সাফল্য অর্জনকারী পাঁচ সংগ্রামী নারী

উত্তরবঙ্গ নিউজ ডটকম. বগুড়া: বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলা মহিলা বিষয়ক অফিসের আয়োজনে জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ শীর্ষক কার্যক্রমের আওতায় ৫ ক্যাটাগরীতে ৫ সংগ্রামী সফল নারী নির্বাচিত হয়েছেন। তারা এখন সমাজের নিপীড়িত নির্যাতিত ও অধিকার বঞ্চিত মানুষের কল্যাণে কাজ করছেন। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে নন্দীগ্রাম মহিলা বিষয়ক অফিসের আয়োজনে ও উপজেলা প্রশাসনের সহযোগীতায় আন্তজার্তিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ এবং বেগম রোকেয়া দিবস-২০১৬ উদযাপন উপলক্ষে জয়িতা অন্মেষণে বাংলাদেশ কার্যক্রমের যাচাই-বাছাই শেষে ৫ জন নারীকে উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ জয়িতা নির্বাচিত করা হয়। এরা হলেন-সফল জননী নারী উপজেলার রুস্তমপুর গ্রামের মৃত আব্দুস ছাত্তারের স্ত্রী মোছা: মর্জিনা বেগম। তার প্রায় ৩০ বছরপূর্বে স্বামী মারা যায়। দু:স্থ অসহায় ও দরিদ্র নারী হয়েও অন্যের বাড়িতে ঝি’র কাজ করে ৬ ছেলে-মেয়েকে শিক্ষিত করেছেন। সকল প্রতিকুলতা মাড়িয়ে ছেলেকে মানুষ করেছেন। শিক্ষা ও চাকুরী ক্ষেত্রে সফল হয়েছেন মোছা: মোরশিদা খাতুনের ডান চোখে বেবী কেস রের্টিনা ব্লার্টমা নামক ভয়াবহ অসুখ বাসা বাঁধে। সফল ভাবে অপারেশন করা সত্বেও ডাক্তার চোখের উপর চাপ দিতে নিষেধ করেন। এঅবস্থায় তার লেখাপড়া অনিশ্চিত হয়। তবুও শারীরিক এই প্রতিবন্ধ¦কতা পদদলিত করে স্কুল কলেজৈর গন্ডি পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় হতে ইসলামের ইতিহাস এ সংকৃতি বিষয়ে কৃতিত্বের সাথে এমএ পাশ করেন। সে বিজরুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষিকা হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ-২০০১ প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহণ করে উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শিক্ষিকা নির্বাচিত হয়। এছাড়া ২০০৯, ২০১০ ও ২০১৬ সালে উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শিক্ষিকা নির্বাচিত হয়েছেন। পাশাপাশি তিনি স্কাউটিং এসফল শিক্ষক নির্বাচিত হন। মোরশিদা খাতুন জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ জয়িতা নির্বাচিত হয়েছেন এবং বিভাগীয় পর্যায়ে রানার্স আপ নির্বাচিত হয়েছে। সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান রেখেছেন: আবেদা বেগম একজন দরিদ্র গৃহবধু হওয়া সত্বেও নিজের সন্তান সংসার গুছিয়ে সমাজটাকে একটি ফুলের বাগানের মতো সাজাতে যে শ্রম, সাহস ও বুদ্ধি মত্তার পরিচয় দিয়েছেন, তা সত্যিই চমৎকার ও বিরল ঘটনা। আবেদা সমাজ উন্নয়নে তার মতো আরও ৭০ জন নারীকে সংগঠিত করে তুলেছেন। তিনি মনে করেন সমাজ উন্নয়নের বাধা অব্যহ্নত রাখতে নতুন সমাজ কর্মী সৃষ্টি করা প্রয়োজন এবং এই সমাজকর্মী সৃষ্টির জন্য তিনি প্রতিনিয়ত অবদান রেখে চলেছেন। তিনি অসহায়, দরিদ্র ৭০ জন নারী নিয়ে পল্লী সমাজ নামে একটি সংগঠন গড়ে তুলেছেন। পাশাপাশি ব্র্যাক স্বাস্থ্য সেবিকার কাজ সহজ করেছেন। তিনি নিজ এলাকার শিশুদের শিক্ষা বিস্তারের জন্য বাড়ী বাড়ী গিয়ে স্কুলগামী বাচ্চাদের তালিকা সংগ্রহ করে তাদের স্কুলে পাঠানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। পাশাপাশি তিনি বাল্য বিবাহ নিরোধসহ যৌতুকমুক্ত সমাজ বির্নিমানে কাজ করেছেন। এছাড়াও সমাজের ধর্ষিত নির্যাতিত মানুষদের আইনের পরামর্শ গ্রহণে সহায়তা করেছে। তার এইসব কর্মকান্ড বিবেচনায় তাকে সমাজ উন্নয়নে অসামাস্য অবদান রেখেছে যে নারী ক্যাটাগরিতে নির্বাচিত হয়েছে। উপজেলার আইলপুনিয়া গ্রামের ফাতেমা খাতুন স্বামী দ্বারা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন হওয়া সত্বেও সাধারণ মহিলাদের মত মনোবল না হারিয়ে সাহস, শক্তি ও বুদ্ধিমত্তা দিয়ে প্রতিকূলতাতে হয় করে তার একমাত্র কন্যা সন্তানকে নিয়ে বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে জয়ী হয়েছেন। ব্র্যাক স্কুলে শিক্ষকতার পাশাপাশি পড়াশুনা করেছেন। তাই স্বামীর নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে নতুন উদ্যমে জীবন শুরু করা হয় এই নারী সকলের অনুকরনীয়।
উপজেলার মুরাদপুর গ্রামের মৃত আব্দুর রশিদের স্ত্রী ইলিমা খাতুন স্বল্প সময়ের মধ্যে অর্থনৈতিক সাফল্য অর্জন করে সমাজের হতদরিদ্র, বিধবা ও অসহায় নারীদের আর্থিক উন্নয়নে নতুন করে স্বপ্ন যুগিয়েছেন। যন্ত্রনাময় জীবন, স্বামী হারা জীবন থাকতেই ইলিমা এখন অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী। ইলিমা অর্থনৈতিক ভাবে সাফল্য অর্জনকারী, উৎসাহ ও উদ্দগীপনা সৃষ্টিকারী এবং জীবন যাত্রার মান উন্নয়নে সচেতন নারী হিসেবে সমাজে পরিচিত। এই পাঁচজন সফল নারী সমাজে অন্যদের অনুকরণীয় হয়ে উঠেছেন। নন্দীগ্রাম উপজেলা জয়ীতা অন্বেষণে বাংলাদেশ কমিটির আহবায়ক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোসা: শরীফুন্নেসা বলেন, ৫ ক্যাটাগরিতে সার্বিক বিবেচনায় ও বিশ্লেষণ করে ৫ জন নারীকে নির্বাচিত করা হয়েছে। ৫ জন নারী সমাজ ও জন কল্যাণ মূলক কাজে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে অবদান রয়েছে। কমিটির সদস্য সচিব ও উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা খালেদা ইয়াসমিন জানান, অনেক আবেদনকারীর মধ্যে যাচাই-বাছাই শেষে উপজেলা পর্যায়ে ৫ জন জয়ীতাকে নির্বাচন করা হয়। তিনি আশা করেন উপজেলার পর্যায়ে নির্বাচিত ৫ জন জয়ীতা আগামী দিনে সমাজ উন্নয়নে আরো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন।

সর্বশেষ সংবাদ