লাইলাতুল ক্বদরের তাৎপর্য ও ক্বোরান নাযিলের ইতিহাস ——-এস.গুলবাগী,

মহান আলাহ রাাব্বুল আল আমিন মানুষের পাপ পঙ্খিলতাকে ধুয়ে মুছে নিষ্পাপ করার জন্য যত গুলি মাধ্যম দিয়েছেন রোজা তার মধ্যে অন্যতম। ইসলামের মুল ৫টি স্তম্ভের মধ্যে রোজা ৩য় তম। আর এই রোজার মাস টিকে বলা হয় রমজানের মাস। রমজ্ শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো ভষ্মিভুত হওয়া বা করা। ইসলামী পরিভাষায় এ কারনেই এ মাসের নাম করন করা হয়েছে রমজান বা রামাদান। রমজানের রোজার গুরুতের আলোকে আলাহ তায়ালা পবিত্র কোর আনুল কারীমে যে আয়াত নাযিল করেছেন তা হলো,‘হে ঈমানদার বান্দারা তোমাদের জন্য রোজা ফরজ করা হয়েছে,যেমনটি করা হয়েছিল তোমাদের পুর্ববতীদের জন্যও,আর এ জন্য যে,তোমারা যেন খোদা ভীতি অর্জন করতে পার-আল ক্বোর-আন। শুধু রোজাই নয় আলাহ রাব্বুল আল আমিন মানুষের পাপ মোচনের জন্যএ মাসেই এমন একটি রজনী বা রাত দান করেছেন যার নাম লাইলাতুল ক্বদর,যে রাত্রীর ইবাদৎ হাজার রাত্রীর ইবাদতের সমান।
শুধু ধর্মীয় দৃষ্টি কোন থেকেই নয় মহান আলাহ রাব্বুল আল আমিন মানুষের জ্ঞান অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য যে তিনটি বিষয় বা দিক দান করেছেন তন্মধ্যে : ১ম-ইন্দ্রীয় লব্ধ জ্ঞান, ২য়-বোধি বা বুদ্ধি মত্তা, আর ৩য়টি হচ্ছে ওহী প্রাপ্ত জ্ঞাণ। ইন্দ্রীয় লব্ধ বা বুদ্ধিমত্তা জ্ঞাণের পরি সমাপ্তি হয় যেখান থেকে, ওহীপ্রাপ্ত জ্ঞাণের শুরু হয় সেখান থেকেই। আর সে ওহী প্রাপ্ত জ্ঞানের সমষ্টিই হচ্ছে পবিত্র ক্বোর আনুল কারীমের অবকাঠামো। আর সে কারনে আলাহ তায়ালা ঘোষনা করেছেন-‘ইহা এমন একটি গ্রন্থ যাতে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই’-(সুরা বাকারা-২)।
আলাহ রাব্বুল আল আমিন মানুষকে সঠিক পথ প্রদর্শনের জন্য যতগুলি নবী রাসুল পাঠিয়েছেন তাঁদের মধ্যে সর্বশেষ নবী বা রাসুল হলেন আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এবং তাঁর প্রতি নাযিল কৃত গ্রন্থটির নাম হচ্ছে আল কোর-আন। আলাহর বান্দারা যাতে পথ ভ্রষ্ট না হয় তাই তিনি মানুষের জীবন বিধান হিসাবে ইহা নাযিল করেছেন তার প্রিয় নবী মুহম্মাদ সাঃ প্র্রতি ওহীর মাধ্যমে। আর ওহী নাযিল হওয়ার সাথে সাথেই তার অন্তরে বদ্ধ মুল হয়ে যেত।
এ ভাবে হুযুর পাক সাঃ এর সিনা মোবারকে কোর আনুল কারীমের এক সুরতি ধন ভান্ডার গড়ে ওঠে। হযরত জিব্রাইল আঃ যখন কোন আয়াত বা আয়াতের অংশ বিশেষ তাকে পড়ে শুনাতেন ইহা তিনি সঙ্গে সঙ্গেই হযরত জিব্রাইলকে আঃ পড়ে শুনাতেন যাতে কোন ভুল ত্র“টি না থাকে। তাছাড়াও তৎণাত তিনি তার সাহাবাদের দ্বারাও মুখস্ত করাতেন,এমনকি কয়েকজন নিযুক্ত সাহাবী দ্বারা লিপি বদ্ধও করাতেন। হযরত যায়েদ বিন সাবেদ ছিলেন তাদের মধ্যে ছিলেন একজন বিশিষ্ট ওহী লেখক। হযরত যায়েদ বিন সাবেদ রাঃ থেকে বর্ণিতআছে আমি ওহী লেখার কাজে সর্বন নিয়োজিত