বগুড়ায় বিদ্যুত বিভাগের কোটি টাকার অনিয়ম-দূর্নীতি ধামাচাপা ও প্রকৌশলীকে বাঁচানোর চেষ্টা

বগুড়া অফিস-বগুড়ায় বিদ্যুত বিভাগের প্রায় ১ কোটি টাকার অনিয়ম -দূর্নীতি ধামা চাপা ও অভিযুক্ত প্রকৌশলীক বাঁচানোর চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অনিয়ম তদন্তে গঠিত একাধিক কমিটির কোন প্রতিবেদন আজও আলোর মুখ দেখেনি। ফলে অভিযুক্ত সহকারী প্রকৌশলী বহাল তবিয়তে চাকুরী করছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো ) এর আওতাধীন নেসকো লিমিটেড বগুড়া বিক্রয় ও বিতরন বিভাগ-৩ এর তৎকালীন সহকারী প্রকৌশলী মোঃ তানভির আলম সম্প্রতি বগুড়া সদরের এরুলিয়া ও কারবালা ফিডার এর বিভিন্ন শিল্প কারখানার ডিজিটাল মিটার পরিবর্তন ও স্মার্ট প্রিপেইড মিটার বহিরাগত লোক দিয়ে গ্রাহকের বাড়ীর আঙ্গিনায় প্রতিস্থাপন করেন। কিন্তু পূর্বের ডিজিটাল মিটারগুলো ষ্টোর কিপার বা অফিসে জমা দেননি। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, উক্ত শিল্প কারখানার পুরাতন মিটার রিডিং জমা ছিল। গ্রাহকের সাথে আর্থিক লেনদেনের কারনে মিটারগুলি অফিসে জমা দেননি। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে কিছু মিটার গরম পানিতে ভিজানোর পর প্রকৌশলী তানভির রিডিং নেন যেন সঠিকভাবে রিডিং দেখা না যায়। কিছু মিটার তড়িঘড়ি করে অফিসে জমা দেয়ার পরেও ৩০টি শিল্পকারখানার মিটার অফিসে জমা দেননি। এ বিষযটি নেসকো উর্দ্ধতন কর্তপক্ষের দৃষ্টি গোচর হলে তাকে বগুড়া বিভাগ-৩ থেকে রাজশাহী বিভাগ-১ এ বদলী করা হয়। এরপর নিখোঁজ মিটার পুনরুদ্ধারের জন্য বিভিন্ন সময় তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও কোন কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
সূত্র জানায়, গত ৩০ মে ’২২ নেসকো বগুড়া বিক্রয় ও বিতরন বিভাগ-৩ এর কাহালু উপজেলার মুরইল এলাকার গ্রাহক শেখ সাজ্জাদ হোসেনের মিটারটি ( গ্রাহক নং ৮৩০৪২৪০৭ , মিটার নং ৫১৫২৩২৩) ক্রটিযুক্ত হওয়ার কারনে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির আহবায়ক রেভিনিউ অ্যাসুরেন্স নেসকো লিমিটেড এর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী একেএম মোর্শেদুল আলম ও সদস্য সচিব নিযুক্ত করা হয় অভিযুক্ত সহকারী প্রকৌশলী তানভির আলমকে। বগুড়া বিক্রয় ও বিতরন বিভাগ-৩ এর নির্বাহী প্রকৌশলী উক্ত কমিটি গঠন করে দিলেও আজ পর্যন্ত সেই কমিটির প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখেনি। সরেজমিনে দেখা গেছে, উক্ত গ্রাহকের শিল্প কারখানায় চানাচুর , চিপস ও জুস উৎপাদন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। দীর্ঘ ৭ বছর যাবৎ উক্ত গ্রাহকের রিডিং নিতেন বদলীকৃত সহকারী প্রকৌশলী তানভির আলম । এরপর একটি মিটার দিয়ে অফিস থেকে পরীক্ষামূলক সংযোগ দেয়া হয়। কিন্তু কিছু দিন পরে মিটারটি পুড়ে ফেলা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। পরে আবারও একটি মিটার খুঁটিতে লাগানো হয় । সেই মিটার থেকে বিদ্যুত ব্যবহার কম করলেও ৩ মাসে আনুমানিক ৮০ হাজার ইউনিট ব্যবহৃত হয় । অথচ পূর্বে বন্ধ দেখিয়ে বিল করা হয়েছে। তাই একটি উচ্চতর তদন্ত কমিটি গঠন করে উক্ত গ্রাহকের মিটার পরীক্ষা করলে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা বিল হবে। কিন্তু তদন্ত কমিটি এখনও পর্যন্ত কোন রিপোর্ট জমা দেয়নি বলে জানা গেছে । ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চলছে।
এ দিকে নেসকোর ২১টি মিটার অভিযুক্ত তানভির আলম নিজ হেফাজতে রেখে রাজশাহীতে যোগদান করেন। উক্ত ২১টি মিটার পৃনরুদ্ধারের জন্য গত ২১ আগষ্ট’২২ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটি উচ্চতর কমিটি গঠনের সুপারিশ করে একটি রিপোর্ট জমা দিয়েছে। কিন্তু আজও কোন মিটার জমা হয়নি। উক্ত মিটারগুলি উদ্ধার হলে প্রায় ১ কোটি টাকা আত্নসাতের ঘটনা উদঘাটন হবে। এ ছাড়া আরো ৬টি থ্রি ফেজ মিটারে অনিয়মের কারনে তাকে (তনভির আলম) না ধরে ওই বিভাগের রবিউল হাসান নামের একজন সাহায্যকারীর নিকট গত ৮ অক্টোবর কৈফিয়ত তলব করেছে কর্তৃপক্ষ। এ প্রেক্ষিতে উক্ত রবিউল গত ১৩ অক্টোবর তার জবাবে লিখেছেন, উক্ত ৬টি মিটার অভিযুক্ত তানভির আলমের নিকট রয়েছে। এত অনিয়ম দূর্নীতির পরেও তানভির আলমকে কিভাবে রাজশাহীতে যোগদানের ছাড়পত্র দেয়া হলো তা নিয়ে ওই বিভাগেই প্রশ্ন উঠেছে।
গত ২১ আগষ্ট ২১টি মিটার রিডিং সংগ্রহ সংক্রান্ত গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব নেসকো লিমিটেড বগুড়া বিক্রয় ও বিতরন বিভাগ-৩ এর সহকারী প্রকৌশলী মোঃ আব্দুর রউফ মিয়া বলেন, এটা অফিসিয়াল ব্যাপার। এ ব্যাপারে আমি কিছু বলবো না। তিনি আরো বলেন, কোন তদন্ত কমিটি হলে তার রিপোর্ট দিতে হয়। এ ছাড়া তদন্ত রিপোর্ট সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
অপরদিকে গত ৩০ মে কাহালুর মুরইল এলাকার সাজ্জাদ হোসেনের শিল্প প্রতিষ্ঠানের মিটার পরীক্ষা সংক্রান্ত গঠিত তদন্ত সম্পর্কে বগুড়া বিক্রয় ও বিতরন বিভাগ-৩ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ গোলাম ছরোয়ার জানিয়েছেন, বিষয়টি এখনও তদন্তাধীন। তদন্তের সময় বৃদ্ধি করা হয়েছে বলে নির্বাহী প্রকৌশলী জানালেও তার সময়সীমা বলেননি।
এখানে উল্লেখ্য, তিন কার্য্যদিবসের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেয়ার জন্য অনুরোধ করা হলেও প্রায় ৫ মাসেও রিপোর্ট জমা না দেয়ায় রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে।

সর্বশেষ সংবাদ