সরকারি ঋণে ভারাক্রান্ত রাষ্ট্রায়ত্ত ৪ ব্যাংক

জিটিবি নিউজ : বসেরকারি খাত এই ব্যাংকগুলোর ঋণ পাচ্ছে না; যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বিনিয়োগে, বিকশিত হচ্ছে না দেশের শিল্পায়ন।বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০১৫ এর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সরকারের ২১টি সংস্থার কাছে সোনালী, জনতা, অগ্রণী এবং রূপালী ব্যাংকের বকেয়া ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ৩৩ হাজার কোটি টাকা।
এর মধ্যে জ্বালানি তেল ক্রয় ও বিপণনকারী সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্টোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ১১ হাজার ১৫৩ কোটি টাকা, যা মোট বকেয়ার তিন ভাগের এক ভাগ।বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের দাম অর্ধেকে নেমে আসায় বিপিসি এখন তেল বিক্রি করে লাভ করছে। এমনকি ডিজেল-কেরোসিন বিক্রি করেও মুনাফা করছে এই সংস্থাটি। কিন্তু তারপরও ব্যাংকের পুঞ্জিভূত ঋণের পরিমাণ কমছে না।এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, এতদিন বেশি দামে তেল কিনে কম দামে বিক্রি করার কারণে লোকসান দিতে দিতে বিপিসি একটি ‘জঞ্জাল’ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছিল। সেই জঞ্জাল দূর করতেই বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমার পরও আমরা কমাইনি। এবার মনে হচ্ছে দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত জঞ্জাল বেশ খানিকটা দূর করা সম্ভব হবে।
বিপিসির চেয়ারম্যান এ এম বদরুদ্দোজা বলেন, বিশ্ব বাজারে তেলের দাম কমায় গত ডিসেম্বর থেকে জ্বালানি তেল বিক্রি করে সরকার লাভ করছে। এতদিন পেট্টোল-অকটেন বিক্রি লাভ হলেও এখন ডিজেল-কেরোসিনসহ সব ধরনের জ্বালানি বিক্রি করে মুনাফা করছে বিপিসি। কিন্তু দীর্ঘদিনের লোকসানের বোঝা এখনও টানতে হচ্ছে। ব্যাংকগুলোতে বিপিসির বিপুল পরিমাণ ঋণ বকেয়া আছে। এবার বোধ হয় সেই ঋণ শোধ করা সম্ভব হবে।
তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর, অর্থনীতি বিশ্লেষক মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন জ্বালানি তেলের দাম না কমিয়ে এ খাত থেকে যে অর্থ সাশ্রয় হবে তা অন্য খাতে ব্যয় করার পরামর্শ দিয়েছেন। তেলের দাম কমায় এ খাতে বছরে অন্তত ৩০০ কোটি ডলার সাশ্রয় হবে’ হিসাব দিয়ে তিনি বলেন, এই সাশ্রয়ের অর্থ দিয়ে আরও বেশি মূলধনী যন্ত্রপাতি ও মধ্যবর্তী পণ্য আমদানি করে শিল্প সম্প্রসারণে শক্তি যোগ করা গেলে আমাদের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
অর্থনৈতিক সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯-১০ অর্থবছরে বিপিসির লোকসান ছিল ২ হাজার ৫০ কোটি টাকা। ২০১০-১১ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৯ হাজার কোটি টাকা।
২০১১-১২ অর্থবছরে ১১ হাজার ৩৭১ কোটি টাকা ছিল লোকসান। ২০১১ সালে ছয় দফা জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে ২০১২-১৩ অর্থবছরে লোকসান নেমে আসে ৪ হাজার ৮৩২ কোটি টাকায়।
কিন্তু আগের অবস্থা আর এখন নেই। চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের ২২ এপ্রিল পর্যন্ত (১ জুলাই থেকে ২২ এপ্রিল) সময়ে বিপিসি ৩ হাজার ৪৫৪ কোটি ৭৩ লাখ টাকা মুনাফা করেছে; যদিও গত ২০১৩-১৪ অর্থবছরেও এই সংস্থাটি দুই হাজার ৩২১ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছিল। এর আগে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ৩২২ কোটি ৬৬ লাখ টাকা লাভ করেছিল বিপিসি।
অন্য সংস্থাগুলোর ঋণরাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকের কাছে সরকারের ২১টি প্রতিষ্ঠানের ৩৩ হাজার কোটি বকেয়া ঋণের মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ১৬৬ কোটি টাকা। বিপিসি ছাড়া সরকারের অন্য যে সব প্রতিষ্ঠানের বকেয়া ঋণ রয়েছে, সেগুলো হচ্ছে- বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) সাত হাজার ৬২০ কোটি টাকা। বাংলাদেশ রসায়ন শিল্প সংস্থা- বিসিআইসির পাঁচ হাজার ১০৬ কোটি টাকা। বিএসএফআইসির তিনহাজার ২১৫ কোটি টাকা, বিএডিসির দ্ইু হাজার ৩১২ কোটি টাকা, বিজেএমসি এক হাজার ২১৯ কোটি টাকা, বিডব্লিউবিডির ৯৩৯ কোটি টাকা, বিওজিএমসির ৩৯৬ কোটি টাকা, বিএসইসির ৩০৭ কোটি টাকা এবং বিবিসির ৩০২ কোটি টাকা।যে সব সংস্থার খেলাপি ঋণ রয়েছে, সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে-বিসিআইসির ৮৯ কোটি ৫২ লাখ টাকা। বিটিএমসির ২৬ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। বিএডিসি ২১ কোটি ২৭ লাখ টাকা, টিসিবির ১১ কোটি টাকা এবং বিটিবির খেলাপি ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ১০ কোটি ৫২ লাখ টাকা।বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষক জায়েদ বখত বলেন, সরকারি সংস্থাগুলোর কাছে ব্যাংকগুলোর বিপুল অংকের এই ঋণ আটকে থাকায় বেসরকারি উদ্যোক্তারা ঋণ পাচ্ছে না। এর ফলে বেসরকারি খাত ঋণ থেকে বঞ্ছিত হচ্ছে। বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

সর্বশেষ সংবাদ