তানোরে ৫ম শ্রেণী ছাত্রীর শ্লীলতাহানীর ঘটনায় ফের শিক্ষকের জরিমানা টাকা বিচারকদের পকেটে

তানোর প্রতিনিধিঃ রাজশাহীর তানোরে ৫ম শ্রেণীর ছাত্রীর শ্লীলতাহানীর ঘটনায় ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে এক স্কুল শিক্ষকের। তবে জরিমানার টাকা এখনো ওই ছাত্রীর পরিবারকে দেয়া হয় নি। উল্টো বিচারকরা টাকা পকেটে রেখে দিয়েছেন। এ দিকে, লজ্জায় ও ক্ষোভে প্রায় ১০দিন ধরে ওই ছাত্রী স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে তানোর উপজেলার দরগাডাঙ্গা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।

স্থানীয়রা জানায়, মঙ্গলবার (২৬জুলাই) সকাল ৭টার দিকে ওই স্কুলের সহকারী শিক্ষক শমসের আলী প্রাইভেট পড়ানোর নাম করে ৫ম শ্রেনীর এক স্কুল ছাত্রীকে রুমে নিয়ে শ্লীলতাহানি করে। এসময় স্কুলের অন্যান্য শিক্ষার্থীরা তা দেখতে পেলে ওই শিক্ষক তাদের পরীক্ষায় ফেল করানোর হুমকি দিয়ে শ্লীলতাহানির বিষয়টি কাউকে না বলার জন্য চাপ প্রয়োগ করে। পরে শ্লীলতাহানির শিকার ওই ছাত্রী তার পরিবারের লোকজনকে জানালে একইদিন বিকেলে স্থানীয়ভাবে বিষয়টি সমঝোতার চেষ্টা করা হয়।

এদিকে, ওইদিনই শিক্ষকের ছাত্রীর সঙ্গে এমন আচারণে এলাকাবাসী উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। তারা শিক্ষকের বিচারের দাবিতে স্কুল ঘেরাও ও বিক্ষোভ করে। খবর পেয়ে স্থানীয় গনমাণ্য ব্যাক্তিবর্গ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। তবে এ ঘটনার পর পরই স্কুলের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও কলমা ইউপির যুবলীগ সভাপতি এনামুল হক রেনুল এবং কলমা ইউপির ৫নং ওয়ার্ড সদস্য আওয়ামী লীগের নেতা আজিমুদ্দিন, প্রধান শিক্ষক তাজেমুল ইসলাম নেতৃত্বে অফিস কক্ষেই শালিস বৈঠক বসে। বৈঠকে সহকারী শিক্ষক শমসের আলীকে ২লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। পরে জরিমানার টাকা তাদের হাতে দিয়েছেন শমসের। কিন্তু ওই ছাত্রীর বাবার অভিযোগ, তাকে কোনো টাকা দেয়া হয়নি। তবে এঘটনার পর তার মেয়ে লজ্জায় স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। এলাকায় কানাঘুঁষা হওয়ায় বাড়ির বাইরেও যেতে পারছে না। তবে তিনি ওই শিক্ষকের অপসারণ দাবি করেছেন।

তবে অভিযুক্ত সহকারী শিকক্ষক শমসের আলীর দাবি, তিনি প্রতিহিংসার শিকার। কারণ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সম্পর্ক পবিত্র সম্পর্ক। অভিভাবক ও বন্ধুর মতোই। আর বিষয়টি তেমন কিছু ঘটনাই নয়। অসংলগ্ন বা খারাপ উদ্দেশ্যেও গায়ে হাত দেয়া হয় নি। কিন্তু কয়েকজন ব্যক্তি এ ঘটনাকে পুঁজি করে তাকে ফাঁসানো চেষ্টা করছে। জরিমানা করে তার প্রতি অবিচার করা হয়েছে বলেও দাবি শমসেরের।

এ বিষয়ে ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক তাজেমুল ইসলাম জানান, শিক্ষকের কাছে একজন ছাত্রী মেয়ের মতো। স্বাভাবিক অবস্থায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থী গায়ে হাত বুলাতেই পারেন। এতে অপরাধ হয়েছে বলে মনে করি না। তবে কিছু লোকজন বাড়াবাড়ি করেছে। তাদের কারণেই জরিমানার সিদ্ধান্ত হয়। তবে জরিমানার টাকা নিতে ছাত্রীর বাবা অস্বীকারও করেন।

এদিকে স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও ইউপি যবুলীগ নেতা আব্দুল এনামুল হক জানান, এলাকাবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে ওই শিক্ষককের ২লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। আর সেই জরিমানার টাকা ছাত্রীর বাবাকে দেয়া হবে। কারণ, সে গরীব মানুষ ভবিষতে মেয়ের কাজে লাগবে। তবে টাকা না দিয়ে থাকলে আজকালের মধ্যেই দিয়ে দেয়া হবে।

এ বিষয়ে তানোর উপজেলার প্রাথমিক অফিসার শামিম আহম্মেদ জানান, এ ব্যাপারে তিনি কোনো লিখিত অভিযোগ পান নি। তবে ঘটনাটি শুনেছেন।

সর্বশেষ সংবাদ