শ্রীবরদীতে ধানক্ষেতে ছত্রাকের আক্রমণ কৃষকেরা দিশেহারা

মো. আব্দুল বাতেন, শ্রীবরদী (শেরপুর) প্রতিনিধি: শেরপুরের শ্রীবরদীতে আমন ধান ক্ষেতে ছত্রাকের আক্রমণে কৃষকেরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। কেউবা ছত্রাকের আক্রমণের ভয়ে ধান পাকার আগেই কেটে নিয়ে যাচ্ছে। ফলে উৎপাদিত ধানের ফলন নিয়ে শংকিত হয়ে পড়েছে কৃষকেরা। কৃষকদের অভিযোগ, কৃষি অফিসের কর্মকর্তাদের কোনো পরামর্শ পাচ্ছেনা তারা। দু’একজন কৃষক কৃষি অফিসের পরামর্শ নিয়ে কীট নাশক দিয়েও কোনো সুফল পাচ্ছেনা। রোববার সরেজমিন গেলে কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, এবার আমন ধান চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৬ হাজার হেক্টর। এ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে অর্জন হয়েছে ১৬ হাজার ৮শ ৮৫ হেক্টর। এর মধ্যে ব্রি-৪৯, ব্রি-৬২, বিআর-১১, ধানীগোল্ড, এজেড, বিনা-৭সহ কয়েকটি হাইব্রিড জাতের ধান চাষ হয়েছে। এর পাশাপাশি দেশীয় জাতের চাষ হয়েছে পাইজাম, তুলশীমালা, কালোজিরা, হালই, গোলাপি ও চাম্পালিসহ বিভিন্ন ধান। এবার প্রাকৃতিকভাবে কোনো প্রকার বন্যা বা খরা হয়নি। এছাড়াও আবাহাওয়া আমন চাষের অনুকুল হওয়ায় কৃষকেরা বাম্পার ফলনের স্বপ্ন দেখছেন। এর মধ্যে ধান পাকতে শুরু করেছে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেতে দেখা দিয়েছে ছত্রাকের আক্রমন। এটা আঞ্চলিকভাবে কৃষকেরা বলছেন লক্ষিগোয়ের আক্রমণ। এতে ধানক্ষেত ছেয়ে গেছে ছত্রাকের আক্রমণের মাত্রা। তবে বেশিরভাগ আক্রমণ করেছে ব্রি-৪৯ জাতের ধান ক্ষেতে।
কথা হয় উপজেলার শেকদি গ্রামের আজগর আলীর ছেলে কৃষক সুরুজ আলীর সাথে। তিনি জানান, এবার ৭৫ শতাংশ জমিতে ব্রি-৪৯ জাতের ধান চাষ করেছেন তিনি। আর কয়েকদিন পর পাকতে শুরু করবে তার ক্ষেতের ধান। এখন তার পুরো ক্ষেতেই ছত্রাকের আক্রমণ। তিনি বলেন, ধার দেনা করে আবাদ করেছি। তার ক্ষেতে ছত্রাকের আক্রমণের কারণে ফলনে বিপর্যয় ঘটবে বলে আশংকা করছেন তিনি। তবে যারা ধান কেটে নিয়ে গেছেন তাদের ধানের ফলন হয় কম। এছাড়াও ওই ধানের চাল দিয়ে ভাত রান্না করলে তিতা লাগে বলেও জানান অনেকে। এ সময় তার প্রতিবেশি কৃষক মছল উদ্দিন, পার্শ্ববর্তী মাটিয়াকুড়া গ্রামের কৃষক হাবিবর, আমজাদ, ছালাম, এবরা মিয়া, হাকিম মাষ্টার, আহমদ মেম্বারসহ অনেকের ক্ষেতের অবস্থাও একই। পুটল গ্রামের কৃষক জয়নাল আবদিন জানান, তার ধান ক্ষেতে ছত্রাকের আক্রমণ করেছে। এ জন্য তিনি রোববার কৃষি অফিসে যান। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নাজমুল হাসান তাকে নুইং পাউডার স্প্রে করার পরামর্শ দেন। সুত্রমতে, উপজেলার প্রায় সব গ্রামের ধান ক্ষেতে এ ছত্রাকের আক্রমণ।
এ ব্যাপারে কথা হয় উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নাজমুল হাসানের সাথে। তিনি বলেন, যেসব ক্ষেতের ধান আশি শতাংশ পেকেছে ও ছত্রাকের আক্রমণ করেছে তাদেরকে ধান কেটে নেয়ার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। তবে প্রাথমিকভাবে নুইং পাউডার দিয়ে কিছুটা দমণ করা সম্ভব বলেও অনেকে এটা ব্যবহার করছেন। ধান ক্ষেতে ছত্রাক আক্রমণ করলেও লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কোনো বাঁধা সৃষ্টি হবেনা। তিনি জানান, যে সব ধান ক্ষেতে ছত্রাক আক্রমণ করেছে ওইসব ক্ষেতের ধান দিয়ে বীজ সংগ্রহ করা যাবেনা।

সর্বশেষ সংবাদ