জিটিবি নিউজ ডেস্ক : আগামি ডিসেম্বর মাস উপকূলীয় এলাকার জন্য সম্ভাবনার নতুন দুয়ার খুলে দিচ্ছে। দেশের তৃতীয় সমুদ্রবন্দর পায়রা বন্দরে প্রথম পর্যায়ের জাহাজ থেকে মালামাল খালাস কার্যক্রম শুরু হচ্ছে আগামি ডিসেম্বরে। কলাপাড়া থেকে কুয়াকাটা সড়কের তিনটি নদীতে তিনটি সেতু যোগাযোগের জন্য চালু হবে এই ডিসেম্বরে। তবে সমুদ্রবন্দরের কার্যক্রম পুরোদমে শুরু হবে ২০১৮ সালে। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১২ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি কলাপাড়া উপজেলা সদর থেকে কুয়াকাটা রুটে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর শহিদ সন্তানদের নামে শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শেখ রাসেল সেতু তিনটির নির্মাণ কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন এবং ২০১৩ সালের ১৯ নভেম্বর পায়রা বন্দরের নির্মাণকাজ আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন তিনি। পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় রামনাবাদ নদীর তীরে ২৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিতব্য পায়রা সমুদ্রবন্দরে টাওয়ার, লাইট, বয়া স্থাপনসহ অন্যান্য কার্যক্রম চলছে দ্রুতগতিতে। একটি জেটি নির্মাণ ও বসানো হয়েছে দুটি শক্তিশালী ক্রেন। এই জেটির সঙ্গে একটি সংযোগ সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। রাবনাবাদ নদীবন্দরকে ভাঙনের কবল থেকে রক্ষা করতে প্রায় এক হাজার মিটার নদীরক্ষা বাঁধ নির্মাণ স¤পন্ন হয়েছে। বন্দরে নির্বিঘেœ রাতেও কর্ম স¤পাদনের জন্য ৭০টি সৌরবিদ্যুৎ স্ট্রিট লাইট স্থাপন করা হয়েছে। বসানো হয়েছে সিগন্যাল বাতি। আপাতত পণ্যবাহী জাহাজ সমুদ্রে নোঙর করবে। বন্দরে ভারি যন্ত্রপাতি পরিচালনার জন্য ক্রয় করা হয়েছে দুটি উচ্চ ক্ষমতাস¤পন্ন জেনারেটর। বন্দরের নিরাপত্তার জন্য সেন্ট্রি পোস্টসহ নিরাপত্তা ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া কলাপাড়ার ধানখালীতে নির্মাণ করা হচ্ছে ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুকেন্দ্র। এসব কাজের জন্য ইতোমধ্যে ১৬ একর জমি অধিগ্রহণ ও ভরাটের কার্যক্রমও শেষ হয়েছে। অপরদিকে কলাপাড়া উপজেলা সদর থেকে কুয়াকাটা রুটে আন্ধারমানিক নদীর উপরে শেখ কামাল, হাজীপুরে সোনাতলা নদীর উপরে শেখ জামাল ও শিববাড়িয়া নদীর উপরে শেখ রাসেল সেতু তিনটির নির্মাণ কাজ শেষের পথে। ইতোমধ্যে শেখ রাসেল সেতুর ৯০ ভাগ, শেখ জামাল সেতুর ৮০ ভাগ এবং শেখ কামাল সেতুর প্রায় ৮৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। কলাপাড়া সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রকৌশলী হুমায়ুন কবির পান্না মিয়া জানালেন, ২০১৫ সালের মধ্যে সেতুর ওপর দিয়ে গাড়ি চলাচল করতে পারবে। ৮৯১ দশমিক ৭৬ মিটার দীর্ঘ আন্ধারমানিক নদীর উপরে শেখ কামাল সেতুটি নির্মিত হচ্ছে ৬৫ কোটি এক লাখ ৮৫ হাজার টাকা ব্যয়ে। সোনাতলা নদীর উপরে ৪৮২ দশমিক ৩৭৫ মিটার দীর্ঘ শেখ জামাল সেতুর ব্যয় ৪৩ কোটি ৪৩ লাখ ৪৬ হাজার টাকা। ৪০৮ দশমিক ৩৬ মিটার