তানোরে জমির দখল নিতে পিটিয়ে হত্যা

তানোর প্রতিনিধি: রাজশাহীর তানোরে জমির দখল নিতে ফিল্মি স্টাইলে মুল মালিক আলহাজ্ব আব্দুল ওহাবকে পিটিয়ে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষরা বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। রামেক হাসপাতালে চিকিৎসা ধীন অবস্থায় ঈদুল আযহার দিনে মারা যান আলহাজ্ব আব্দুল ওহাব এবং ওইদিন দিবাগত রাত ৮ টার দিকে ময়নাতদন্ত করে জানাযার নামাজ শেষে পারিবারিক কবর স্হানে দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন তার ভাতিজা মোশাররফ হোসেন। তিনি আবেগ আপ্লূত হয়ে বলেন মুসলমানদের জন্য দুটি উৎসব। তার মধ্যে ঈদুল আযহা একটি। মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য পশু কোরবানির মাধ্যমে উৎযাপন হয়ে থাকে। কিন্তু ঈদের দিনে আমাদের পরিবারে শুধুই শোক বেদনা আর আহাজারি ছাড়া কিছুই ছিল না। আমরা ঈদের দিন কোরবানি পর্যন্ত দিতে পারিনি এবং খাবার খেতে হয়েছে থানায়। ঈদের পরের দিন দেওয়া হয়েছে কোরবানি। গত মাসের ১৯ জুন সকাল সাড়ে সাতটার দিকে ঘটে মারপিটের ঘটনাটি। এঘটনায় উভয়ের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। যে কোন মুহুর্তে ঘটতে পারে রক্তক্ষয়ীর মত সংঘর্ষ। তবে প্রয়াত ওহাবের পরিবারে বইছে শোক আর আহাজারি। জানা গেছে, চলতি বছরের জুন মাসের ১৯ তারিখে উপজেলার পাঁচন্দর ইউপির কৃষ্ণপুর মৌজার অন্তর্ভুক্ত আরএস ৩০৪ নম্বর খতিয়ানে ১৩৮৭ আরএস দাগে পুনে ৫ বিঘা জমিতে সকাল সাড়ে সাতটার দিকে চাষ করতে যান ওহাব। তাকে দেখে প্রতিপক্ষ কৃষ্ণপুর গ্রামের আব্দুল হান্নান ওরফে হারানার পুত্র সাজু, গনি ও মহিবুল, সাজুর ছেলে আরিফ, মহিবুলের ছেলে হেলাল মৃত আবুল হোসেন ওরফে আবুর পুত্র আজাদ, আজিবুর দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে পুর্ব পরিকল্পিত ভাবে অতর্কিত হামলা চালিয়ে আব্দুল ওহাব কে মারাত্মক আঘাত করলে অচেতন অবস্থায় মাটিতে নুয়ে পড়েন । এঅবস্হায় ওহাবের ভাই ও ভাতিজারা রক্তাক্ত ও জ্ঞান শুন্য অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে অবস্থা বেগতিক দেখে কর্তব্যরত চিকিৎসক রামেক হাসপাতালে রেফার্ড করেন। রামেকে চিকিৎসা ধীন অবস্থায় ঈদের দিনে আলহাজ্ব আব্দুল ওহাব মারা যান। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার কৃষ্ণপুর গ্রামের পুর্ব দিকে নিমকুড়ি নামক জায়গায় ৯৯ বছরের জন্য লীজ নেন কৃষ্ণপুর গ্রামের আমজাদ। তিনি মারা গেলে তার পুত্র আলহাজ্ব আব্দুল ওহাব দিগর নামে চেক কাটা হয়। গ্রামের একাধিক বাসিন্দারা জানান, যারা ওহাবকে পিটিয়ে হত্যা করেছে তারা ওদের বাড়িতে কাজ করত। আর তাদের অন্যদাতাদের পিটিয়ে মেরে ফেললো এর চেয়ে দুঃখ জনক ঘটনা আর কি হতে পারে। মানুষের বিবেক বলতে কিছুই নেই। আমরা যুগযুগ ধরে দেখে আসছি জমিগুলো ওহাবরা শান্তিপূর্ণ ভাবে চাষাবাদ করে আসছেন । মরহুম ওহাবের ভাই আব্দুল্লাহ হিল কাফি জানান জমি নিয়ে আদালতে ১৯৮০ সালে মামলা দায়ের করা আছে। যার মামলা নম্বর ৩১১/৮০। এমনকি ভুমি অফিসে একাধিকবার বসা হয়েছে তারা কোন কাগজপত্র দেখাতে পারেন নি। শুধু তাই না ভুমি অফিস থেকে যারাই এসেছে জমিতে তাদের কে অপদস্থ করেন হত্যা কারিরা। হারানাদের নামে নাকি ১৯২২ সালের রেকর্ড আছে। কিন্তু ৬২ ও ৭২ সালের কোন রেকর্ড নেই। শুধু ক্ষমতা সীন দলের এক প্রভাবশালী নেতার ইন্ধনে আমার বড় ভাইকে হত্যা করেছে। প্রয়াত আব্দুল ওহাবের ভাতিজা পাঁচন্দর ইউপির যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন জানান, আমি ভাবতেই পারছিনা যে যারা আমাদের পরিবারে কাজ করল তারাই আমার চাচাকে হত্যা করল। এর চেয়ে দুঃখের বিষয় আর কি হতে পারে। তারা জমির কোন কাগজপত্র না দেখিয়ে হাসুয়া, ফালা, বল্লম ও লাঠি সোটা নিয়ে অতর্কিত হামলা করে আমার সহজ সরল চাচাকে মেরে ফেললো। নিম কুড়ি নামক জায়গায় আমাদের পাঁচ বিঘা এবং লিজ নেওয়া আছে পুনে পাঁচ বিঘা জমি। লীজ নেওয়া জমিতে কয়েক বছর আগে ৬০/৭০ টির মত ঘর তৈরি করেছিল। ভুমি প্রশাসন উচ্ছেদ করেছে । তাদের উচ্ছেদ করল ভুমি প্রশাসন আর তারা এসে দাবি করছে আমাদের জমি। তারা কাগজ নিয়ে এসে জমি নিক। কিন্তু আমার চাচাকে আর ফেরত পাব না। থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি কামরুজ্জামান মিয়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, যিনি মারা গেছেন তিনি আগের এক মামলার বাদি ছিলেন, তার লাশ ময়না তদন্ত করা হয়েছে। তবে এখনো কোন হত্যা মামলা হয়নি বলে জানান তিনি।

সর্বশেষ সংবাদ