কুড়িগ্রামের চিলমারী ডিপো জ্বালানি শূন্য ৮ মাস!

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি: কুড়িগ্রামের চিলমারীর ভাসমান ডিপো জ্বালানি শূন্য অবস্থায় পড়ে আছে দীর্ঘ ৮ মাস ধরে। জানুয়ারি মাসের প্রথম সাপ্তাহে ডিপোর মেঘনা ও যমুনা ওয়েল কম্পানি দুটিতে এক সঙ্গে জ্বালানি শূন্য হয়ে পড়ে। যা আজ বুধবার পর্যন্ত শূণ্য অবস্থায়ই ছিল। কবে নাগাদ তেলের জাহাজ ভিড়বে তাও সঠিক করে বলতে পারছে না ডিপো ইনচার্জ। এর ফলে ডিপোর ওপর নির্ভরশীল কুড়িগ্রামের ৯ উপজেলা এবং দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার কিছু এলাকা জুড়ে ডিজেল সংকটে হাজারো মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। সংকটের দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় অতিরিক্ত দামে ডিজেল বিক্রি করা হচ্ছে। সরেজমিনে বাজার ঘুরে জ্বালানি ব্যবসায়ি ও কৃষকের সঙ্গে কথা বলে ওই তথ্য জানা গেছে। জানা গেছে, বাংলাদেশ পেট্রলিয়াম কর্পোরেশনর (বিপিসি) অধীনে চিলমারী ভাসমান ডিপোতে যমুনা ও মেঘনা ওয়েল কম্পানি জ্বালানি তেল বিক্রি করে থাকে। ভাসমান ওই ডিপো সারা কুড়িগ্রামে ও দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার বিশাল এলাকার ডিজেলের চাহিদা পূরণ করে থাকে। ডিপোর দুটি ওয়েল কম্পানি এক সঙ্গে ডিজেল শূন্য হয়ে পড়ায় বিপাকে পড়ে তেল ব্যবসায়িরা। কি কারণে জ্বালানি সরবরাহ করা হচ্ছে না তারও সঠিক তথ্য কেউ জানাতে পারছে না। জ্বালানি এজেন্সি বা বিক্রেতারা অভিযোগ করেছেন, যমুনা ও মেঘনা ওয়েল কম্পানির ডিপো ইনচার্জদের চরম অবহেলা আর গাফিলতির কারণে দীর্ঘদিন ধরে ডিপোতে জ্বালানি শূণ্য হয়ে আছে। ডিপো ইনচার্জরা জাহাজ প্রতি ৫০ হাজার টাকা খরচ চাচ্ছে জ্বালানি ডিলারদের কাছে। ওই খরচ না দেওয়ার কারণে ডিপো ইনচার্জরা কোনো গুরুত্ব দিচ্ছে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ডিলার জানান, ব্রহ্মপুত্র নদে পানিতে ভরপুর, জ্বালানি ভর্তি জাহাজ চলাচলে কোনো সমস্যা নেই। অথচ জ্বালানি সরবরাহ না করে নানা অজুহাত ও টালবাহানা করছেন তারা। চিলমারী ডিপো জ্বালানি শূন্য থাকায় আমাদের অতিরিক্ত টাকা খরচ করে বাঘাবাড়ি ও নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থেকে ডিজেল কিনে আনতে হচ্ছে। আর অতিরিক্ত খরচের বোঝা চাপছে সাধারণ মানুষ ও কৃষকের ঘাড়ে। রাজীবপুর উপজেলার জ্বালানি পরিবেশক (এজেন্সী) তৈয়ব আলী বলেন, চিলমারীতে ডিজেল না থাকার কারণে আমাদের খুবই সমস্যা হচ্ছে। অতিরিক্ত টাকা খরচ করে সেই নারায়ণগঞ্জ থেকে তা কিনতে হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে পরিস্থিতি মারাত্মক আকার সৃষ্টি হতে পারে। এর প্রভাব পড়ছে বোরো চাষের ওপর। একই ধরণের কথা জানান রৌমারীর জ্বালানি পরিবেশক প্রদীপ কুমার সাহা। তিনি বলেন, চিলমারী ডিপো থেকে তেল কিনলে নৌপথে সহজেই পরিবহন করা যায়, পরিবহন খরচও কম হয়। কিন্তু চিলমারীতে না থাকলে আমাদের পরিবহন খরচ অনেক বেশি হয়। অতিরিক্ত পরিবহন খরচের কারণে লিটারে এক টাকা বেশি বেচতে হচ্ছে আমাদের। এদিকে স্থানীয় হাটবাজারে খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, খুচরা বিক্রেতারা সংকট দেখিয়ে ৬৫ টাকা লিটারের ডিজেল ৭০ টাকা করে বিক্রি করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজীবপুরের এক খুচরা বিক্রেতা বলেন, চিলমারীতে তেল নেই। একারণে এজেন্সি প্রতিনিধিরাও আমাদের কাছে দাম বেশি নিচ্ছে। আমাদের তো লাভ করতে হবে। চিলমারী ভাসমান ডিপোর যমুনা ওয়েল কম্পানির ডিপো ইনচার্জ (ডিএস) তফাজ্জল হোসেন বলেন, ডিজেল শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা চাহিদা জানিয়েছি। কিন্তু নদীপথে পরিবহনের জন্য জাহাজ সংকটের কারণে কর্তৃপক্ষ সরবরাহ করতে পারছে না। একই ধরণের কথা বলেন মেঘনা অয়েল কম্পানি ডিপো ইনচার্জ (ডিএস) আইয়ুব আলী। তবে জাহাজ প্রতি ৫০ হাজার টাকা খরচের বিষয়টি তারা দুইজনে অস্বীকার করেন।

সর্বশেষ সংবাদ