দীর্ঘ শেখ রাসেল সেতুটি নির্মাণ হচ্ছে শিববাড়িয়া নদীর উপরে। ব্যয় হচ্ছে ২৪ কোটি ৮৪ লাখ ৬৪ হাজার টাকা। পায়রা সমুদ্রবন্দর নির্মাণের জন্য মোট ছয় হাজার একর জমি অধিগ্রহণ করা শুরু হয়েছে। পায়রা বন্দরে জাহাজ নোঙর করতে মোট ১৬টি জেটি নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়া বড় বড় জাহাজ বন্দরে প্রবেশ করার জন্য ড্রেজিংয়ের কার্যক্রম আগামি বছর শুরু করা হবে। এজন্য বিদেশি অর্থায়নে ড্রেজিং করার দরপত্র আহ্বানের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে মেগা প্রজেক্টের পরিচালক ক্যাপ্টেন মো. সাঈদুর রহমান জানান, ১৭ মাসে পায়রা বন্দরের অনেক কাজ এগিয়েছে। পায়রা বন্দরে প্রবেশের জন্য প্রধান সড়কের কার্যক্রম শিগগিরই শুরু হবে। তিনি জানান, পায়রা বন্দরের কার্যক্রম আগামি ডিসেম্বরে শুরু হবে। প্রথমে জাহাজগুলো নদীর মধ্যে নোঙর করা হবে। সেখান থেকে মালামাল খালাস করা হবে। এজন্য যেসব কার্যক্রম শেষ করার দরকার তার অনেকটাই শেষ হয়েছে। বাকি কাজগুলো শেষ হওয়ার পর্যায়ে রয়েছে। ক্যাপ্টেন মো. সাঈদুর রহমান আরও জানান, আউটার অ্যাঙ্করেজ থেকে রাবনাবাদ চ্যানেলে প্রবেশের পথে পানির সর্বনিু গভীরতা প্রায় পাঁচ মিটার। চ্যানেলের ভেতর এই গভীরতা ১৬ থেকে ২১ মিটার। চ্যানেলের ৩৫ কিলোমিটার এলাকায় ড্রেজিং করা হলে জোয়ারের সময় ১৪ মিটার গভীর (চট্টগ্রামে আসে সর্বোচ্চ ৯ দশমিক ২ মিটার) এবং ২৫০ মিটার দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট জাহাজ (চট্টগ্রামে আসে সর্বোচ্চ ১৮৬ মিটার) এখানে আসতে পারবে। তিনি জানান, ছয় হাজার একর জায়গার ওপর গড়ে উঠবে সমগ্র পায়রা সমুদ্রবন্দর। বিপুল পরিমাণ ব্যবহারযোগ্য জায়গা পড়ে আছে পটুয়াখালীর কলাপাড়ায়। এসব এলাকায় সরকারি এবং বেসরকারি কনটেইনার ডিপো, শিল্প এলাকা, ইপিজেড, আইজেড ইত্যাদি গড়ে তোলা সম্ভব। এ বন্দরকে ঘিরে সরকারের বিভিন্ন পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি জানান, মাদার ভ্যাসেলকে বহির্নোঙরে রেখে লাইটার জাহাজে এই বন্দর দিয়ে পণ্য ওঠানামা করা যাবে। এই বন্দর এলাকা এক্সকুসিভ জোনে পরিণত হবে। এ ছাড়াও নৌবাহিনীকে আধুনিক ও ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে শিগগিরই সাবমেরিন সংযোজিত হতে যাচ্ছে। দেশের তৃতীয় সমুদ্রবন্দরের পাশে স্থাপিত এই স্বয়ংস¤পূর্ণ ও আধুনিক নৌঘাঁটিতে নৌকমান্ডো, অ্যাভিয়েশন, জাহাজ ও সাবমেরিন বার্থিং, ভিএইচএফ যোগাযোগ সুবিধা সুবিধা থাকবে।স্থানীয় সংসদ সদস্য, সাবেক প্রতিমন্ত্রী আলহাজ মাহবুবুর রহমান বলেন, যে কাজটি কেউ ৪৪ বছরে করেনি, তা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী করেছেন। এ বছরের শেষের দিকে দক্ষিণের পর্যটন ও অর্থণীতি নতুন সম্ভাবনায় পথ চলবে।
ডিসেম্বরেই কার্যক্রম চালু পায়রা বন্দরের
June 16, 2015
22 Views
You may also like
সর্বশেষ সংবাদ
সারিয়াকান্দিতে থানা পুলিশের অভিযানে গ্রেফতার ৫
3 months ago
শোক সংবাদঃ নৈশ্য প্রহরী শাহজাহান আলীর ইন্তেকাল
3 months ago
কাজিটুলা থেকে বৃদ্ধ নিখোঁজ; ১৯ দিনেও মেলেনি খোঁজ
3 months ago