নাটোরে স্কুল শিক্ষকের জাল দলিলে ২কোটি টাকার ভূমি আত্মসাৎ

নাটোরের সিংড়ায় জাল দলিলে স্কুল শিক্ষকের প্রায় ২কোটি টাকা মূল্যের ভূমি আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযুক্ত আব্দুর রব (৪৭) পেশায় স্কুল শিক্ষক। বর্তমানে তিনি সিংড়ার চামারী ইউনিয়নের সোনাঘাটি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে কর্মরত।

 

সূত্রে জানা যায়, সিংড়ার চামারি ইউনিয়নের বাহাদুরপুর গ্রামের মরহুম শেখ রিয়াজ উদ্দিনের নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার চন্দ্রপুর মৌজায় পারিবারিক পুকুর ও জমি রয়েছে। সেখানে তাঁর স্ত্রী এবং সন্তান মিলিয়ে মোট ২১জন অংশিদার থাকলেও অভিযুক্ত আব্দুর রব জাল দলিল তৈরির মাধ্যমে উক্ত জমি নিজের বলে দাবি করছেন।

 

সম্প্রতি উক্ত সম্পত্তির অংশিদারগণ যথাক্রমে শেখ মোঃ রবিউল করিম, শেখ মোঃ রকিবুল ইসলাম, মোছাঃ রুবানা সুলতানা, শেখ মোঃ রেজাউন নবী উক্ত জমির খারিজ করতে স্থানীয় ইউনিয়ন ভূমি অফিস গিয়ে জানতে পারেন, তাদের প্রাপ্যতা অনুযায়ী জমি অবশিষ্ট নাই। অভিযুক্ত আব্দুর রব উক্ত জমি নিজ নামে খারিজ করে নিয়েছেন।  প্রতিকার পাওয়ার জন্য ওয়ারিশগণের পক্ষে শেখ মোঃ রবিউল করিম গুরুদাসপুর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি)’র নিকট লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে অভিযুক্ত আব্দুর রবকে সহকারী কমিশনার (ভূমি)’র নিকট তলব করা হলে আব্দুর রব ৫/৯/১৯৮৬ সালের একটি অস্পষ্ট দলিল উপস্থাপন করেন।

 

প্রকৃতপক্ষে জমির ২১জন ওয়ারিশ থাকলেও অভিযুক্ত আব্দুর রবের জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরিকৃত দলিলে দেখা যায়, ১২জনের নামে দলিল রয়েছে। উক্ত দলিলে দেখা যায়, মোট জমির পরিমাণ ৫.৯৯ একর উল্লেখিত রয়েছে যেখানে অভিযুক্ত আব্দুর রবকে ৩.৫১ একর এবং অন্যান্য ভাইদের ৩৩শতাংশ ও বোনদের ১৬.৫ শতাংশ জমি থাকার কথা উল্লেখিত রয়েছে। সেখানে মৃত শেখ রিয়াজ উদ্দিনের স্ত্রী আমেনা বেগম সহ তাঁর অন্যান্য ৮সন্তানকে সুকৌশলে ফাঁকি দিয়ে জালিয়াতির আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। জাল দলিলে থাকা ১২জনের অধিকাংশ জানিয়েছেন তাঁরা এই ভিত্তিহীন দলিল সম্পর্কে অবগত নন।

 

অভিযুক্ত আব্দুর রবের জাল দলিলে দেখা যায়, তিনি ৩৩৯৫৮৪৯নং স্ট্যাম্পে ২৫/৯/১৯৮৬ সালে এভিডেভিট করেন যেখানে সুতনী এমজি ফন্টের ব্যবহার রয়েছে। যা মোস্তফা জব্বার ও আনন্দ কম্পিউটার্সের কপিরাইটে ৮/১৮/২০০৫ সালে বাজারজাতকরণ করা হয়। এছাড়াও উক্ত এভিডেভিটে বিজয় বাংলা কিবোর্ডের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। যেটির প্রথম সংস্করণ প্রকাশিত হয় ১৬ ডিসেম্বর ১৯৮৮ সালে। উক্ত তথ্য সমূহ আনন্দ কম্পিউটার্স কর্তৃক প্রতিবেদক নিশ্চিত করেছেন।

 

শেখ মোঃ রবিউল করিম জানান, দীর্ঘদিন ধরে আব্দুর রব বিভিন্নভাবে প্রতারণার আশ্র‍য় নিচ্ছেন। পারিবারিক সম্মানের কথা বিবেচনা করে পারিবারিকভাবে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি। ইতিপূর্বেও আমার ভাই আব্দুর রব আমাদের মা আমেনা বেগমকে জমিজমা সংক্রান্ত জেরে মারপিট করেন।

 

মরহুম শেখ রিয়াজউদ্দিনের স্ত্রী, অংশিদারগণের মা আমেনা বেগম জানান, আব্দুর রবের প্রদর্শিত দলিলটি সম্পূর্ণ ভূয়া। কারণ সেসময় শেখ রিয়াজ উদ্দিনের প্রায় দশ বছর শয্যাশায়ী ছিলেন এবং তাঁর স্মৃতি শক্তি হ্রাস পেয়েছিলো। আব্দুর রব জালিয়াতির মাধ্যমে ভূয়া দলিলটি তৈরি করেছে।

 

অন্যান্য অংশিদারগণ জানিয়েছেন, পিতৃসম্পত্তি উদ্ধারে তাঁরা অভিযুক্ত আব্দুর রবের বিরুদ্ধে ফৌজদারি বিধি অনুযায়ী মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

 

এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানার জন্য অভিযুক্ত আব্দুর রবকে মুঠোফোনে কল করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।

 

বিশেষজ্ঞদের মতে, মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষকের এমন কর্মকাণ্ডে শিক্ষক সমাজ বিতর্কিত হচ্ছে। এ ধরনের ঘটনা যেন বারবার না ঘটে সেজন্য দৃষ্টান্তমূলক  শাস্তির ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। নয়তো সাধারণ মানুষগুলো আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবে।

সর্বশেষ সংবাদ