কিশোর অপরাধ ঠেকাতে সমন্বিত ব্যবস্থা নিন

কিশোর বয়সটা রোমাঞ্চের। এই বয়সীরা যত দিন যায় নিজেদের ভাবে তারা বড় হয়ে গেছে। চারপাশে নানারকম হাতছানিতে কেউ পথ হারায়, কেউ ভুল পথটিকে এড়িয়ে যায়। কিশোর বয়সে ঝোঁকের বশে, অ্যাডভেঞ্চারের আশায় আবার কেউ কেউ পারিবারিক-সামাজিক হতাশা থেকে নানা ধরনের সামাজিক অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। কিশোর অপরাধ আগেও ছিল, এখনো আছে। তবে এর ধরন অনেকটা পাল্টে গেছে। উঠতি বয়সের ছেলেরা আগে হয়তো দলবেঁধে মেয়েদের দেখে টিজ করত। অনেকে ছিনতাই, পকেটমার, মাদক বহন ও সরবরাহের মতো কাজে লিপ্ত হতো।

এখনো এসবের প্রবণতা রয়েছে। সেই সঙ্গে যোগ হয়েছে, খুন-খারাবির মতো ভয়ানক অপরাধে সংযুক্ত হওয়া। বিভিন্ন নামে এসব কিশোর গ্যাং গ্রুপ তৈরি করছে। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টরে আদনান কবির হত্যার পর এই ‘গ্যাং কালচারের’ বিষয়টি সামনে আসে। দিন দিন এসব গ্রুপের ব্যাপ্তি বেড়েই চলেছে। ১৫-২০ বছর বয়সী কিশোরদের প্রতিটি গ্রুপে ১০ থেকে ২০ জন করে সদস্য নিয়ে এসব দল গড়ে ওঠে। ‘গ্যাং কালচারে’ জড়িত থাকার অভিযোগে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গত দুই মাসে দুই শতাধিক কিশোরকে আটক করে সংশোধনাগারে পাঠালেও এদের বেপরোয়া হয়ে ওঠা ঠেকানো যাচ্ছে না। গত সপ্তাহেও রাজধানীর মোহাম্মদপুরে ‘কিশোর গ্যাং’ বিরোধে একজন খুন হয়।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, কিশোরদের মধ্যে এ ধরনের প্রবণতা বেড়ে যাওয়ার কারণ পারিবারিক ও সামাজিক অনুশাসনের অভাব। বর্তমান সময়ের অধিকাংশ বাবা-মা কর্মজীবী। তারা সন্তানদের যথেষ্ট সময় দিতে পারেন না। তারা ঠিক কী চায়, কী ভাবে, কী প্রত্যাশা করে তা অনেক অভিভাবকই স্পষ্ট জানেন না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারা সন্তানকে যন্ত্রনির্ভর করে নিজেদের দৈনন্দিন দায় থেকেও দূরে সরে থাকে। ফলে পরিবার থেকে যে নৈতিক শিক্ষাটা একজন উঠতি বয়সীর পাওয়ার কথা তা তারা পায় না।

পাশাপাশি আগে কোনো কিশোর বা কিশোরীর আচরণে, চালচলনে, কথাবার্তায় কোনো অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করলে পাড়ার মুরুব্বিরা তাদের শাসন করতেন। অভিভাবকদেরও এ বিষয়ে সতর্ক করতেন কিন্তু বর্তমান সময়ে এ ধরনের সামাজিক দায়িত্ব পালন করতেও দেখা যায় না। এর কারণও আছে। কারো ভালো করতে গিয়ে কেউ নিজে বিপদে পড়তে চায় না। দেখা গেল একজনকে শাসন করতে গিয়ে পরবর্তীতে তার দলের কাছে সে হেনস্তার শিকার হলো। সেই ঝুঁকি কেউ নিতে চায় না।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সদস্যরা নানামুখী কাজের চাপে কিশোর অপরাধ ঠেকানোর দিকে যথেষ্ট সময় বা মনোযোগ হয়তো দিতে পারছেন না। তবুও তারা সর্বতোভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছেন। মূলত কারো একার পক্ষে এ ধরনের অপরাধীদের বেড়ে ওঠা বা সংগঠিত হওয়া বন্ধ বা ঠেকানো যাবে না। এর জন্য সমন্বিত চেষ্টা থাকতে হবে। কেন কিশোর বয়সেই কেউ এধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ে বা পড়ে যায় বা পড়তে বাধ্য হয় তা খতিয়ে দেখতে হবে। একইসঙ্গে পরিবারকে দায়িত্বশীল হতে হবে। সমাজে যারা মুরুব্বি তাদের সামাজিক দায়িত্ব পালনে অগ্রণী ভ‚মিকা রাখতে হবে। সেই সঙ্গে প্রয়োজনে প্রশাসনের সহায়তাও নিতে হবে। আমরা প্রত্যাশা করি আগামী প্রজন্ম রক্ষা করতে প্রত্যেকে স্ব স্ব জায়গা থেকে দায়িত্ব পালনে সোচ্চার হবে। এতে সমাজ থেকে কিশোর অপরাধ নিয়ন্ত্রিত হবে বলে বিশ্বাস করি।

সর্বশেষ সংবাদ