ভারী বর্ষণে চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় জনজীবনে চরম বিপর্যয়

রাউজান সংবাদদাতা : অবিরাম বর্ষণে চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকার মত রাউজানের জনজীবনে চরম বিপর্যয় নেমে এসেছে। পাহাড়ী ঢল আর জোয়ারের পানিতে বিল-ঝিল, রাস্তা-ঘাট ডুবে বন্যার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। ১৪টি ইউনিয়ন ও একটি পৌর এলাকার হাজার হাজার মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা, বৈদ্যুতিক সংযোগ। বন্ধ রয়েছে দোকানপাট, মিলছে না হাটবাজার, থমকে আছে ব্যবসা বাণিজ্য। ভেঙ্গে পড়েছে ঘর-বাড়ি, ডুবে গেছে মৎস খামার, ভেসে গেল লক্ষ লক্ষ টাকার মাছ। তাই মৎস চাষীদের মাথায় পড়েছে বাঁজ। ঈদের দিন থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি পড়লেও গত বৃহস্পতিবার থেকে টানা বর্ষণে রাউজানের নিম্মাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি সড়কের রাউজান জলিল নগর, মুন্সিরঘাটা, বেরুলিয়া, ধায়েরঘাটা ও পৌরসভা এলাকার থানা রোড হাঁটু থেকে কোমর পানিতে তলিয়ে গেছে। সড়ক পথে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। পৌর সদরের শাহনগর, ছত্তর পাড়া, উপজেলার ডাবুয়া, চিকদাইর,রাউজান কদলপুর, পূর্বগুজরা, পশ্চিম গুজরা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের রাস্তাঘাট ডুবে গেছে। নোয়াপাড়া-রাউজান সড়ক ও পাহাড়তলী হাফেজ বজলুর রহমান সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। কামরুল নামের এক সিএনজি অটো-রিক্সা চালক জানান, গত দুই দিন মালিকের ভাড়াটাও আয় করতে পারি নি। রাস্তায় মানুষের তেমন চলাচল নেই। তাছাড়া রাস্তার মাঝে মাঝে হাটু সমান পানি থাকায় গাড়ি বন্ধ হয়ে যায়। এভাবে আরো কয়েক বৃষ্টি পড়তে থাকলে পরিবারে খাবার যোগাড় করতে অনেক কষ্ট হবে। রাউজানের রাস্তার ধারে বিভিন্ন হাট-বাজার, দোকান-পাট ও জংশনে পানি নিঃষ্কাশনের জন্য যে সকল নালা রয়েছে সেগুলো দোকান-পাট ও বাজারের আবর্জনায় ভরে থাকার ফলে রাস্তায় পানি জমে কর্দমাক্ত হয়ে উঠেছে। সে সকল স্থানে পায়ে হেটে চলা খুবই কষ্টসাধ্য। এদিকে রবিবার সর্তা খালের প্রবল স্রোতে উত্তর হলদিয়া চাদ তেলির বাড়ী পাশে ১১ হাজার লাইনের পল্লি বিদ্যুতের খুটি ও তার পানিতে তলিয়ে গেছে। খুটিসহ তার পানিতে পড়ে যাওয়ায় সে এলাকার প্রায় ৩০০ পরিবার বিদ্যুৎ হীন হয়ে পড়েছে। চিকদাইরে অসংখ্য মাটির ঘর বাড়ী ভেঙ্গে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। পৌরসদরের বাসিন্দা নুরুল আবছার জানিয়েছে সর্তা, ডাবুয়া কাশখালী ও রাউজান হয়ে তীব্র বেগে পাহাড়ী পানি নামতে থাকায় খাল গুলোর বিভিন্ন অংশের পাড় ভেঙ্গে অনেক গ্রামে পানি প্রবেশ করেছে। তীব্র বেগে ছুটে আসা খালে পানির চাপে এলাকার কাঁচা রাস্তা ভেঙ্গে গেছে। মাছ চাষের পুকুর ডুবে ভাসিয়ে গেছে মাছ।
মধ্যপ্রাচ্যের ভিসা বন্ধ থাকার ফলে প্রবাসী অধ্যুষিত এলাকা রাউজানের শত শত যুবক বেকারত্ব মোচনের তাগিদে নতুন জীবনের স্বপ্ন বুনে ব্যাংক ঋণ, ধার-দেনা ও নিজেদের জমানো পুজিঁ নিয়ে মৎস চাষে বিনিয়োগ করে। এছাড়াও অধিক মুজুরি ও ধান চাষের অন্যান্য উপকরণ সাশ্রয়ী ও সহজ লভ্য না হওয়ায় অনেক ধান চাষী মৎস চাষে ঝুঁকে পড়ে। তাই বিগত কয়েক বছরে রাউজানের বিভিন্ন এলাকায় একক বা যৌথভাবে সহস্রাধিক মৎস প্রকল্প গড়ে উঠেছে। টানা বর্ষণের ফলে জোয়ারের পানি আর পাহাড়ি ঢলে এসব মৎস প্রকল্পের অধিকাংশ পানিতে তালিয়ে যায় এবং পাহাড়ি অঞ্চলের অনেক গুলো প্রকল্পের বাঁধ ভেঙ্গে যায়। পানিতে ভেসে যায় লক্ষ লক্ষ টাকার মাছ। সেই সাথে ভেসে যায় শত শত মৎস খামারীর স্বপ্ন। সরেজমিন দেখা যায়, প্রকল্প গুলোর আশে-পাশের এলাকার কিশোর-কিশোরী থেকে শুরু করে বৃদ্ধরা মাছ ধরার মহা উৎসবে মেতে উঠেছে। মৎস চাষীরা অসহায় দৃষ্টিতে তা অবলোকন করছে।
রাউজানের মগদাই, বিনাজুর, উরকিরচর, গশ্চি, পশ্চি গুজরা’র মৎস খামারীরা জানিয়েছে পূর্বের প্রস্তিুতি না থাকার কারনে তাদের লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিয়োগ জলে ভেসে গেছে। মগদাই চাঁদের দিঘি মৎস্য সমিতির সদস্য প্রকৌশলী আনোয়ারুল আজিম জানিয়েছেন, তাদের ৪ লক্ষ টাকার বিনিয়োগ রক্ষা করতে হিমসিম পোহাতে হচ্ছে। মগদাই এলাকায় প্রায় ২০টির মত পুকুর থেকে মাছ বের হয়ে খালে বিলে চলে গেছে। বৃষ্টি থেমে গেলে জনজীবনে আবার স্বাভাবিক প্রাণ চঞ্চলতা ফিরে আসবে। আমরা নিজেরা যদি একটু সচেতন হয় এবং একে অপরের সহযোগীতায় এগিয়ে যায় এসব প্রাকৃতিক দূর্যোগের বেশ কিছু ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব বলে মনে করেন রাউজান কবি নজরুল সাহিত্য পরিষদের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম। তিনি আরো বলেন, এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী এমপি’র দক্ষ নেতৃত্বে ও পর্যবেক্ষণে এই দূর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি গুলো দ্রæত কাটিয়ে উঠবে।

সর্বশেষ সংবাদ