বরিশালে এক মাসে ১৮ খুন

বরিশাল সংবাদ দাতা : গুম.হত্যা আর অপহরণে দক্ষিণাঞ্চল আতাংকের এলাকায় পরিণত হতে চলছে। বরিশালে একের পর এক খুনের ঘটনা ঘটছে। নদী-খাল, ডোবা, আবাসিক হোটেল, ব্রীজির ঢালের নিজ থেকে প্রায়ই উদ্ধার হচ্ছে অজ্ঞাত লাশ। কারো কারো পরিচয় মিল্লেও অনেকের পরিচয় মেলেনি।

গত এক মাসে বরিশালে ১৮ জনের খুনের ঘটনায় জনমনে নানা শঙ্কা সৃষ্টি হচ্ছে। তবে সব চেয়ে বেশি হত্যার ঘটনা ঘটছে বরিশালের হিজলায়। এ এলাকায় ৬টি হত্যার মধ্যে ৪জনই গণপিটুনিতে মরা যায়। খুন, অপহরণ আর অজ্ঞাত লাশের করণে ওই উপজেলায় নতুন পুলিশ ফাড়িও গঠন করা হয়েছে।

জেলা পুলিশ সুপার এস এম আক্তারুজ্জামানের তথ্যে জানা যায়, বিছিন্ন এসব হত্যা কান্ডের লক্ষণ ভালো নয়। এর প্রতিরোধে আমাদের সামাজিকভাবে সচেতন হতে হবে। তবে বর্তমানে অবস্থা আশংকাজনক নয় বলে তিনি মনে করেন। বরিশালে ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে খুন আর অজ্ঞাত লাশ। অজ্ঞাত লাশের সন্ধানে আর গত এক মাসে ১৮টি হত্যার ঘটানায় উদ্বেগ প্রকাশ করছেন বিভিন্ন মহল। গত ২ আগস্ট রোববার হিজলা সংলগ্ন মেঘনায় জাহের রাঢ়ী নামে এক নিখোঁজ কৃষকের লাশ উদ্ধার করা হয়। নগরীর সিএন্ডবি রোড থেকে গত ২৫ জুলাই শনিবার রেজাউল করিম নামে এক দোকান কর্মচারীর লাশ উদ্ধার করা হয়।

একই দিন বাকেরগঞ্জে ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে উজ্জ্বল খরাতি নামে কলেজ পড়–য়া ছাত্র নিহত হয়। ২১ জুলাই রাতে অভিজাত হোটেলে ইমরান হোসেন সুমন নামে এক যুবক নিহত হন। গত সোমবার দুপুরে আদ্বুর রব সেরনিয়াবাত সেতুর ঢালের কীর্তনখোলা নদীতে অজ্ঞাত এক যুবকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। কোতোয়ালি মডেল থানা ওসি শাখাওয়াত হোসেনের সূত্রে জানা যায়, বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটছে, তবে হোটেল থেকে কাউকে ফেলে হত্যা করা হলে পুলিশের কি করার আছে।

তার পরেও যাতে আর এসব ঘটনা না ঘটে সে জন্য জোরালভাবে নজরদারি রাখা হচ্ছে। এখনও মেলেনি কীর্তনখোলায় অজ্ঞাত লাশের পরিচয়ে। জেলার বাকেরগঞ্জে গত ১১ জুলাই টুলু মোল্লা নামে এক যুবককে হত্যা করে প্রতিপক্ষরা। গত ১৩ জুলাই হিজলা উপজেলার বাহেরচরে ডাকাত সন্দেহে ৩ জনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। একই মাসে ১৬ জুলাই হিজলার ধুলখোলায় নান্টু নামে এক ইউপি সদস্যকে হত্যা করে র্দুবৃত্তরা। এর আগে ওই চলিত মাসেই অপর এক ডাকাতকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। এ অবস্থায় আইনশৃংখলা রক্ষায় হিজলায় জেলা পুলিশ সুপার একটি নতুন ফাঁড়ি গঠন করেন।

এদিকে ঈদের দিন উজিরপুরের হাবিবপুর খালের স্লুইজ গেট থেকে অজ্ঞাত লাশ উদ্ধার করা হয়। একই উপজেলায় গত ২ জুলাই ছোট ভাইয়ের লাঠির আঘাতে বড় ভাই শহিদুল নামে একজনের মৃত্যু ঘটে। বানারীপাড়ায় গত ৪ জুলাই উপজেলার বাইশারী এলাকায় ইমরান হোসেন ফয়সাল নামে এক স্কুল ছাত্রের লাশ উদ্ধার করা হয়। পুলিশ জানিয়েছেন ৩/৪ দিন আগে হত্যা করে ফেলে রাখা হয়েছে। পুলিশের দায়িত্ব যেন এখানেই শেষ। মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার চরগোপালপুর এলাকায় চলিত মাসের শুরুতেই স্ত্রীকে হত্যা করে পাশান্ড স্বামী। থানার ওসি উজ্জ্বল কুমার দে’র‘ এর তথ্যে জানা যায়, ওই হত্যা ঘটনায় পোস্টমর্টেম এ হত্যার প্রমাণ মেলায় স্বামীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

বরগুনার তালতলী উপজেলায় ১১ বছরের শিশু রবিউলকে চলিত মাসের ৪ আগস্ট চোখ তুলে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়। উপজেলার আমখোলা গ্রামের একটি খাল থেকে মঙ্গলবার বিকেলে ভাসমান অবস্থায় রবিউলের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। বরগুনার পুলিশ সুপার বিজয় বসাক’র‘ সূত্রে জানা যায়, হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে মিরাজ (২৫) নামে এক যুবককে বুধবার গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মুলাদী উপজেলার ব্রজমোহনচর গ্রামে গত ২ জুলাই প্রতিপক্ষের হামলায় রাশিদা নামে এক মহিলা নিহত হন, একই উপজেলার পৌরসভা ও সদর ইউপি সংলগ্ন খালের বেইলী ব্রিজের কাছে চলিত মাসের প্রথম সপ্তাহে অজ্ঞাত এক লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। দুইদিন আগে মুলাদী থানার ওসি আলাউদ্দিন মিলন জানান, অজ্ঞাত ওই লাশের পরিচয় এখনও মেলেনি।

৩০ দিনে ঘটে যাওয়া এতগুলো হত্যা ও লাশের মিছিলে দক্ষিণাঞ্চলের জনমনে নানা শঙ্কা সৃষ্টি হচ্ছে। নাম প্রকাশ না কারা শর্তে একাধিক ব্যবসায়ী ও রাজনীতিক নেতাদের অভিযোগ অজ্ঞাত লাশ আর ডাকাত সন্দেহে পিটিয়ে মানুষ হত্যা মানবাধিকার লংঘনের সামীল।

সর্বশেষ সংবাদ