পদ্মা নদীর ওপারে চরাঞ্চলের মানুষের মাঝে লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া বেড়ে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার

রাজশাহী থেকে মোঃ হায়দার আলী ।। সময় কারো জন্য অপেক্ষা করে না, দিন দিন বাড়ছে কর্মব্যস্ততা, এক নদী পার হাজার কোর্স এ কথাটা আর কেউ এখন মনে করেন না। তথ্যপ্রযুক্তির যুগে মানুষ বিশ্বের নামীদামি দেশের চেয়ে এগিয়ে যাওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। সে দিক থেকে বাংলাদেশ পিছিয়ে নেই।
 শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন হয়ে হয়েছে ডিজিটাল, অনলাইন ব্যাবস্থা, কৃষিক্ষেত্রে অনলাইন, বৈজ্ঞানিক পদ্ধিতে চলছে চাষ আবাদ, কৃষকদের উৎপাদিত ফসল কাটা, মাড়াই কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তি। ভূমি অফিস গুলোতে লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। দেশের প্রতিটি সেক্টরে ব্যপকভাবে তথ্যপ্রযুক্তি ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ব্যবহার করে অল্প সময়ে বেশী কাজ করার, মানুষের সেবা দেয়ার প্রবনতাও বেড়েছে।
সে দিক থেকে পিঁছিয়ে নেই চর অঞ্চলের মানুষও, তাদের মাঝে লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া, হচ্ছে রাস্তা ঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভবণ, যাচ্ছে বিদ্যৎ, সোলার প্লান্ট আরও কত কিছু। নদী পারা পারের নৌকায়ও লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া, দাঁড়ের পরিবর্তে শ্যালোমেশিন চালিত ফ্যান, যেখানে পূর্বে নৌকা চালাতে মাঝিসহ ৩ জন মানুষের প্রয়োজন হত, ঘন্টার পর ঘন্টা সময় লাগত নদী পার হতে সেখানে বর্তমানে ১ জন মাঝি দিয়ে নৌকা চালানো হচ্ছে, নদী পার হতে সময় লাগে মাত্র ২০ মিনিট থেকে ২৫ মিনিট। নদী পার হয়ে বহু দুর দূরান্তের গ্রাম গুলিতে পৌঁছাতে একমাত্র পায়ে হেঁটে যেতে হত, হাঁটতে হত ঘন্টার পর ঘন্টা, পায়ে ফুসকা পড়ে যেত, চলার পথে বিশ্রাম নিতে হত অনেক বার, ছোট শিশু, মহিলাদের নিয়ে সমস্যা হত বেশী, একটু যাদের অবস্থা ভাল তারা ব্যবহার করতো  গরু, মহিষের গাড়ি, উপরে থাকত টাঁপর দেখত খুব সুন্দর লাগত, বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য গাড়িগুলো সাজানো হত রং, রঙিন কাগজ দিয়ে, আর পটকা ফুটাতে ফুটাতে শব্দ করে জানান দিত বিয়ের বহর আসছে। সেগুলি এখন রুপকথার গল্প ও বইয়ের পাতায় লিখিত ভাবে স্থান পেয়েছে মাত্র। এখন নদীর পারের মানুষের সে অবস্থা নেই তাদের মাঝে লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া, চরঞ্চালের কেউ কেউ মাদক ব্যবসা সাথে জড়িত হয়ে অর্থনৈতিকভাবে অবস্থার পরিবর্তন করে এপার ওপারে দুপারে গড়ে তুলেছে বিলাস বহুল একাধিক বাড়ি। বাড়ীতে রেখেছেন সদস্য প্রতি নামিদামি ব্যান্ডের মোটর সাইকেল, বাইক। একবাড়িতে ৪/৫ টি বাইক, কয়েকটি কার মাইক্রো রাখা অবস্থায়ও দেখা যায়। এদের বেশীর ভাগই ১৫ বছর  আগে ছিল কামলা, মাঝি, কৃষি শ্রমিক, গরুর রাখাল, চোরাকারবারীর