষুধ তৈরির মূল উপাদান কেমিক্যাল ও সরঞ্জামাদি জব্দ করে উপজেলা প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরকে মামলা করার নির্দেশ দেন। তারই ধারাবাহিকতায় মামলার আলামত হিসেবে আজ দুপুরে থানা পুলিশ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের জব্দকৃত মালামাল গুলো মামলার আলামত হিসেবে জব্দ করেছে। তবে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের জব্দকৃত মালামালের মধ্যে কয়েক লক্ষ টাকা মূল্যের কেমিক্যাল জব্দ করা হয়নি। কারখানায় থাকা ৪ড্রাম কেমিক্যাল মৌখিক ভাবে স্থানীয় ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলামের জিম্মায় রেখে থানা পুলিশের পক্ষ থেকে ওই বাসার মূল গেলে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। মালামাল জব্দকালে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা হোসেন মোহাম্মাদ রাকিবুর রহমান, থানার ওসি(তদন্ত) আব্দুর রউফ, উপ-পরিদর্শক গোলাম রসুল খান।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, উপজেলা প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরকে ম্যানেজ করেই দীর্ঘ আড়াই বছর ধরে চলে আসছে প্যারাভেট ফার্মা নামের গবাদি পশুর নকল ওষুধ কারখানাটি। প্যারাভেট ফার্মার ওষুধ বিক্রির রেজিষ্টারে উপজেলা প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের আশেকপুর ইউনিয়নের এ আই টেকনিশিয়ান(কৃত্তিম প্রজনন কর্মী) ও বগুড়া জেলা পল্লী প্রাণী চিকিৎসক সমিতির সাবেক সভাপতি বোরহান উদ্দিনের লেনদেন দেখা গেছে। কৃত্তিম প্রজনন কর্মী ও প্রাণী পল্লী চিকিৎসক নেতা বোরহান উদ্দিনের মাধ্যমেই উপজেলা প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরকে ম্যানেজ প্রক্রিয়ায় আনা হয়েছে। এছাড়া কারখানার মালিক গৌতম চন্দ্র মোদক বগুড়া জেলা পল্লী প্রাণী চিকিৎসক সমিতির সভাপতি আনন্দ চন্দ্র মোদকের চাচাতো ভাই। এ সুবাদে জেলা পল্লী প্রাণী চিকিৎসক সমিতির সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাজারে নকল ওষুধ ছড়িয়ে দেওয়া দিয়ে আড়াই বছরে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি। বগুড়া জেলাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় এ ওষুধের ব্যাপক বাজারজাত রয়েছে। উপজেলা প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরের কৃত্তিম প্রজনন কর্মী ও প্রাণী পল্লী চিকিৎসক নেতা বোরহান উদ্দিন মুঠোফোনে জানান, নকল ওষূধ কারখানার তথ্য সাবেক প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা নারগিছ খানম জানতেন। তবে বর্তমানে নতুন যোগদান করা কর্মকর্তা জানেন কিনা তিনি তা বলতে পারেন না। তার মাধ্যমে প্রাণী সম্পদ অফিসকে ম্যানেজ করা হয়নি বলে তিনি জানান। পাশাপাশি প্যারাভেট ফার্মা থেকে ওষুধ নেওয়ার কথাও তিনি অস্বীকার করেন। উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা হোসেন মোহাম্মাদ রাকিবুর রহমান বলেন, তিনি দেড় মাস পূর্বে এ উপজেলায় যোগদান করেছেন। নকল কারখানার বিষয়টি তার জানা ছিল না। তবে ম্যানেজ প্রক্রিয়ার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন। থানার ওসি(তদন্ত) আব্দুর রউফ জানান, ভ্রাম্যমান আদালতের জব্দকৃত মালামাল গুলো মামলার আলামত হিসেবে জব্দ করা হয়েছে। ড্রামে থাকা কেমিক্যাল সম্পর্কে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আপাতত স্থানীয় ইউপি সদস্যের জিম্মায় রাখা হয়েছে। উপজেলা প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর কর্তৃক বাদী হয়ে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।

সর্বশেষ সংবাদ