পলাশবাড়ীতে মাদকসেবীর ছুরিকাঘাতে ইউপি মেম্বর বাদশা নিহত:ঘাতকের স্ত্রী গ্রেফতার

আরিফ উদ্দিন, গাইবান্ধা প্রতিনিধিঃ গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে মাদকসহ নানা অপরাধের হোতা পাপুলের ধারালো ছুরিকাঘাতে আ’লীগ নেতা ইউপি সদস্য বাদশা মেম্বর নিহত ও দুই ভাতিজা গুরুতর আহত হয়েছেন।
বেতকাপা ইউপির পূর্ব নয়ানপুর গ্রামের মধ্যপাড়ায় পাশের বাড়ির প্রতিপক্ষ মাদকসেবী-বিক্রেতা বখাটে পাপুল মিয়া রাতের আঁধারে প্রকাশ্যে ধারালো ছুরিকাঘাতে ইউপি’র ৮ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য, আওয়ামী লীগ
সভাপতি ৫ মেয়ে ১ ছেলে সন্তানের জনক বাদশা মিয়া (৫০) ঘটনাস্থলেই নির্মম নিহত হয়েছেন। এসময় নিহতের দুই ভাতিজা সহোদর ভাই আবু তাহের স্বপন (৪২) ও সবুজকে (৩৫) চিকিৎসার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এ নৃশংস হত্যাকান্ডের ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ১০টার দিকে পূর্ব নয়ানপুর গ্রামের মধ্যপাড়ায়।
তথ্যানুসন্ধান, প্রত্যক্ষদর্শী,পুলিশ ও নিহতের সজনরা জানান, বখাটেপনা, চুরি-ছিনতাই ছাড়াও নানা অপকর্মের চিহিৃত হোতা-সন্ত্রাসী খুনি পাপুল মিয়া দাম্ভিকতার সহিত এলাকায় অপরাধ সংঘটিত করে আসছিল। একজন প্রিয় জনপ্রতিনিধি হিসেবে বাদশা মেম্বর মাদকসহ অপরাধ কর্মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদসহ কঠোর অবস্থান নেন। পাপুলের বিরুদ্ধে একের পর এক শালিসি বৈঠকের ফলে তার মনে চরম ক্ষোভসহ শত্রুতার সৃষ্টি হয়। নীরব প্রতিশোধ নিতে পাপুল মড়িয়া হয়ে বিভিন্ন সুযোগ খুঁজতে থাকে।
হত্যাকান্ডের এসময় রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ পাপুল তার বাড়ির পাশের রাস্তায় স্থানীয় শোভারানীর মুদির দোকান অদূরে বসে ছিল। এসময় পাপুলের গতিবিধি সন্দেহজনক হওয়ায় বাদশা মেম্বর পাপুলকে তার বাড়িতে যেতে বলেন।
এতে ক্ষুব্ধ পাপুল মেম্বরকে অশ্লীল-অশ্রাব্য গালমন্দসহ অহেতুক তর্কে লিপ্ত হন। কোনোকিছু বুঝে উঠার আগেই পাপুলের নেতৃত্বে তার বাবা-মা, দোকানী শোভারানী ও তার ছেলে সজিবসহ পূর্বপরিকল্পিত ৫/৬ জন বাদশা মেম্বরের ওপর আকস্মিক হামলা চালায়। খবর পেয়ে মেম্বর বাদশার ভাতিজা বড়ভাই আলতাব হোসেনের ছেলে স্বপন ও সবুজ তাদের চাচাকে রক্ষা করতে ঘটনাস্থলে ছুঁটে আসেন।
কিন্তু; ততক্ষণে উপূর্যপরী ছুরিকাঘাতে রক্তাক্ত জখম করে পাপুলসহ সহযোগীরা পালিয়ে যায়। মুমূর্ষু বাদশা মেম্বরসহ আহত দুই ভাতিজা সংজ্ঞাহীন অবস্থায় মাটিতে লুটে পড়েন। ঘটনাস্থল থেকে দ্রুত তাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসেন।কর্তব্যরত চিকিৎসক এসময় মেম্বরকে মৃত ঘোষণা করেন।
খবর পেয়ে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব একেএম মোকছেদ চৌধুরি বিদ্যুৎ, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. কামরুল হাসান, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (সি-সার্কেল) উদয় কুমার সাহা, উপজেলা আ’লীগ সাধারণ সম্পাদক মহদীপুর ইউপি চেয়ারম্যান তৌহিদুল ইসলাম মন্ডল, থানা অফিসার ইনচার্জ আরজু মো. সাজ্জাদ হোসেন ও থানা পুলিশ পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) দীবাকর অধিকারীর নেতৃত্বে পুলিশ টিম রাতেই হাসপাতালে যান। এসময় আহতদের শারীরিক খোঁজখবর শেষে সরেজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
হত্যাকান্ডের বিষয়টি নিশ্চিত করে থানা অফিসার ইনচার্জ আরজু মো. সাজ্জাদ হোসেন জানান, ওই গ্রামের মোসলেম আকন্দ ভোলার ছেলে ঘাতক পাপুল (৩৪) গা-ঢাকা দিয়েছে। পাপুলসহ জড়িতদের আটক করতে সম্ভাব্য বিভিন্ন স্থানে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
প্রাথমিক সুরতহাল রিপোর্ট শেষে ময়না তদন্তের জন্য মরদেহ গাইবান্ধা মর্গে প্রেরণ করা হয়। এ ব্যাপারে নিহতের মেয়ে স্বপ্না খাতুন বাদী হয়ে ৬ জনকে আসামী করে থানায় হত্যা মামলা (নং-২৩, তাং-২৬/০৯/২৩) দায়ের করা হয়েছে। মামলার প্রধান আসামী ঘাতক পাপুলের স্ত্রী শাহীনুর বেগমকে (২৬) গ্রেফতার করেছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে গাইবান্ধা কোর্টহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। খুনি পাপুলসহ অন্যান্য আসামীদের গ্রেফতারে পুলিশি জোর তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে বলে পুলিশ জানায়।

সর্বশেষ সংবাদ