ছিলাম। ওহী নাযিলের মুহুর্ত বর্ননা করতে গিয়া তিনি বলেন, যখন হুযুর পাক সাঃ এর প্রতি ওহী নাযিল হত তখন প্রিয় নবী করীম সাঃ এর চেহারা মোবারকে মুক্তার দানার ন্যায় বিন্দু বিন্দু ঘাম পরিলতি হত। বোখারী শরীফের এক হাদিসে এসেছে,হযরত আয়শা রাঃ থেকে বর্নিত আছে একদা এক সাহাবী রাসুলে করীম সাঃ এর নিকট বললেন, হুযুর কী ভাবে আপনার নিকট ওহী নাযীল হয়,উত্তরে তিনি বলেন- কোন কোন সময় আমি বিকট আকারে অবিরাম ঘন্টার ধ্বনির মত শব্দ শুনি তবে ঐ ঘন্টার ধ্বনি বা শব্দ কোন দিক থেকে ভেসে আসে তা আমি বলতে পারতাম না। ওহী নাযিলের বর্ননা করতে গিয়া হযরত ওমর রাঃ বলেন, ওহী নাযিলের সময় হুজুর পাক সাঃ এর পবিত্র মুখ মন্ডরের চারিপাশে মধু মকিার গুঞ্জন ধ্বনির ন্যায় মৃদু-মধুর গুন গুন শব্দ শোনা যেত-(মসনদে আহমেদ)।
আর এ ওহী লেখার কাজে যারা নিয়োমিত নিয়োজিত ছিলেন তারা হলেন হযরত যায়েদ ইবনে সাবেদ রাঃ, চার খলিফা,হযরত উবাইদ ইবনে কাব,হযরত যুবাইর ইবনে আওয়াান,হযরত খালেদ ইবনে ওলীদ উলেখ যোগ্য। ইয়ামামার যুদ্ধে এক সংগে বহু সংখ্যক হাফেজে কোর আন শহীদ হলে হযরত আবু বকর ও হযরত ওসমান রাঃ মনে সংশয় দেখা দেয়। তখন হযরত ওসমান রাঃ মনে সংশয় দেখা দেয়,এবং যায়েদ ইবনে সাবেদ রাঃ কে ডেকে পবিত্র কোর-আনের বিপ্তি পান্ডু লিপি গুলি একত্র করার জন্য দায়িত্ব অর্পন করেন। হযরত যায়েদ ইবনে সাবেদ রাঃ থেকে বর্নিত আছে,তিনি বলেন তাহারা যদি আমাকে কোন একটি পাহাড় কেটে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব দিতেন তবুও আমার নিকট তত কঠিনমনে হতো না যত কঠিন মনে হতে লাগল এ কাজটি। শেষ পর্যন্ত সকলের সহযোগিতায় ও মহান আলাহর অসীম অনুগ্রহে তিনি একাজটি সমাধা করেছেন। যার জের,জবর,পেশ পর্যন্ত এদিক ওদিক হতে পারে নাই বা কাল কিয়ামত পর্য়ন্ত হবে ন। এব্যাপারে স্বয়ং আলাহ রাব্বুল আল আমিন বলেন-ইহা আমিই নাযিল করেছে,এবং ইহার রনাবেনের দায়িত্ব আমার’।
মুদ্রণ যন্ত্র আবিস্কার হওয়ার পুর্বকাল তক পবিত্র কোর আন হাতে লিখেই অসংখ্য কপি সরবরাহ করা হতো। মুদ্রন যন্ত্র আবিস্কার হওয়ার পর সর্ব প্রথম মৃদ্রন হয় জার্মানের হামবুর্গ শহরে হিঃ১১১৩ সনে কিন্তু মুসলিম জাহান তা গ্রহন করেন নাই। পবিত্র এ কোর আন মুসলমান দ্বারা প্রথম মুদ্রন হয় সেন্ট পিটার্সবাগ শহরে ১৭৮৭ খৃষ্টাব্দে এবং ঠিক সেই মূহুর্তেই মুদ্রণ হয় ইরানের তেহরান শহরে একটি প্রেসে যার নাম ছিল লিথু প্রেস। আর তখন থেকেই শুরু হয় কোর আনুর কারীমের বহুল প্রচার এবং ছরিয়ে পড়ে সাড়া বিশ্বে। বর্তমানে গোটা বিশ্বে পবিত্র এ কোর আনের যত কাপি লিপি বদ্ধ হয়েছে যত হাফেজ তৈরী হয়েছে এবং যত বেশী অধ্যায়ন হচ্ছে পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যকোন গ্রন্থের সাথে ইহার কোন তুলনা করা যায় না। এবং কাল কিয়ামত পর্যন্ত ইহার এই তিনটি মুজেযা শুধু বৃদ্ধিই পেতে থাকবে।.

সর্বশেষ সংবাদ