পোটলাবহনকারী, কুলি, ফেরি করে চা বিক্রতা, । ওই সব মানুষগুলো হেরোইন, ফেনসিডিল, ভারতীয় মদ আসার বদলতে অল্প সময়ে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ, তার পর বট বৃক্ষ হয়েছেন, এ যেন যাদুর চেরাক হতে পেয়েছেন। ওই সব লোক গুলি শকের বসে এখন চরে যান, কিংবা মাদক বিরোধী অভিযান যখন জোরদার হয় তখন পুলিশ, ডিবিপুলিশ, বিজিবিসহ প্রশাসনের লোকজনের ভয়ে চরের বাড়ী গিয়ে আত্নগোপন করে থাকেন। আবার কেউ কেউ রাজশাহী, নাটোর, বগুড়া, পাবনা, রংপুর, সিরাজগজ্ঞ, শেরপুর, মানিকগজ্ঞ, ঢাকা, চিটাগাং, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিজদের অবৈধ কালো টাকায় নির্মিত রাজকীয় বাসায় অবস্থান করেন। আবার কেউ কেউ ভারত, চীন, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মালেশিয়ায় গিয়ে আত্নগোপন করে থাকেন। সে যাই হউক না কেন? চর অঞ্চলেও লেগেছে উন্নয়নের ছোঁয়া। দুর্গম চর। বাহন বলতে এতদিন ছিল শুধু গরু-মহিষের গাড়ি, পায়ে হাটতে হতো। কয়েক বছর পূর্বে হতে  এই চরের মানুষের বাহনের অন্যতম ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে ভাড়ায় চালিত মোটরবাইক। চরের একটি গ্রামের অন্তত ৪০/৫০ জন যুবক ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালিয়ে তাদের জীবিকা নির্বাহ করছেন। এর জন্য নেয়া হয় ১ শ থেকে ১ শ ৩০ টাকা, ১শ ৫০ টাকা।
বিদিরপুর, সুলতানগজ্ঞ, রেলওয়ে বাজারের সামনে পদ্মা নদীতে নৌকায় চড়তে হয়। বর্তমানে পদ্মা ছোট হয়ে নৌপথ কমেছে। বেড়েছে পায়ে হাঁটা পথ। এই চরের বালু, কাঁদা আর হাঁটুপানিতে দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল। চরযাত্রা অনেকটাই সহজ করে দিয়েছে বাইকগুলো।
শুক্রবার  সকালে চর মানিকচক, চর আষাড়িয়াদহ  যাওয়ার সময় প্রায় ৩ কিলোমিটার নৌকায় যাওয়া যায়। এরপর মাঝনদীতে এসে বালুচরে থেমে যায় নৌকা। তারপরই পাওয়া যায় ভাড়ায় চালিত সারি সারি মোটরবাইক। এই বাইকগুলিতে ওপারের গ্রামগুলিতে সহজে যাওয়া যায়।  মোটরসাইকেল। চেপে বসলেন চালক। তারপরই চালকের পেছনে নৌকা থেকে নেমে বাইকে  উঠে বসলেন আরোহীরা। বাইক ছুটে চলে দু’পাশে কখনও ফসলের ক্ষেত আবার কখনও শুধু বালুপথ, কখন আধুনিকতার ছোঁয়ায় নির্মান হওয়া পাঁকা রাস্তায় পাড়ি দিয়ে বাইক চলছে বেশ গতিতে। দেখা গেল, চালকেরা খুব দক্ষ। সংকীর্ণ পথ পাড়ি দিয়ে চলতে তাদের কোন সমস্যায় হচ্ছে না। তবে নতুন কেউ বাইক নিযে গেলে তার চালাতে আসুবিধা হবে সড়কে।
 ধুলো-বালি পাড়ি দিয়ে বাইকগুলো ছুটে চলছে চর চর অঞ্চলের গ্রাম গুলির দিকে। চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকলেও তারা এমন সংকীর্ণ পথে বাইক চালাতে পারেন এখানে অবশ্য ট্রাফিক পুলিশ নেই। ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য তাদের কেউ ধরে না।
