জাতীয় আদিবাসী পরিষদকে বিভক্ত ও দূর্বল করার ষড়যন্ত্রের নিন্দা-সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন-রবীন্দ্রনাথ সরেন

জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন এক বিবৃতিতে জাতীয় আদিবাসী পরিষদকে বিভক্ত ও দূর্বল করার ষড়যন্ত্রের নিন্দা করেছেন। তিনি বলেন, সমতলের আদিবাসীদের যেমন দীর্ঘ লড়াইয়ের ইতিহাস আছে তেমনি আছে বঞ্চিত ও প্রতারিত হওয়ার ইতিহাস। আদিবাসীরা ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন, সাঁওতাল বিদ্রোহ, পাকিস্তান বিরোধী আন্দোলন, তেভাগা আন্দোলন, টঙ্ক আন্দোলন, হাজং বিদ্রোহসহ সমস্তআন্দোলনে অংশ নিয়েছিল তাদের জমি, সংস্কৃতি রক্ষার আকাঙ্খা থেকে। এই আন্দোলনে যেমন তাঁরা জীবন দিয়ে অধিকার আদায় করতে চেয়েছে তেমনি এই অভিজ্ঞতাও অর্জন করেছে যে, শোষক, লুটপাটকারি ভুমিদস্যুরা সবসময় সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় থেকেই আদিবাসীদের উপর নিপীড়ন চালায়। তাই আদিবাসীদের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনে সবসময় তাঁরা প্রগতিশীলদের সমর্থন ও সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আদিবাসীদের উপর সাম্প্রদায়িক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আক্রমণ ক্রমাগত বাড়ছে। সাহেবগঞ্জের বাগদা ফার্ম, স্বপ্নপুরির নামে ভুমি দখল, সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়িয়ে আদিবাসীদের বাড়িঘরে হামলা তার নিকৃষ্ট উদাহরণ। অর্থনৈতিক জোন করার নামে আদিবাসীদের ভুমি দখলের নানা পাঁয়তারা চলছে। এ সমস্তকিছুই চলছে শাসক দলের প্রশ্রয়ে এবং প্রশাসনের সহায়তায়। ফলে আদিবাসিদের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ এবং প্রগতিশীল মানুষদের প্রতিবাদ গড়ে তোলা ছাড়া আদিবাসীদের অস্তিত্ব ও সংস্কৃতি রক্ষা করা সম্ভব নয়। পরিস্থিতির ভয়াবহতা উপলব্ধি করে গত ৯ আগস্ট বিশ্ব আদিবাসী দিবসেও পাহাড় সমতলের আদিবাসীদের ঐক্যবদ্ধ লড়াই করার শপথ উচ্চারিত হয়েছে। তিনি দুঃখের সাথে বলেন, আদিবাসীদের ঐক্য বিনষ্ট করা এবং সাধারণ আদিবাসিদেরকে হতাশ করার চেষ্টা চলছে। তিনি আদিবাসী পরিষদকে বিভক্ত করার অপচেষ্টার তীব্র নিন্দা করেন। সম্প্রতি আদিবাসী সভাপতিকে অব্যাহতি দিয়ে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নির্বাচন করার তীব্রনিন্দা করে তিনি বলেন, সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এই সিদ্ধান্তনেয়া হয়েছে। তিনি প্রশ্ন করেন, কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতির অনুমতি ছাড়া এই সভা কে আহবান করেছিলেন? সভায় কারা উপস্থিত ছিলেন? এই ধরনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য সারাদেশের কমিটিগুলোকে আহবান করা হয়েছিল কিনা? সভাপতির অনুপস্থিতিতে এই ধরনের সিদ্ধান্তকি নেয়া যায়? তিনি বলেন, ন্যুনতম গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি ও সাংগঠনিক নীতি মানলে এই ধরনের সিদ্ধান্তনেয়া সম্ভব নয়। তিনি দাবী করেন আদিবাসীদের বৃহত্তর অংশের সাথে এই কমিটি গঠন প্রক্রিয়ার কোন সম্পর্ক নেই। কিছু ব্যক্তির ইচ্ছায় এই কাজটি করা হয়েছে। তিনি বলেন, জাতীয় আদিবাসী পরিষদকে কোন ব্যক্তির পকেট সংগঠনে পরিণত করার চেষ্টা চলছে। আদিবাসীরা যখন অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে লিপ্ত তখন কিছু ব্যক্তির আকাঙ্খা পূরণের জন্য আদিবাসী পরিষদকে ব্যবহৃত হতে দেয়া যায় না। রাজশাহীতে বসে কমিটি ঘোষণা দেয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, রাজশাহীতে ঋণের কিস্তিপরিশোধে ব্যর্থ হয়ে, সেচের পানি না পেয়ে, অপমানিত হয়ে যখন আদিবাসী কৃষক আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য হয় তখন তাঁরা কোথায় ছিলেন? এখন কমিটি করতে যত আগ্রহ, স্বপ্নপুরির জমি উদ্ধারে সেই পরিমাণ আগ্রহ দেখা যায় নি কেন? আসলে এসব কিছুই হচ্ছে ভুমি দখল ও ভোট দখলের ষড়যন্ত্রের অংশ। আদিবাসীদেরকে বিভক্ত ও বিতারিত করার কৌশলের অংশমাত্র। তিনি বিভক্তির এই সর্বনাশা খেলা বন্ধ করার আহবান জানান। ইতিমধ্যে আদিবাসীদের কিছু কর্মসূচী পালিত হয়েছে এবং কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়েছে। বিভক্ত, বিভ্রান্তনা হয়ে এবং কারো পকেট কমিটি না হয়ে আদিবাসীদের সমস্যা সমাধানে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য তিনি আদিবাসী ভাইবোনদের প্রতি আহ্বান জানান।

সর্বশেষ সংবাদ