বাইক চালক জমির আলী ( ৩০) এর সাথে কথা হয়, ৬ বছর ধরে ভাড়ায় বাইক চালান। তিনি জানালেন, প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৯০০ টাকা আয় হয় তার। নদীপাড় থেকে গ্রামে এনে দিলে একজন আরোহী ১০০ থেকে ১৫০ টাকা দেন। যারা গ্রামে নিয়মিত আসেন তারা ফোন নম্বর রাখেন। ফোন করলেই তারা নদীপাড়ে চলে যান। আরোহীকে নিয়ে আসেন। কাজ শেষে আবার নদীতীরে রেখে আসেন। অন্যান্য বাইক চালকদের নম্বর অনেকে জানেন তাদের বাড়ীতে কোন মেহমান আসলে মোবাইল করে ডেকে নেন তাদের তারা নিরাপদে কম সময়ে পৌঁছে দেন গন্তব্যস্থলে।
যাত্রা শেষে তার বক্তব্য- ‘এখানকার চালকেরা খুব দক্ষ। কিন্তু এমন রাস্তায় বাইকে চলা খুব ভয়ের। দুরু দুরু বুকে এই বাইকে চড়েই এলাম। ভয় হলেও চড়তে হয় পাঁয়ে হাঁটার  ভয়ে।
এখানকার বাইক চালকগণ অকপটে স্বীকার করলেন, এই চরে কৃষি ছাড়া তেমন কোন কর্ম নেই। তাই আগে তিনি সীমান্ত এলাকা থেকে মাদক বহনের কাজ করতেন তারা । এখন অবৈধ পথ ছেড়ে বাইকে উঠেছেন। তারা কেউ কেউ‘শো-রুম থেকে কিস্তিতে মোটরসাইকেল কিনেছিলাম বৈধ পথে আয় রোজকার করছেন। মাদক ব্যবসায় বেশী আয় হলেও সুখ নেই ওই পথে, পুলিশ, বিজিবির ভয়ে বাড়ীতে ঘুমাতে পারতাম না এখন সে ভয় নেই। শান্তিতে ঘুমায়।
উপজেলা আওয়ামীলীগের সহঃ প্রচার ও প্রকাশনা বিষায়ক সম্পাদক,  সাবেক কাষ্টম গোয়েন্দা কর্মকর্তা সুনন্দন দাস রতন বলেন, দলীয়, নির্বাচনী, সামাজিক কার্যক্রমের জন্য অনেক বার আমাকে চরে যেতে হয়েছে এখনও যাচ্ছি আমি দেখেছি প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে রাজশাহী ১ আসনের বার বার নির্বাচিত এমপি আলহাজ্ব ওমর ফারুক চৌধুরী সাহেব চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নে রাস্তাঘাট,  ব্রিজ, কালভাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কৃষি কাজে আশ্রায়কেন্দ্র, কমিনিটি ক্লিনিকসহ ব্যাপক উন্নয়ন করায় মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন হয়েছে, এলাকায় লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া, এক নদী হাজার কোস এখন সে অবস্থা নেই, যাতায়াত ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন হওয়ায় কৃষক ও কৃষি শ্রমিকদের আনন্দের সীমা নেই। সামান্য কিছু বাকী আছে সেগুলি পাঁচ বছরে হয়ে যাবে। এককই সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফুল হক ভোলা।
চর আষাড়িয়াদহ কাঁনাপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের  প্রধান শিক্ষক মোঃ আসগর আলী এ প্রতিবেদককে জানান, পূর্বে গোদাগাড়ী, শিক্ষা বোর্ডের কিংবা ডিসি অফিসসহ বিভিন্ন কাজে খুব সকালে বের হয়ে সময়মত কাজ করতে পারতাম না। এ বাইকের জন্য আর সে সমস্যা নেই। কিছু অর্থ খরচ হলেও সুবিধা অনেক।  এখানে এমপি, মন্ত্রী, উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউএনও শিক্ষাকর্মকর্তা প্রকৌকলীসহ বিভিন্ন অফিসের কর্মচারীরী, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা কর্মী চরাঞ্চলে আসতে হয়। তারা নদীর ওপারে প্রাইভেট কার, সরকারী গাড়ী রেখে নৌকায় পার হয়ে একমাত্র ভরসা হোন্ডা/ বাইক। এ বাইক  সকল ধরণের মানুষের উপকার হয়।

সর্বশেষ সংবাদ